প্রকাশিত:সোমবার,২৬ অক্টোবর ২০২০ইং ।। ১০ই কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)।। ৮ই রবিউল আউয়াল,১৪৪২ হিজরী
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : ধর্মের সঙ্গে যেসব বিশ্বাস জড়িত সেগুলোকে আজকাল কেউ কেউ ঢালাওভাবে অন্ধবিশ্বাস হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায়। এটা মারাত্মক ভুল। ধর্মের সঙ্গে যেসব বিশ্বাস জড়িত, মূলত সেগুলো অন্ধবিশ্বাস নয়। তবে ধর্মবিশ্বাসের ভেতরে অন্ধবিশ্বাসও তৈরি হয়েছে- এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সেটা হয়েছে বলেই ধর্ম আজ ভীষণভাবে অবমূল্যায়িত হচ্ছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতার প্রতীক হিসেবে গণ্য হচ্ছে। না-বোঝা ধর্মচর্চা, শুধু আনুষ্ঠানিকতানির্ভর ধর্মচর্চা এবং কায়েমি স্বার্থ টিকিয়ে রাখার অপকৌশল হিসেবে ধর্মচর্চা। এসবের মধ্য দিয়ে ধর্মের ভেতরে অন্ধবিশ্বাস স্থান করে নিয়েছে। অপর দিকে মানুষের আদিমকালের কিছু অন্ধবিশ্বাসকে ধর্ম হিসেবে অভিহিত করার ভাষাগত সমস্যাও সমাজে বিদ্যমান রয়েছে। মানুষ যা ধারণ করে, তাকেই আমরা ধর্ম বলছি। সেই ধারণ করার মধ্যে পরিশীলন, সংস্কার ও চৈতন্যের বিবর্তন যে ঘটেছে, সেগুলোকে অনেক সময় যথাযথভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয় না।
আলোকিত বিশ্বাস আসলে কী তা বুঝতে হবে এবং উপলব্ধিতে আনতে হবে। আলোকিত বিশ্বাসের প্রথম স্তর হচ্ছে বিশ্বাস। মানুষ প্রকৃত অর্থেই মানুষ হয়ে উঠেছে সেদিন, যেদিন সে বিশ্বাস করেছে যে আমি মানুষ। স্রষ্টাকে বুঝতে হলে তাঁর সৃষ্টিকে বুঝতে হবে। সবার আগে বুঝতে হবে নিজেকে। কোরআন মজিদে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যে নিজেকে চিনতে পেরেছে, সে তার প্রতিপালককেও চিনতে পেরেছে’ (মান আরাফা নাফশাহু ফাকাদ মারাফা রাব্বাহু)। নিজেকে বোঝা মানে বাস্তবকে বোঝা; বিবেক, বুদ্ধি ও যুক্তি দিয়ে জীবন ও জগৎকে বোঝা এবং সত্য ও ন্যায়কে উপলব্ধি করা। যুক্তি, বুদ্ধি, বিবেক ও উপলব্ধি দিয়ে মানুষ যে বিশ্বাসকে ধারণ করে, সেটা হচ্ছে আলোকিত বিশ্বাস। আল্লাহতায়ালা মানুষকে আলোকিত বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে ওঠার জন্য নবী-রাসুলদের পাঠিয়ে এবং মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি ও অন্তরদৃষ্টি দান করে সহযোগিতা করেছেন।
আলোকিত বিশ্বাস ও অন্ধবিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য খুব স্পষ্ট, কিন্তু আমরা অনেক সময়ই খুব সহজে তা স্পষ্ট করতে পারি না। নিজেদের অজ্ঞতা এবং উদাসীনতার কারণে অনেক সময়ই আলোকিত বিশ্বাসকেও অন্ধবিশ্বাসে পরিণত করি এবং অন্ধবিশ্বাসকেই ধর্ম মনে করে বিভ্রান্তির পথে তাড়িত হই। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস একটি আলোকিত বিশ্বাস। সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা একজনই, তবে তাঁর নামের কোনো অন্ত নেই। জগতের একমাত্র সৃষ্টিকর্তাকে যে যে নামেই ডাকুক, তাঁর সেই বিশ্বাস আলোকিত। কারণ তিনি চূড়ান্ত সত্যরূপে জগতে সর্বত্র সর্বদা বাস্তব। মানুষ যতক্ষণ সত্য, ন্যায়, সুন্দর ও কল্যাণের অনুগামী হয়, ততক্ষণই সে আলোকিত বিশ্বাসের ধারক। যে বিশ্বাস মানুষকে সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথ দেখাতে পারে না, সে বিশ্বাস আলোকিত নয়, বরং অন্ধবিশ্বাস। অন্ধবিশ্বাসে চোখ-কান বন্ধ করে মানুষ কখনো কখনো নিজেকে ধার্মিক ভাবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে ধার্মিক নয়।
মানুষের মানবতা বা মূল্যবোধ গড়ে ওঠে বিশ্বাসকে অবলম্বন করে। তবে যে বিশ্বাস আলোকিত নয়, যা যুক্তিহীন ও সত্যহীন অন্ধবিশ্বাস, সে বিশ্বাসকে অবলম্বন করে মূল্যবোধ বা মানবতা গড়ে ওঠে না। অন্ধবিশ্বাসে অন্ধ হয়ে থাকা মানুষ নিজেকে ধার্মিক ভাবতে পারে। সমাজের অজ্ঞ ও বিভ্রান্ত মানুষ তাদের ধার্মিক বলে অভিহিত করতে পারে। আধুনিককালের তথাকথিত বিজ্ঞজনরা তাদের দেখে ধর্মকে অবজ্ঞা করতে পারে। কিন্তু ধর্ম আসলে সেখানে নয়। ধর্ম হচ্ছে মূল্যবোধ ও মানবতার ভেতরের প্রাণশক্তি। অন্ধবিশ্বাসকেন্দ্রিক ধর্মচর্চার মাধ্যমে যেকোনো সমাজ মূল্যবোধহীন ও মানবতাহীন হয়ে ওঠে। ইতিহাসে এর প্রমাণ অজস্র। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে মক্কাসহ আরবভূমিতে ধর্মের জয়-জয়কার ছিল, রাসুলের (সা.) বিরোধিতা করার পেছনেও ধর্মের দোহাই ছিল। কিন্তু সে ধর্ম ছিল অন্ধবিশ্বাসের। এরপর মুসলিম সমাজ চিরকালের জন্য আলোকিত বিশ্বাসের কোনো এজেন্সি পায়নি। মুসলিম সমাজের ভেতরেও অন্ধবিশ্বাসের প্রাবল্য সৃষ্টি হয়েছে যুগে যুগে, দেশে দেশে। মুসলিম সমাজকে অন্ধবিশ্বাসমুক্ত করে আলোকিত বিশ্বাসে উজ্জ্বল করে তোলার জন্য সমাজের ভেতরে সংস্কারের কাজও চলে এসেছে নিরন্তর।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’