আজ ভূপেন হাজারিকার জন্মবার্ষিকী

0
2
আজ ভূপেন হাজারিকার জন্মবার্ষিকী

প্রকাশিত: বুধবার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং।। ২৪শে ভাদ্র ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)।২৯শে মহররম ১৪৪৩ হিজরী।।

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার জন্মবার্ষিকী আজ। অবিভক্ত ভারতে যখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে তখন অরুণাচল ও অসমের সীমান্তবর্তী অঞ্চল সাদিয়া শহরে ১৯২৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকার শিবসাগর স্কুলে ঠাকুর্দা বংশীধর হাজারিকার ছেলে বাবা নীলকান্ত হাজারিকা শিক্ষক ছিলেন। মা শান্তিপ্রিয়া দেবী সুগৃহিনী ছিলেন।

বাবার সরকারী চাকুরী হওয়ায় দু‘বছর অসমের ধুবড়ী, দুবছর গুয়াহাটি এবং চার বছর তেজপুরে ভূপেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেন। সেখান থেকে ১৯৪১-এ ম্যাট্রিক পাশ করে পরে গুয়াহাটি কটন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে বিএ এবং ১৯৪৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ করেন।

তারপর ১৯৫২ সালে নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি নেন তিনি। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল “প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষায় শ্রবণ-দর্শন পদ্ধতি ব্যবহার করে ভারতের মৌলিক শিক্ষাপদ্ধতি প্রস্তুতি-সংক্রান্ত প্রস্তাব”।

অসমে জন্ম হলেও তিনি ছিলেন বাঙালির ঘরের ছেলে। তিনি ভূপেন হাজারিকা। সারা জীবন ধরে আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন একের পর এক অসাধারণ বাংলা গান। তাই তিনি চিরকাল রয়ে গেছেন বাঙালির মনের মণিকোঠায়।
সঙ্গীত জীবনে প্রবেশ
পড়াশোনা শেষে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করেই কলকাতায় চলে আসেন ভূপেন হাজারিকা। চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা শুরু করেন। পাশাপাশি আইপিটিএর (ভারতীয় গণনাট্য সংঘ) সক্রিয় কর্মী ও নেতা হিসেবে গণনাট্যের কাজও চালিয়ে যান। এ সময় তাঁর গাওয়া গণসংগীতগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
শৈশবেই ভূপেন হাজারিকা গীতিকার আনন্দীরাম দাস, পার্বতী প্রসাদ বড়ুয়া ও কমলানন্দ ভট্টাচার্যের মাধ্যমে স্থানীয় বরগীত, গোয়ালপাড়ার গান, চামজদুরের গান, বিহুগীতসহ গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন ও প্রভাবিত হন। পরবর্তীকালে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জ্যোতিপ্রসাদ প্রভাবিত করেছিলেন ভূপেনকে। হিন্দুস্তানি ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত ও উচ্চাঙ্গ নৃত্যের ওস্তাদ বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার হাত ধরেই সংগীতে পথচলা শুরু হয় ভূপেনের।
অসমিয়া চলচ্চিত্রে সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে গানের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

আসামে যতটা জনপ্রিয় ভূপেন হাজারিকা, ততটাই তাঁর গানকে ভালবাসতেন বাংলাভাষীরাও। তাই বাংলাকে একের পর এক অসাধারন গান উপহার দিয়ে গেছেন তিনি, যার মধ্যে জনপ্রিয়গুলোর একটা – ‘আমি এক যাযাবর।’

যাযাবর ছিলেন বলেই আসাম থেকে কলকাতা, সেখান থেকে মুম্বাই পৌঁছেছিলেন ভূপেন হাজারিকা — সলিল চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করতে আর হিন্দীতেও গেয়েছেন অসংখ্য গান। হিন্দী গানের মধ্যে সাম্প্রতিক কালের বিখ্যাত রুদালি ছবির ‘দিল হুম হুম করে’ গানটা। এই গানটা নিয়ে ভূপেন হাজারিকা মন্তব্য করেছিলেন, ঐ সুরটা অনেকটা তাঁর মায়ের গলায় শোনা একটা ছেলেভোলানো গানের সুরের মতো।

ভূপেন তাঁর স্মৃতিকথা আমি এক যাযাবর গ্রন্থে লিখেছেন:

১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল অবধি প্রায়ই আসতে হয় কোলকাতায়। আমার তখন রেকর্ড হচ্ছে ক্রীক রোর সেনোলা কোম্পানীতে। ওয়েলিংটন স্কোয়ার, ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের বাড়ি সব আমার চেনা। দু-আনা পয়সা খরচ করে আসি টালিগঞ্জে। শ্রীনিকেতন, শান্তিনিকেতন, রয়েল হোটেল অথবা আড়াই টাকা খরচায় বউ বাজার আমহাস্ট স্ট্রিটের মোড়ে ক্যালকাটা হোটেলে থাকি। … তেরো বছর বয়সে ১৯৩৯ সালে ইন্দ্রমালতী ছবিতে গান গাওয়ানোর জন্য জ্যোতিপ্রসাদ আমায় নিয়ে এলেন অরোরা স্টুডিওয়।

