প্রকাশিত : রবিবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ১৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(শরৎকাল)।। ৩০ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক :
এই জন্যই বলে- মা গুণে ঝি,গাই গুণে ঘি।
একদিন লিখেছিনু আদর্শ যে হবে
“কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে” |
আজ লিখিতেছি বড় দুঃখ লয়ে প্রাণে
তোমরা মানুষ হবে কাহার কল্যাণে ?
মানুষ গড়িয়া ওঠে কোন্ উপাদানে ;
বাঙালি বোঝেনি তাহা এখনো জীবনে—
পুঁথি হাতে পাঠ শেখা—দু-চারটে পাশ
আজিকার দিনে তাহে মিলে না আশ্বাস,
চাই শৌর্য, চাই বীর্য, তেজে ভরা মন
“মানুষ হইতে হবে” হবে এই পণ—
বিপদ আসিলে কাছে হবে আগুয়ান
দুই খানি বাহু বিশ্বে সবারি সমান—
দাতার যে দান তাহা সকলেই পায়
কেউ ছোট কেউ বড় কেন হয়ে যায়!
কেন তবে পদতলে পড়ি বারবার ?
“মনুষ্যত্ব” জাগাইলে পাইব উদ্ধার— |
যত অপমান, যত লাঞ্ছনা পীড়ন
একতার বলে সব হইবে দমন!
তেজীয়ান, বলীয়ান সেই ছেলে চাই
সোনার বাংলা আজি হারায়েছে তাই |
আবার গড়িতে হবে বীর শিশুদল,
বাংলার রূপ যাহে হবে সমুজ্জ্বল—
কবিতা : – মনুষ্যত্ব
কবি : – কুসুমকুমারী দাশ
বিষয়:- জীবনমুখী
জীবনানন্দ দাশের মা হলেন কুসুমকুমারী দাশ। অনেকেই তাকে চেনেন না। তিনি খুব বেশি লিখে যাননি কিন্তু যেটুকু রেখে গেছেন তাতে তার প্রতিভার ছাপ সুস্পষ্ট। তারপরও কুসুমকুমারী দাশের প্রতিভার মূল্যায়ন করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
কুসুমকুমারী দাশ ১৮৭৫ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা চন্দ্রনাথ দাশ আর মাতা ধনমণি দাশ। চন্দ্রনাথ দাশ কবিতা লিখতেন। কুসুমকুমারী দাশ জন্মসূত্রেই লেখার ক্ষমতা পেয়েছিলেন যেমন পেয়েছিলেন তার সুযোগ্য পুত্র জীবনানন্দ দাশ। ছোটবেলা থেকেই কুসুমকুমারীর প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তার কবিতা নিয়মিতভাবে ছাপা হতে থাকে। মুকুল, ব্রাহ্মবাদী, প্রবাসী প্রমুখ পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হত। বিভিন্ন পত্রিকা কবির বাসায় আসত। তবে অগোছালো স্বভাবের কারণে সেগুলো প্রায়ই খুঁজে পাওয়া কঠিন হত।
কুসুমকুমারী দাশ কলকাতার বিখ্যাত বেথুন স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তখন তার বয়স ছিল ১৯। স্বামীর নাম ছিল সত্যানন্দ দাশ। কুসুমকুমারী সন্তানদের নাম রেখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ, আশোকানন্দ দাশ এবং সুচরিতা দাশ। এদের মধ্যে পরবর্তীকালে জীবনানন্দ দাশ খুব নাম করেছিলেন।
কুসুমকুমারী দাশ শুধু যে একজন কবি ছিলেন তা নয়। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। নিপুণভাবে গৃহকর্ম সম্পন্ন করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করতেন। ব্রাহ্ম সমাজের মহিলা সদস্যও ছিলেন তিনি। কুসুমকুমারী বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন মহিলাকে স্বাবলম্বী হতে এবং মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে শিখিয়েছেন। কবি নেতৃত্ব দিতে পারতেন। বাংলা ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ পর্যন্ত তিনি ব্রাহ্মসমাজের আধ্যাত্মিক নেতার দায়িত্ব পালন করেন। কুসুমকুমারী দাশ বরিশাল মহিলা সমাজের সভানেত্রীও ছিলেন। আসলে নানা গুণের সমাবেশ ঘটেছিল তার মধ্যে।
কুসুমকুমারী দাশ বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। এসবের মধ্যে আছে কাব্যকুমারী, পৌরাণিক আখ্যায়িকা, কুসুমকুমারী দাশের কবিতা এবং দৈনন্দিন দিনলিপি। এসব লেখায় তার মুন্সিয়ানা সহজেই চোখে পড়ে। তার কবিতায় বার বার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। কাব্য মুকুল (১৮৯৬) তার কাব্যগ্রন্থ। ‘পৌরাণিক আখ্যায়িকা’ গদ্যগ্রন্থ।
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”
কবি কুসুমকুমারী দাশের এই কবিতা পড়েনি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে।
মা কুসুমকুমারী দাশ সম্বন্ধে এক নিবন্ধে জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, “আমার মা শ্রীযুক্তা কুসুমকুমারী দাশ বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার বেথুন স্কুলে পড়েছিলেন। খুব সম্ভব ফার্স্ট ক্লাস অবধি পড়েছিলেন, তার পরেই তার বিয়ে হয়ে যায়। তিনি অনায়াসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষায় খুব ভালোই করতে পারতেন, এ বিষয়ে সন্তানদের চেয়ে তার বেশি শক্তি ছিল মনে হচ্ছে।” (আমার মা বাবা)
বিপদ আসিলে কাছে, হও আগুয়ান,
নাই কি শরীরে তবে রক্ত মাংস প্রাণ?
হাত পা সবারি আছে, মিছে কেন ভয়,
চেতনা রয়েছে যায়, সে কি পড়ে রয়?
এই কবিতাই বলে দেয় তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। কুসুমকুমারী দাশ প্রবন্ধ লিখে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অনেক গুণী এই কবির কথা বাংলা সাহিত্য অনেকদিন মনে রাখবে। কারণ তিনি যে সময় কাব্যচর্চা বা লেখালেখি করতেন সে সময়ের মেয়েরা অনেক পিছিয়ে ছিল। তার লেখা বা কবিতার আরো প্রসার হোক এই প্রত্যাশা করি।
সংগৃহীত Babu’S Philosophy
See insights and ads
পোস্টের প্রচার করুন · Boost post
All reactions:
824
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor