প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮মার্চ ২০২১ইং।। ৪রা চৈত্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)।। ৪ শা’বান ১৪৪২হিজরী
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় ক্যারিশম্যাটিক লিডার, অর্থাত্ তার চরিত্রে ক্যারিশমা-গুণ যুক্ত হয়েছে। ক্যারিশমা কী? ‘ক্যারিশমা’ হল ‘সম্মোহনী’ শক্তি। যে নেতার শক্তিশালী, আকর্ষণীয় ও অনন্য ব্যক্তিগত গুণাবলি অন্যকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে, তিনিই ক্যারিশম্যাটিক লিডার। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনে এই গুণাবলি অর্জন করেই হয়ে উঠেছিলেন দুঃখ-দৈন্যপীড়িত, দুর্দশাগ্রস্ত ও উপেক্ষিত-বঞ্চিত বাঙালির মহান জাতীয়তাবাদী নেতা এবং বাঙালির শত-সহস্র বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রকামনা বাস্তবায়নের মহান রূপকার। তাই তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও স্রষ্টা এবং রাষ্ট্রনৈতিক অর্থে রাষ্ট্রপিতা।
আর এই অনন্য কীর্তির জন্যই তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি আমি ভাগ্যবান। কারণ আমি আমাদের বাঙালি জাতি-রাষ্ট্রের স্রষ্টা শেখ মুজিবকে দেখেছি। তার সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেয়েছি, কথা বলেছি, সমালোচনামূলক প্রশ্ন করেছি—উত্তর শুনেছি।
তার কথা বলার ধরন ছিল আকর্ষণীয়। অমন শালপ্রাংশু দেহকান্তি, অনিন্দ্যসুন্দর চেহারা, ব্যক্তিত্বের প্রবলতা, আর জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বর যেকোনো মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট ও মোহাবিষ্ট করে ফেলত। আর তার বক্তৃতা! সে এক বিস্ময়কর মাদকতায় ভরা বিস্ফোরক শব্দাবলির নিপুণ বিন্যাস। ওজস্বিতা, আবেগ, যুক্তি আর তার বলার ধরনের সরসতায় তার বক্তৃতা হয়ে উঠত জনচিত্তহারী এক নিপুণ শিল্প।
১৯৭১-এ বিশ্ববিখ্যাত নিউজউইক সাপ্তাহিক সাময়িকী তাকে যে ‘রাজনীতির কবি’ (Poet of Politics) আখ্যায়িত করেছিল তা তার বক্তৃতায় ওইসব সৌন্দর্যভরা ও আকর্ষণীয় শিল্পগুণের জন্যই।
বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় ক্যারিশম্যাটিক লিডার, অর্থাত্ তার চরিত্রে ক্যারিশমা-গুণ যুক্ত হয়েছে। ক্যারিশমা কী? ‘ক্যারিশমা’ হল ‘সম্মোহনী’ শক্তি। যে নেতার শক্তিশালী, আকর্ষণীয় ও অনন্য ব্যক্তিগত গুণাবলি অন্যকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে, তিনিই ক্যারিশম্যাটিক লিডার।
বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনে এই গুণাবলি অর্জন করেই হয়ে উঠেছিলেন দুঃখ-দৈন্যপীড়িত, দুর্দশাগ্রস্ত ও উপেক্ষিত-বঞ্চিত বাঙালির মহান জাতীয়তাবাদী নেতা এবং বাঙালির শত-সহস্র বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রকামনা বাস্তবায়নের মহান রূপকার। তাই তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও স্রষ্টা এবং রাষ্ট্রনৈতিক অর্থে রাষ্ট্রপিতা। আর এই অনন্য কীর্তির জন্যই তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।
শেখ মুজিব কেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক?
কেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি? কেন তিনি বাঙালি জাতির পিতা? এসব প্রশ্নে কারও কারও সংশয় থাকতে পারে, থাকতে পারে ভিন্নমত; কিন্তু ইতিহাস ও রাষ্ট্র-দর্শনের তাত্ত্বিক বিচারে এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর পাওয়া কঠিন নয়। কোনো ভৌগোলিক অঞ্চলের মানুষ শতসহস্র বছরে নানা উপাদান, নানা ক্ষেত্রের প্রতিভাবানের তাত্পর্যপূর্ণ অবদানে ধীরে ধীরে একটি জাতি হিসেবে বিকশিত হয়ে ওঠে; এবং কোনো একটা যুগে সেই জাতি তার সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রসত্তাগত চেতনার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে। দেশের সর্বস্তরের ব্যাপক বিপুল মানুষের মনে এই সর্বোচ্চ চেতনার স্তর সৃষ্টিতে যে নেতার প্রধান ভূমিকা থাকে এবং সে ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত হয়ে যখন তা একটা যুগ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় তখনই কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীর মাহেন্দ্রক্ষণ। বাঙালি জাতির জীবনে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। আর সেই চূড়ার ওপর দাঁড়িয়ে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করেন : ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বাঙালি হাজার বছর ধরে এই ঘোষণার অপেক্ষায় ছিল। এজন্যই শেখ মুজিব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কারণ, তিনি বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নের এবং অন্তরের অন্তস্তলে গুমরে মরা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন সেদিন। যুগের দাবিকে সাহসে, শৌর্যে ও দার্ঢ্যে ভাষা দিয়েছিলেন তিনি দখলদার বাহিনীর কামান, বন্দুক ও হেলিকপ্টার গানশিপের যেকোনো মুহূর্তে গর্জে ওঠার ভয়াল পরিস্থিতির মুখে। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো নেতা এমন ভয়ঙ্কর জটিল পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে এত অকুতোভয়ে স্বাধীনতার কথা উচ্চারণের সাহস করেননি। এই নজিরবিহীন ঘটনার জন্যই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা, নিজস্ব রাষ্ট্রসত্তাগত বাঙালি জাতির জনক এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্টা। তার চেয়ে প্রতিভাবান ও বহুগুণে গুণান্বিত বাঙালি অনেকেই ছিলেন; তবু যে তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও আধুনিক রাষ্ট্রসত্তার অধিকারী বাঙালি শেখ মুজিব কেন বাঙালি জাতির জনক?
শেখ মুজিব কেন বাঙালি শেখ মুজিব কেন বাঙালি জাতির জনক, তার কারণ :
এক : তিনি হাজার বছরের বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে জীবনব্যাপী একনিষ্ঠ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, কারা-যন্ত্রণা ভোগ করেই বাস্তবরূপ দিয়ে গেছেন। শিল্প বলুন, সাহিত্য বলুন, বিজ্ঞান বলুন বা রাজনীতি প্রযুুক্তি যাই বলুন কোনো কিছুই স্বাধীনতার চেয়ে বড় নয়। অতএব, ওইসব বিষয়ে সিদ্ধিলাভ, আর একটি অসংগঠিত জাতিকে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যে সময়োপযোগী মোক্ষম কর্মসূচির মধ্যমে ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে ঐক্যবদ্ধ করে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে আধুনিক মারণাস্ত্র সমৃদ্ধ দখলদার বাহিনীর কব্জা থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে দেওয়া তুল্যমূল্য বিবেচিত হতে পারে না।
দুই : শেখ মুজিবের অতুলনীয় কৃতিত্বে এখানে যে তিনি বাংলাদেশে চারটি ধর্মে বিভক্ত অসম ও অসমন্বিত উপাদানে গঠিত বাঙালি জাতি এবং প্রায় ঊনপঞ্চাশটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে একই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অটুট ঐক্যে গ্রথিত করে একটি জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। এরকম সাফল্য নজিরবিহীন।
তিন : শেখ সাহেব যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্টা এবং নবরাজনৈতিক জাতির পিতা তার তাত্ত্বিক ভিত্তির জন্য আমরা এই বিষয়ের শ্রেষ্ঠ ভাবুক জার্মান দার্শনিক হেগেলের শরণ নিতে পারি। হেগেল বলেন : ‘Man owes his entire existence to the state and has his being within it alone.’ তিনি আরও বলেন : ‘The Great man of the age is one who can put into words the will of his age, tell his age, what its will is, and accomplish it. What he does is the heart and essence of his age, he actualies his age’ (Philosopy of Right গ্রন্থের অংশ)।
শেখ মুজিব তার যুগের ইচ্ছে ও এষণাকে (Will of his age) বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন (actualize his age)। তাই তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও বাঙালি জাতির জনক।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে কয়েকশ’ বছরে যে বাঙালি জাতি গড়ে ওঠে তা ছিল একটি নৃগোষ্ঠী (জধপব) মাত্র। একই ভাষা ও সাধারণ আর্থ-সামাজিক জীবনধারার বিকাশের ফলে এবং শারীরিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক গড়নের সাযুজ্যে এই নৃগোষ্ঠী স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও বহু ক্ষেত্রের নানা মনীষীর স্ব-স্ব ক্ষেত্রে চিন্তার নব নব বিন্যাসে একটি উন্নত জনগোষ্ঠীতে (ঈড়সসঁহরঃু) পরিণত হবে।
প্রায় তিন দশকের স্বাধিকার ও সুপরিকল্পিত স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তা একটি জাতিতে পরিণত হয়েছে। এই জাতিরই মূল স্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান। এই জাতি গঠনে নানা কাল-পর্বে অবদান রাখেন চর্যাপদের সিদ্ধসাধক, মধ্যযুগের কবি-সাহিত্যিক ভাবুক-চিন্তক, নাথ-যোগী, বাউল-বৈষ্ণব সাধক এবং কবিয়াল-বয়াতি ও লোকজ সংস্কৃতির গুণিজন। এবং আধুনিককালের আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, চিত্তরঞ্জন দাশ, এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ব্যারিস্টার আবদুর রসুলসহ অনেকে।
তবে ইতিহাসের গতিধারায় রাজনৈতিক উত্তুঙ্গ মুহূর্তের (গড়সবহঃঁস) সৃষ্টি করে তাকে বাস্তবায়িত করার কৃতিত্ব শেখ মুজিবুর রহমান ও তার যোগ্য ডেপুটি তাজউদ্দীন আহমদ এবং অন্যান্য রাজনীতিবিদের।
পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের ২৩ বছরের স্বৈরাচার, সামরিক জান্তার নানা ষড়যন্ত্র, কূট চক্রান্ত এবং বাঙালিদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাদের ওই রাজনৈতিক সংগ্রামের অংশ হিসেবে বাঙালি জাতীয়তবাদী, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির বৈধ অধিকারের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা (১৯৭১-এর ২৫ মার্চে পাকি দখলদারদের সশস্ত্র আক্রমণের পর পরই) এবং নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে তারাই প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সব ধর্ম-সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নবীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
এদিকে লক্ষ রেখেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার তাত্ত্বিক অস্টিন ডেইসি বলেছেন” গোটা এশিয়া বিশেষ করে ধর্মপ্রবণ ও শিক্ষাদীক্ষাহীন দারিদ্র্যপীড়িত দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নজির ইতিহাসে বিরল। “
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।