এমন করে শুরু। এন.বি.সেন এন্ড কোম্পানী ভূপেনের হাফ প্যান্ট ও শার্ট পড়া ছবি ছেপে লিখেছিল–‘আমাদের কনিষ্ঠতম শিল্পী’। চলার পথে দেখেছেন বিচিত্র শিল্পী ও ব্যাক্তিত্ব। পাহাড়ী স্যানাল (১৯০৬-১৯৭৪), শচীন দেব বর্মণ (১৯০৬-১৯৭৫), আব্বাসউদ্দিন (১৯০৩-১৯৫৯) সহ হাজারো নামীদামী শিল্পীর সাথে তাঁর সাহচর্য ও পরিচয় ছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গান

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গান, ‘জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ,/জয় জয় মুক্তিবাহিনী/ভারতীয় সৈন্যের সাথে রচিলে/মৈত্রীর কাহিনি।’ গানটি সবার মন ছুঁয়ে যায়। ড. দিলীপ কুমার দত্ত তাঁর গ্রন্থে ‘অগ্নিযুগ আর বিদ্রোহের গান’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে লিখেছেন:

বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর স্বাধীনতা যুদ্ধেও তিনি তাদের মনে সাহস ও শক্তি এনে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজও বাংলাদেশবাসীরা অনেকেই স্বীকার করে যে ভূপেন হাজারিকার ‘হে দোলা হে দোলা’ ‘গঙ্গা আমার মা’, ‘বিম্তীর্ণ দু’পারে’– এই তিনটি গান তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছিলো এবং হৃদয়ে শক্তিশালী অস্ত্রের মতো উন্মাদনা এনে দিয়েছিল।
প্রিয়ংবদার সঙ্গে বিচ্ছেদ
১৩ বছর সংসার করার পর ১৯৬৩ সালে প্রিয়ংবদা প্যাটেল ও ভূপেন আলাদা হয়ে যান। ভূপেনের মৃত্যুর এক বছর পর কানাডা প্রবাসী প্রিয়ংবদা বিচ্ছেদের কারণ সম্পর্কে আসামের একটি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে বলেন, লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ভূপেনের প্রণয়ের কারণেই নাকি তাঁরা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে আহত হন ভূপেনের ৩৯ বছরের সঙ্গিনী কল্পনা লাজমি।
প্রেম
প্রিয়ংবদার সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি। কিন্তু একসঙ্গে থাকেননি। ভূপেন আরেকটি বিয়ে করতে ভয় পেতেন। তবে কল্পনা লাজমির সঙ্গে তার ছিল অসমবয়সী প্রেম। কল্পনার মামা ছিলেন গুরু দত্ত। কিশোর বয়স থেকেই কল্পনা লাজমি ভক্ত ছিলেন ভূপেন হাজারিকার। এই অগোছালো, বেহিসাবি মানুষটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেন কল্পনা। ১৯৭৬ সাল কল্পনা এবং ভূপেন একটি ফ্ল্যাটে একত্রে বাস করতে শুরু করেন। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে ভূপেন কল্পনাকে তার সঙ্গী বলে পরিচয় দিতে থাকেন।
পুরস্কার
ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ পদকে সম্মানিত হয়েছেন ভূপেন হাজারিকা। ২৩ তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৭৫) শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক চলচ্চিত্র ‘চামেলী মেমসাহেব’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। পদ্মশ্রী লাভ করেন ১৯৭৭ সালে।
শ্রেষ্ঠ লোকসংগীত শিল্পী হিসেবে অল ইন্ডিয়া ক্রিটিক অ্যাসোসিয়েশনের পুরস্কার পান ১৯৭৯ সালে, আসাম সরকারের শঙ্করদেব পুরস্কার (১৯৮৭), দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৯২), জাপানে এশিয়া প্যাসিফিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রুদালী ছবির শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচাকের পুরস্কার অর্জন। তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই পুরস্কার পান ১৯৯৩ সালে।
এছাড়া পেয়েছেন পদ্মভূষণ (২০০১), আসামরত্ন (২০০৯), সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার (২০০৯) ও ভারতরত্ন (২০১৯)।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই কণ্ঠশিল্পী ২০১১ সালের ৫ নভেম্বর ৮৫ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানী হাসপাতালে মারা যান।
গৌহাটিতে ভূপেন হাজারিকার শেষ যাত্রা
আমাদের পাঠকদের জন্য দিলাম-ক্লিক দিয়ে শুনুন– https://www.youtube.com/watch?v=vvmzw6c21Ps

 

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..  

   (বিজ্ঞাপন)  https://www.facebook.com/3square1     

(বিজ্ঞাপন) Assalamualaikum Everyone, Please Like our page� and stay connected �for new updates because We are super excited to show you our new customised collections= Visit our page for more updates.
Join our Group 3SQUARE https://www.facebook.com/3square1
for upcoming exciting contests.
Follow us on Instagram https://instagram.com/3square__?utm_medium=copy_link

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।

আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

                                                                        Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন।    

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন