ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক কি দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার।
প্রকাশিত : শনিবার,১৬ মে ২০২০ ইং ।। ২রা জ্যৈস্ঠ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ।। ২২ রমজান ১৪৪১
বিক্রমপুর খবর : অফিস ডেস্ক : অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ছিল প্রবল দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। গত বৃহস্পতিবার (১৪ মে) অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুর পর গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমি ছিলাম স্যারের টিউটোরিয়াল গ্রুপের শিক্ষার্থী।’প্রধানমন্ত্রী এ সময় শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অনন্য অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর মতো বিদগ্ধ ও জ্ঞানী মানুষের মৃত্যুতে দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান মারা গেছেন গত বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকাল ৪ টা ৫৫ মিনিটে রাজধানী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
এ কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে গত বছরের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চাদর ঠিক করে দিয়ে তার প্রতি ভালোবাসার অনন্য নজিরও স্থাপন করেছিলেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিক্ষকের প্রতি তার শ্রদ্ধার অনন্য নজির স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মেলায় প্রবেশের পথে বিছানো লালগালিচা। সেই লালগালিচা দিয়ে হাঁটার সময় ড. আনিসুজ্জামানকে ছেড়ে দিয়ে পাশে হাঁটা শুরু করেন তার ছাত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিবছরের ভাষার মাসের প্রথম দিনে বইমেলা শুরু হয়। এর উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলা একাডেমি প্রতিবছর বইমেলার আয়োজন করে আসছে। আর এতদিন এর চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনিও অতিথি থাকতেন ওই অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানটিতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে লাল গালিচাও পাতা হয়। কিন্তু প্রায় প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রী সেই লাল গালিচা ছেড়ে দেন নিজের শিক্ষক দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও গবেষক আনিসুজ্জামানের সম্মানে। শুধু তাই নয়, আনিসুজ্জামানকে মধ্যমণি করে প্রতিবার মেলাও ঘুরে দেখেন শেখ হাসিনা।
রীতি অনুযায়ী লাল গালিচা বিছানো হয়েছিল মেলার নির্দিষ্ট রাস্তা জুড়ে। এই নির্দিষ্ট রাস্তা দিয়ে হেঁটে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছর বইমেলা ঘুরে দেখেন।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে শেখ হাসিনা সরে দাঁড়ালেন তার জন্য বিছানো লাল গালিচা থেকে। নির্বিঘ্নে হাঁটতে দিলেন শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে। লাল গালিচা ছেড়ে দিয়ে পাশে সাধারণ রাস্তায় নেমে গেলেন শেখ হাসিনা।
হাঁটা অবস্থায় প্রিয় শিক্ষকের কাঁধ থেকে অসতর্কতায় খসে পড়ে চাদর। সেটি লক্ষ্য করে নিজেই আনিসুজ্জামানের কাঁধে গুছিয়ে দিলেন গভীর মমতায়। যেন তিনি প্রধানমন্ত্রী নন, শিক্ষাগুরুর সান্নিধ্যে বিনয়াবনত শিষ্য এক !
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইফতার আয়োজনে গতবার অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের টেবিলের সামনে আসলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছাত্রী দেশের প্রধানেমন্ত্রী! এখানে এসে দেশের প্রধানেমন্ত্রী হয়ে গেলেন সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ছাত্রী! শিক্ষকের কাছে ছাত্রী যেমন তেমনটি।শিক্ষককে চেয়ারে বসিয়ে রেখে ছাত্রী দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষকের কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য সকল অতিথি দাঁড়িয়ে আছেন আর অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চেয়ারে বসে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিলেন ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক ! আর গুরুজনকে কিভাবে সম্মান করতে হয়।
শিক্ষকের অন্তিম ইচ্ছার প্রতিও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ শ্রদ্ধা জানালেন।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি শিক্ষক জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে একজন শিক্ষক হিসেবেই বরাবরই মর্যাদা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আনিসুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর ওই বাংলা বিভাগেরই ছাত্রী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমার শিক্ষক। তিনি প্রগতিশীল আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও কখনও নেতৃত্বে আসতে চাননি।’ প্রধানমন্ত্রী আনিসুজ্জামানকে ‘বাঙালি জাতির যে কোনো ক্রান্তিকালে বাতিঘরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন।
শিক্ষকের অন্তিম ইচ্ছার প্রতিও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ শ্রদ্ধা জানালেন।
শিক্ষকের প্রতি এই মর্যাদা ও মহানুভতা প্রদর্শনে গোটা দেশ ও জাতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মৃত্যুর পূর্বেই বলেছিলেন,তাকে যেন পিতার কবরেই দাফন করা হয় তাঁর সেই আকাঙ্খার প্রতি সম্মান দিয়ে আজিমপুরেই পিতার কবরেই চির নিদ্রায় শায়িত করা হয় জাতীয় অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামানকে।
মৃত্যু পরবর্তী পরীক্ষায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে বলে চিকিৎকেরা জানিয়েছেন। ফলে সকল স্বাস্হ্যবিধি মেনেই তার দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়।গতকাল শুক্রবার ১৫ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরেই তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যাপকআনিসুজ্জামানের প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। দাফনের আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় তার ছেলে আনন্দ জামান, ভাই আক্তারুজ্জামানসহ পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা অংশগ্রহণ করেন।
নিউজটি শেয়ার করুন..