সাগর গভীর নিম্নচাপে ফুঁসছে; আরো শক্তি সঞ্চয় করে সুপার সাইক্লোনে রূপান্তরের শঙ্কা!

0
3
ধেয়ে আসছে ইয়াস, ৩ নম্বর সতর্কতা

প্রকাশিত: সোমবার, ২৪ মে ২০২১ইং।। ১০ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (গ্রীস্মকাল)।

বিক্রমপুর খবর: অনলাইন ডেস্ক : পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে রবিবার (২৩ মে) গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করে সোমবার (২৪ মে) প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ এ পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে উত্তাল হয়ে ওঠা সাগর ফুঁসছে।

রবিবার সন্ধ্যায় নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৪ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৬৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আজ সোমবার গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

রবিবার বিকালে আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়, দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে নিম্ন্নচাপটি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের সবচেয়ে কাছে অবস্থান করছিল। নিম্ন্নচাপটি দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা বন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এ জন্য চট্টগ্রাম, পায়রা, কক্সবাজার এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নিদেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ করতে মানা করা হয়েছে।

আগামী ২৬ মে বুধবার ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সেসময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। যা ১০০ কিলোমিটারে পৌঁছাতে পারে। মঙ্গলবার ১৭০ আর বুধবার উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, খুলনা উপকূলে আসলে গতি দাঁড়াবে ১৮৫ কি.মি.তে। বুধবারই এটি অতি প্রবল ঝড় হিসেবে উপকূল অতিক্রম করে গতি হারাতে থাকবে। বৃহস্পতিবার এটি দুর্বল হবে।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস রাতে ইত্তেফাককে বলেন, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল এসব এলাকায় সোমবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কলকাতার আবহাওয়া দফতরের খবরে বলা হয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় যশ পারাদ্বীপ ও সাগর দ্বীপের মধ্যে দিয়ে সুন্দরবনের কাছের উপকূল অতিক্রম করবে। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সময় ৬ মিটার অর্থাৎ ২০ ফুট পর্যন্ত সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। উপকূলের জেলাগুলোতে সোমবার থেকে শুরু হতে পারে বৃষ্টি। প্রবল বেগে বইতে পারে ঝড়ো হাওয়া।

আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বছর আগে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল সুন্দরবন সন্নিহিত উপকূলভাগ। সেই আম্ফানের চাইতে অতিকায় আয়তন-আকার-ব্যাসার্ধের ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ উত্তরমুখী হয়ে ধেয়ে আসছে। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা ধারনা করছেন, এই সাইক্লোনের তীব্রতা আম্ফানের চাইতে বেশি হবে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, সাগর উত্তাল হয়ে ফুঁসছে। আগামীকাল ‘যশ’ সিভিয়ার সাইক্লোনের চেহারা নিতে পারে। গভীর নিম্ন্নচাপটির ব্যাসার্ধ ৬০০ কিলোমিটার। আম্ফানের ব্যাসার্ধ ছিল ৪৫০ কিলোমিটার। অর্থাৎ ইয়াস প্রায় ১২০০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে অতিক্রম করবে। সাগরে ১৩০ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বেগ থাকলেও ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগ নিয়ে ইয়াস আছড়ে পড়বে উপকূলে। সুপার সাইক্লোনটির কেন্দ্র বুধবার ভোররাতে বাংলাদেশ উপকূলের আগে প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত হানতে পারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর উড়িষ্যায়। বুধবার পূর্ণিমার ভরা কোটালে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণকালে ভয়ঙ্কর রূপ পরিগ্রহ করবে ইয়াস। ২০০৯-এ ঘূর্ণিঝড় আইলা এসেছিল ভরা কোটালে। তীব্র জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল সুন্দরবন সন্নিহিত বিস্তীর্ণ এলাকা। বিপুল ক্ষয়ক্ষতি, জীবনহানি ঘটেছিল। আর ২০২০-র আম্ফান এসেছিল ভাটার সময়। ফলে ক্ষয়ক্ষতি তুলনায় কম হয়েছিল। এবার ইয়াস আসছে ভরা কোটালেই ভয়ংকর বিগ্রহে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, খুলনা থেকে চট্টগ্রাম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃৃত হতে পারে ঘূর্ণিঝড় যশ।

উপকূলে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের চেয়ে তিনগুণ বেশি আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার করা হবে। প্রায় ১৪ হাজার ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে তিনগুণ বেশি আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার করা হবে। সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক ও সেনিটাইজার বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি এরমধ্যে যদি কোনও কোভিড আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় তাহলে তাকে আইসোলেশনে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে করে কোনোভাবেই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কেউ সংক্রমিত না হয়। আশ্রয়ন্দ্রেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে, ঝড়ে রাস্তায় গাছ পড়লে তা সরাতে কাজ করবে ফায়ার সার্ভিস। স্কাউটের প্রায় ছয় লাখ সদস্য কাজ করতে পারবে উপকূলে। এছাড়া নেভি, পুলিশ, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডসহ সবগুলো সংস্থা এই ঝড় মোকাবিলায় একযোগে কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে নগদ টাকার সহায়তা জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে। প্রচুর শুকনা খাবার মজুদ আছে।

সাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রবিবার রাত থেকে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, সাতক্ষীরা, ভোলা, বাগেরহাটসহ উপকূল ও সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সঙ্গে হালকা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।

রবিবার রাত ১০টায় ঘূর্ণিঝড়ের সবশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস জানান, বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসা সাইক্লোন ইয়াস টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা তাণ্ডব চালাতে পারে। এ সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি মূলত পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষা উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশের খুলনা উপকূলেও আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে ঝড়টির। এক্ষেত্রে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..                                                                                          

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।

আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন।   

জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor

আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email bikrampurkhobor@gmail.com

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন