বিক্রমপুরের কৃতিসন্তান দীনেশ গুপ্তের নিজের হাতে লেখা চিঠি

0
0
বিক্রমপুরের কৃতিসন্তান দীনেশ গুপ্তের নিজের হাতে লেখা চিঠি

প্রকাশিত: রবিবার,৭ জুলাই ২০২৪ ইংরেজি, ২৩ আষাঢ়,১৪৩১বাংলা(বর্ষা কাল),৩০ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি

বিক্রমপুর খবর :অনলাইন ডেস্ক : আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের কনডেমড সেলে বসে প্রায় ১০০ এর উপর চিঠি লিখেছিলেন দীনেশ গুপ্ত | তার মধ্যে বেশ কিছু চিঠি হারিয়ে যায় | কিন্তু আজও প্রায় ৯২ টি চিঠি গুপ্ত পরিবারের কাছে রয়েছে | দীনেশ গুপ্তের ফাঁসির পর তাঁর সেই চিঠিগুলি বেনু পত্রিকায় প্রকাশিত হয় | সেই চিঠিগুলি পড়ে কেঁদে ফেলছিলেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু | চিঠিগুলি পড়লে বোঝা যায় মাত্র ১৯ বছর বয়সেও কতটা সুস্পষ্ট জীবনদর্শন ছিল দীনেশ গুপ্তের | দীনেশ গুপ্তের নিজের হাতে লেখা একটি চিঠি রইল পেজের দর্শকদের জন্যে |

