প্রকাশিত: শনিবার,২২ জানুয়ারি ২০২২ইং।। ৮ মাঘ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)।১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে গত এক যুগে জাতীয় বাজেটে ধারাবাহিকভাবে বরাদ্দ বেড়েছে। এই সময়ে নতুন সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি পুরোনো সড়কও চওড়া হয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সড়ক আইনও পাস করেছে সরকার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সড়কে মৃত্যু না কমে আরও বেড়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও সরকারি হিসাবেই গত এক বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অথচ করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বছর কয়েক ধাপে দেশে মোট ৮৫ দিন গণপরিবহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ ছিল। এরপরও পুলিশের হিসাবে ২০২০ সালের তুলনায় দেশে ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু এক হাজারের বেশি বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবারও ঢাকাসহ সারা দেশে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গতকাল সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। আর নওগাঁর সাপাহারে যাত্রীবাহী ভ্যানে বালুবোঝাই ট্রাক্টরের চাপায় দুজন মারা গেছেন। এই দুটি দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে সড়ক খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য জেলা থেকে রাতে রওনা করা দূরপাল্লার বাসগুলো সকালে রাজধানীতে প্রবেশের সময় বেপরোয়া গতিতে চলে। টানা কয়েক ঘণ্টা বাস চালানোর কারণে চালকের চোখেও ঘুম ঘুম ভাবথাকে। অটোরিকশাকে ধাক্কা দেওয়ার কারণ বাসের বেপরোয়া গতি ও চালকের ক্লান্তি।
অন্যদিকে নওগাঁয় যাত্রীবাহী ভ্যানে বালুবোঝাই যে ট্রাক্টর আঘাত করেছে, সেটির পণ্য বোঝাই করে চলার কথা নয়। এর কারণ, এই ট্রাক্টর শুধু জমি চাষের জন্য ব্যবহার করার কথা। সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলার হিসাব থেকে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানির তথ্য সংরক্ষণ করে পুলিশ। তাদের তথ্য অনুসারে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮৮ জনের। এর আগের বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৯১৮ জন। এক বছরের ব্যবধানে মৃত্যু বেড়েছে ২৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পুলিশের হিসাবে, ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৬৩৫ জন। আর ২০১৯ সালে দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ১৩৮ জনের মৃত্যু হয়। অবশ্য পুলিশের হিসাবের সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠনগুলোর তথ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। ২০২০ সালে মারা যান ৫ হাজার ৪৩১ জন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যাঁরা প্রাণ হারান, তাঁদের মধ্যে ৬৭ শতাংশই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্ষম (১৫-৬৪ বছর বয়সী)। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসাবে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং এর প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত গতি ও চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেলের আধিক্য এবং ছোট যানবাহনের চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা আরও বাড়ছে। মহাসড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ছোট অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা সরকার দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ ছাড়া গত এক দশকে কোনো রকম বাছবিচার না করেই মোটরসাইকেলের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। অথচ মোটরসাইকেলে হেলমেট নিশ্চিত করা, গতিনিয়ন্ত্রণ এবং চালকের লাইসেন্স থাকার বিষয়ে সেভাবে নজরদারি করেনি সরকার। সাড়ে তিন বছর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিলেন। সরকারের নানা প্রতিশ্রুতির পর তাঁরা রাজপথ ছেড়ে যান। কিন্তু সড়কে বিশৃঙ্খলা বন্ধ হয়নি।
এ বিষয়ে বুয়েটের এআরআইয়ের সাবেক পরিচালক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে একটি কঠোর আইন হয়েছে। কিন্তু এর প্রয়োগ নেই। কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমে যাবে—এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নেমে যানবাহন পরীক্ষা করার কথা নয়। কিন্তু তারা বারবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছে। এর সমাধান কে দেব?
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’