প্রকাশিত:বুধবার,০ ৮মে ২০১৯।২৫শে বৈশাখ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর: নিজস্ব ডেস্ক: ‘আজি হতে শতবর্ষ পরে, কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি, কৌতুহল ভরে৷’জন্মের ১৫৮ বছর পরও বাঙালির মননে, সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে একইভাবে প্রাসঙ্গিক কবিগুরু৷ তাই ক্যালেন্ডারে যতই বুধবার বলুক, আজকের দিনটি আসলে ‘রবিবার’৷
বাঙালির অস্তিত্বে মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অমর সৃষ্টি কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, চিত্রকলা ও অসংখ্য গানের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন কবিগুরু। বিশ্বের দরবারে বাঙালিদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেও শিখিয়েছেন রবিঠাকুর।
আজ ২৫ বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মদিন। বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ বৈশাখ (ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৮ মে) পশ্চিমবঙ্গের জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তিনি ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী, চিত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, ছোট গল্পকার ও ভাষাবিদ। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি চিত্রকর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। আশি বছরের জীবন সাধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছেন অজস্র অমরতার শাশ্বত বার্তায়।
তাই জন্মদিন নিয়ে তিনি লিখেছিলেন- ‘ওই মহামানব আসে/ দিকে দিকে রোমাঞ্চ/ মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে’। সেই তিনিই আবার জীবন সায়াহ্নে লিখলেন- ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরই লোক।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম নোবেল বিজয়ী বাঙালি কবি। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও ‘বাংলাদেশ’ নামের বানানটি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও প্রেরণা যুগিয়েছিল তার অনেক গান।
কর্মসূচি :প্রতিবছরের মতো এবারও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাঙালি স্মরণ করবে বিশ্বকবিকে। শুধু দুই বাংলার বাঙালিই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ কবির জন্মবার্ষিকী পালন করবে আবেগ ও শ্রদ্ধায়।
আজ দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপিত হবে বিশ্বকবির ১৫৮তম জন্মজয়ন্তী। এরই মধ্যে সংগীত আসর, প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজনে কবিগুরুর প্রতি জানানো হয়েছে শ্রদ্ধাঞ্জলি। অনুষ্ঠিত হবে কবির জন্মদিনের জাতীয় পর্যায়ের আয়োজন। নৃত্য-গীতের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সঙ্গে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী যুক্ত হয়েছে সে আয়োজনে।
জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। এবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানবিক বিশ্ব বিনির্মাণে রবীন্দ্রনাথ’।
এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রাজধানীতে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আজ বেলা ৩টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি। বিশেষ বক্তা হিসেবে থাকবেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক ও শিক্ষক অধ্যাপক সন্জীদা খাতুন। স্বাগত বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। রবীন্দ্র স্মারক বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলের পাশে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তিন দিনব্যাপী কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর থাকবে নৃত্য-গীত ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
এ ছাড়া বাংলা একাডেমি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে একক বত্তৃদ্ধতা, রবীন্দ্র পুরস্কার-২০১৯ প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
ঢাকার বাইরে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় উদ্?যাপিত হবে কবির জন্মবার্ষিকী।
শাহজাদপুরে নানা প্রস্তুতি:
শাহজাদপুর প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে বুধবার থেকে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন আয়োজিত কাছারিবাড়ি মিলনায়তনে প্রতিবছরের মতো এবারও ২৫ ও ২৬ বৈশাখ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে, যার উদ্বোধন করবেন বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক এমপি। সমাপনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হাসিবুর রহমান স্বপন প্রধান অতিথি থাকবেন।
দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, নৃত্যানুষ্ঠান, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, বইমেলা, আলোচনাসভা, প্রবন্ধ আলোচনা, কবিগুরুর বিভিন্ন আঙ্গিকের কবিতা, গান, গীতিনৃত্যনাট্য ও নাটকের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হবে।
শান্তিনিকেতনে-
রবীন্দ্র আবহের কথা বলতে গেলে, প্রথমেই বলতে হয় শান্তিনিকেতনের কথা। আজ সেখানে উত্সবের আমেজ। শান্তিনিকেতনে উত্তরায়নের শ্যামলী গৃহপ্রাঙ্গনে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান৷ শান্তিনিকেতন উপাসনাগৃহে বেদের স্তোত্র পাঠ ও রবীন্দ্র সঙ্গীতের মধ্যেদিয়ে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করা হয়।
কথা-গান-কবিতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতেও আজ রবিস্মরণ সামিল হয়েছেন গুণমুগ্ধেরা। প্রভাতী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বহু বিশিষ্ট শিল্পী৷ ভবানীপুরেও রবীন্দ্র সঙ্গীত, আবৃত্তির মধ্যমে ২৫ বৈশাখ পালিত হচ্ছে।