রইল কিছু চিঠির নিদর্শন :
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল
১. ৭. ৩১. কলিকাতা ।
মা,
যদিও ভাবিতেছি কাল ভোরে তুমি আসিবে, তবু তোমার কাছে না লিখিয়া পারিলাম না।
তুমি হয়তো ভাবিতেছ, ভগবানের কাছে এত প্রার্থনা করিলাম, তবুও তিনি শুনিলেন না! তিনি নিশ্চয় পাষাণ, কাহারও বুক-ভাঙা আর্তনাদ তাঁহার কানে পৌঁছায় না।
ভগবান কি আমি জানি না, তাঁহার স্বরূপ কল্পনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তবু এ-কথাটা বুঝি, তাঁহার সৃষ্টিতে কখনও অবিচার হইতে পারে না। তাঁহার বিচার চলিতেছে। তাঁহার বিচারের উপর অবিশ্বাস করিও না, সন্তুষ্ট চিত্তে সে বিচার মাথা পাতিয়া নিতে চেষ্টা কর। কি দিয়া যে তিনি কি করিতে চান, তাহা আমরা বুঝিব কি করিয়া?
মৃত্যুটাকে আমরা এত বড় করিয়া দেখি বলিয়াই সে আমাদিগকে ভয় দেখাইতে পারে। এ যেন ছোট ছেলের মিথ্যা জুজুবুড়ির ভয়।
যে মরণকে একদিন সকলেরই বরণ করিয়া লইতে হইবে, সে আমাদের হিসাবে দুই দিন আগে আসিল বলিয়াই কি আমাদের এত বিক্ষোভ, এত চাঞ্চল্য?
যে খবর না দিয়া আসিতো । খবর দিয়া আসিল বলিয়াই কি আমরা তাহাকে পরম শত্রু মনে করিলাম ? ভুল একদম ভুল, মৃত্যু ‘মিত্র’ রূপেই আমার কাছে দেখা দিয়াছে।
আমার ভালোবাসা ও প্রণাম জানিবে।
– তোমার নসু
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল
কলিকাতা
১৮ই জুন, ১৯৩১
বৌদি,
তোমার দীর্ঘ পত্র পাইলাম। অ-সময়ে কাহারো জীবনের পরিসমাপ্তি হইতে পারে না। যাহার যে কাজ করিবার আছে, তাহা শেষ হইলেই ভগবান তাহাকে নিজের কাছে টানিয়া লন। কাজ শেষ হইবার পূর্বে তিনি কাহাকেও ডাক দেন না।
তোমার মনে থাকিতে পারে, তোমার চুল দিয়া আমি পুতুল নাচাইতাম। পুতুল আসিয়া গান গাহিত, “কেন ডাকিছ আমার মোহন ঢুলী?” যে পুতুলের পার্ট শেষ হইয়া গেল, তাহাকে আর স্টেজে আসিতে হইত না। ভগবানও আমাদের নিয়া পুতুল নাচ নাচাইতেছেন। আমরা এক একজন পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে পার্ট করিতে আসিয়াছি। পার্ট করা শেষ হইলে প্রয়োজন ফুরাইয়া যাইবে। তিনি রঙ্গমঞ্চ হইতে আমাদের সরাইয়া লইয়া যাইবেন। ইহাতে আপশোস করিবার আছে কি?
ভারতবাসী আমরা নাকি বড় ধর্মপ্রবণ। ধর্মের নামে ভক্তিতে আমাদের পণ্ডিতদের টিকি খাড়া হইয়া উঠে। কিন্তু তবে আমাদের মরণকে এত ভয় কেন? বলি ধর্ম কি আছে আমাদের দেশে? যে দেশে মানুষকে স্পর্শ করিলে মানুষের ধর্ম নষ্ট হয়, সে দেশের ধর্ম আজই গঙ্গার জলে বিসর্জন দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত। সবার চেয়ে বড় ধর্ম মানুষের বিবেক। সেই বিবেককে উপেক্ষা করিয়া আমরা ধর্মের নামে অধর্মের স্রোতে গা ভাসাইয়া দিয়াছি। একটা তুচ্ছ গরুর জন্য, না হয় একটু ঢাকের বাদ্য শুনিয়া আমরা ভাই-ভাই খুনোখুনি করিয়া মরিতেছি। এতে কি ‘ভগবান’ আমাদের জন্য বৈকুন্ঠের দ্বার খুলিয়া রাখিবেন, না ‘খোদা’ বেহেস্তে স্থান দিবেন?
যে দেশ জন্মের মত ছাড়িয়া যাইতেছি, যার ধূলিকণাটুকু পর্যন্ত আমার কাছে পরম পবিত্র, আজ বড় কষ্টে তার সম্বন্ধে এসব কথা বলিতে হইল।
আমরা ভাল আছি। ভালবাসা ও প্রণাম লইবে।
স্নেহের ছোট ঠাকুরপো।
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল
৩০. ৬. ৩১. কলিকাতা।
স্নেহের ভাইটি,
তুমি আমাকে চিঠি লিখিতে বলিয়াছ, কিন্তু লিখিবার সুযোগ করিয়া উঠিতে জীবন-সন্ধ্যা হইয়া আসিল।
যাবার বেলায় তোমাকে কি বলিব? শুধু এইটুকু বলিয়া আজ তোমাকে আশীর্বাদ করিতেছি, তুমি নিঃস্বার্থপর হও, পরের দুঃখে তোমার হৃদয়ে করুণার মন্দাকিনী-ধারা প্রবাহিত হউক।
আমি আজ তোমাদের ছাড়িয়া যাইতেছি বলিয়া দুঃখ করিও না, ভাই। যুগ যুগ ধরিয়া এই যাওয়া আসাই বিশ্বকে সজীব করিয়া রাখিয়াছে, তাহার বুকের প্রাণস্পন্দনকে থামিতে দেয় নাই। আর কিছু লিখিবার নাই। আমার অশেষ ভালবাসা ও আশিস জানিবে।
তোমার দাদা
বৌদির কাছে তিনি ‘স্নেহের ঠাকুরপো’। ছোট ভাইয়ের কাছে স্নেহশীল দাদা। আর মায়ের কাছে আদরের ‘নসু’।
দীনেশ চন্দ্র গুপ্ত।
আত্মবলিদান দিবসে শহীদ দীনেশ গুপ্তকে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য ।
তথ্য সূত্রঃ © Ahornish

 

 (বিজ্ঞাপন)  https://www.facebook.com/3square1

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..             

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর

আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন।       

জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor

আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email bikrampurkhobor@gmail.com

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন