প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০৬ জুন ২০১৯।২৩জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। ২সাওয়াল ১৪৪০ হিজরি।
বিক্রমপুর খবর:অনলাইন ডেস্ক:নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক হাজার একর জমির ওপর গড়ে উঠবে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল। বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২৬ মে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও জাপানের সুমিতোমো করপোরেশনের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বেজার মো.সোহেলের রহমান চৌধুরী এবং সুমিতোমো করপোরেশনের ইয়াসুশি ফুকুদা।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ও সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) মো.আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জাইকা বাংলাদেশের সিনিয়র প্রতিনিধি ইয়োশিবুমি বিতো ও বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের মিনিস্টার তাকেশি ইতো। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় এক হাজার একর জমির ওপর জাপানি এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে। এটি হবে দেশের প্রথম জিটুজিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ পরিকল্পনাকে সামনে রেখে ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ১৯৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এছাড়া আরো ২ হাজার ৫৮২ কোটি টাকায় এ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন প্রজেক্ট নামে প্রকল্পটি গত ৫ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। ওই প্রকল্পে ভূমি উন্নয়ন, সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্থাপন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড শেষ করে ২০২২ সালের মধ্যে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চালু করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
বেজা আশা প্রকাশ করে বলছে, এ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে সেখানে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের জাপানি বিনিয়োগ আনা সম্ভব হবে, যার অধিকাংশই হবে জাপানের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর। এর ফলে দক্ষ জনশক্তি তৈরি ছাড়াও প্রযুক্তি স্থানান্তরের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।
এছাড়া এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পবর্জ্য অপসারণ করার জন্য স্থাপন করা হবে রিসাইক্লিং প্লান্ট।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে কার্যরত জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ছিল ৭০টি। এক দশক পর ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ২৭৮-এ উন্নীত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে কারখানা করেছে জাপানের মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড হোন্ডা। এছাড়া ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের কারখানা করেছে এসিআই, যেখানে সহায়তা দিয়েছে জাপানের ইয়ামাহা মোটর করপোরেশন। তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান জাপান টোব্যাকো গত জুনে দেশের আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কিনে নেয়। এতে জাপানের কোম্পানিটি বিনিয়োগ করছে ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ইস্পাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিপ্পন স্টিল অ্যান্ড সুমিতমো মেটাল দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনাল্ড স্টিল বিল্ডিং প্রোডাক্টসের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইস্পাত কারখানা করছে। তারা ১০০ একর জমি বরাদ্দের বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে চুক্তি করেছে।
জাপানের সজিত করপোরেশন মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প পার্ক করতে চাইছে। জাপানের সুমিতমো করপোরেশন জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকাজ করতে গত রোববার চুক্তি করেছে বেজার সঙ্গে। ঢাকায় একের পর এক স্টোর খুলছে জাপানি পোশাকের ব্র্যান্ড ইউনিক্লো ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড মিনিসো।
জাপানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিনিয়োগ প্রতিবেদন অনুযায়ী,২০১৮ সালে জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ১ হাজার ৫৭০ কোটি ইয়েন বিনিয়োগ করেছে। প্রতি ইয়েনের বিনিময়মূল্য ৭৭ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। আগের বছরের চেয়ে এ দেশে জাপানের বিনিয়োগ বেড়েছে ৩৯ শতাংশ বেশি। অবশ্য ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, এমনকি মিয়ানমারের তুলনায় পরিমাণটি নগণ্য।
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস, অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে জাপানে ১১৭ কোটি ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে জাপান থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানিও বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ১৮৭ কোটি ডলারের জাপানি পণ্য আমদানি হয়েছে, এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪ শতাংশ।
ভিয়েতনাম,ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে এ ধরনের প্রকল্পের সফল ভাবে বাস্তবায়ন করেছে জাপানের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান সুমিতমো। বাংলাদেশেও রয়েছে জাপানের ২৫০টির বেশি কোম্পানির কার্যক্রম। নতুন করে সুমিতমো ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠায় যুক্ত হলে দেশে জাপানি বিনিয়োগে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে বলে মনে করছে বেজা।
১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা এবং এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রূপরেখা বাস্তবায়ন করছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীন বেজা। এরই মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, জামালপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ভোলা, কক্সবাজার, বাগেরহাট, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৫৯টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে বেজা।