প্রকাশিত:বুধবার ৪ আগস্ট ২০২১ইং।। ২০শে শ্রাবন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল।। ২৫জিলহজ্জ, ১৪৪২ হিজরী।।
বিক্রমপুর খবর : কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, মুন্সীগঞ্জ: দীর্ঘ সাত বছর অপেক্ষায় থেকেও ৬০ যাত্রীর লাশ না পেয়ে প্রিয়জন হারানোর বেদনায় আজও শোকে পাথর তাদের পরিবার। আজ ৪ আগস্ট আলোচিত সেই পিনাক-৬ লঞ্চডুবির সাত বছর। বেপরোয়া নৌযান চলাচল, অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অবহেলাজনিত কারণে যাত্রীদের মৃত্যু ও নিখোঁজের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি না হওয়ায় প্রিয়জন হারানোর বেদনায় এখনও গুমরে ওঠে শোকে পাথর পরিবারগুলো।
২০১৪ সালের ৪ আগস্ট ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে কাওড়াকান্দি থেকে রওনা হয়ে মাওয়ার অদূরে উত্তাল পদ্মায় ঢেউয়ের তোড়ে মুহূর্তেই ডুবে যায় পিনাক-৬ লঞ্চটি। ওই লঞ্চডুবিতে শতাধিক যাত্রী জীবিত উদ্ধার হলেও নিখোঁজ থাকে দেড় শতাধিক। সরকারি হিসাবে নিখোঁজ ১৩৬ জনের মধ্যে ৪৭ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার হয়। এখনও নিখোঁজ ৬০ জন। অন্যদিকে পাঁচ নারী, দুই পুরুষ, পাঁচ শিশুসহ ১২ যাত্রীর পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় তাদের মরদেহ শিবচরের পাচ্চর এলাকায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে প্রশাসন।
দেশের সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও পদ্মায় ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চটির কোনো সন্ধান করা সম্ভব হয়নি। স্বজনরা জানিয়েছেন, ডুবে যাওয়া পিনাক-৬-এর ভেতরে অনেক লাশ রয়েছে। লঞ্চটি উদ্ধার হলে ভেতরে আটকে থাকা যাত্রীদের লাশ পাওয়া যেত।
পিনাক-৬ উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণার পর নিখোঁজ প্রিয়জনের লাশ খুঁজে পেতে পরিবারের সদস্যরা তল্লাশি চালান চাঁদপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, ভোলাসহ ভাটি অঞ্চলের নদীগুলোতে। নদীর একূল-ওকূল তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পাননি লাশ।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর বেতকা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আমানুল হক জানিয়েছেন, প্রতিবছর ঈদ এলেই তাদের পরিবারে ফিরে আসে বিষাদের ছায়া। ওই লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ তার নাতনি ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী ইমা আক্তারের লাশ বিভিন্ন স্থানে টানা ৯ দিন সন্ধান করেও পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুরের শিবচরের দৌলতপুর গ্রামে ঈদ শেষে ঢাকার পথে পিনাক-৬-এ পদ্মা পাড়ি দিচ্ছিলেন ফরহাদ মাতুব্বর, তার স্ত্রী শিল্পী, এক বছরের সন্তান ফাহিম ও শ্যালক বিল্লাল। এ চারজনের লাশ আজও উদ্ধার হয়নি। ফরহাদের বোন প্রিয়া আক্তার বলেন, ওই ঘটনার পর থেকে তাদের পরিবারে কোনো ঈদ নেই। তবে প্রিয়জনের লাশ পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে এখন বিচারের অপেক্ষায় তারা।
এদিকে দুর্ঘটনার পর পিনাক-৬ লঞ্চের মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক কালু, তার ছেলে ওমর ফারুক, কাঁঠালবাড়ী ঘাটের ইজারাদার আতাহার আলীসহ ছয়জনকে আসামি করে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় র্যাব আবু বক্কর সিদ্দিক কালুকে চট্টগ্রাম থেকে এবং তার ছেলে ওমর ফারুককে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
লৌহজং থানার ওসি আলমগীর হোসাইন জানান, বেপরোয়া যান চলাচল, অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক জাহাঙ্গির ভূঁইয়া বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জের সংশ্নিষ্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
মুন্সীগঞ্জ আদালত সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে পিনাক-৬ লঞ্চের মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক কালু ও তার ছেলে ওমর ফারুকসহ আসামিরা জামিনে রয়েছেন।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।