স্বশিক্ষিত এক অসাধারণ দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর এর জন্মদিন আজ

0
1
স্বশিক্ষিত এক অসাধারণ দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর এর জন্মদিন আজ

প্রকাশিত : মঙ্গlলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(হেমন্তকাল)।।১৩ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরী।

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : স্বশিক্ষিত এক অসাধারণ দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর এর জন্মদিন আজ। আরজ আলী মাতুব্বর ছিলেন স্বশিক্ষিত দার্শনিক, মানবতাবাদী, চিন্তাবিদ লেখক এবং সত্যানুসন্ধিৎসু। আর এসব সাধনার জন্যই তিনি অত্যন্ত সাদামাটা জীবনের মানুষ হয়েও আজো আলোচনায়। সত্যানুসন্ধান করতে গিয়েই তিনি বনে গেছেন মানবতাবাদী এবং চিন্তাবিদ। যা তাকে দার্শনিকে পরিনত করেছে। সত্যানুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি নাস্তিকতার দায়ও কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মদিন আজ। আরজ আলী মাতুব্বরের জন্ম বরিশালের নিভৃত লামচরি গ্রামে ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ৩ পৌষ।
আরজ আলী মাতুব্বর ছিলেন অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত ও মুক্তবুদ্ধি চর্চায় অগ্রসর এক অসাধারণ মানুষ। তাঁর চেতনা ছিল লোকায়ত অথচ বিজ্ঞানসম্মত। তিনি সরল ও সহজ ভাষায় প্রাণের আর্তি প্রকাশ করে গেছেন তাঁর রচনাসম্ভারে। তিনি তার প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মের জন্য পাকিস্তান আমলে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হন।
১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন আরজ আলী মাতুব্বর। তিনি মরণোত্তর চক্ষুদান এবং মেডিকেলের ছাত্রদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ-এর এনাটমি বিভাগে মরণোত্তর দেহদান করেন। এমন দানের ঘটনা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব! আসলেই তার কর্মকান্ডেই প্রমাণিত তিনি ছিলেন অসাধারণ।
আরজ আলী মাতুব্বরের জীবন যেমন ছিল সাদামাটা তেমনি লেখাও ছিল জৌলুসহীন। তাই আধুনিক পাঠক সমাজকে তাঁকে চিনে নিতে অনেক সময় নিতে হয়েছিল। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির চর্চায় অগ্রসর এক অসাধারণ মানুষ। তিনি অত্যন্ত সরল ও সহজ ভাষায় প্রাণের আর্তিগুলোকে প্রকাশ করে গেছেন তার রচনাসম্ভারে।
আরজ আলী মাতুব্বর ছিয়াশি বছরের জীবনে জ্ঞান সাধনা করেছেন প্রায় সত্তর বছর। কৈশোরের একটি ঘটনা তাকে সত্যসন্ধ করে তোলে। তার মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের ছবি তোলার দায়ে মৃতদেহ কেউ জানাজা পড়ে দাফন করতে রাজি হয়নি। শেষে বাড়ির কয়েকজন লোক মিলে তার মায়ের সৎকার করেন। আরজ আলী সামাজিক এই আঘাতের পর সত্য অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হন। ধর্মের নামে কুসংস্কার সত্য, না বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞান সত্য? এই জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজতে গিয়ে আরজ আলী বিপুলভাবে ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। বাংলা ভাষায় লিখিত এবং প্রাপ্ত অধিকাংশ গ্রন্থাদি অধ্যয়ন তার জীবদ্দশায় প্রায় বাদ পড়েনি।
জন্মের চার বছরের মাথায় পিতা এন্তাজ আলী মাতুব্বর মারা যান। পাঁচ ভাইবোন নিয়ে আরজ আলীর মা লালমন্নেসা বিবি দিশেহারা হয়ে পড়লেন। মানুুষের বাড়ি কাজ করে কোনোমতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করতে লাগলেন।
এই পরিস্থিতির মধ্যে সামান্য অক্ষরজ্ঞানকে সম্বল করেই লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক হয়ে গেলেন আরজ আলী। বরিশালের পাবলিক লাইব্রেরি, মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত বরিশাল শহরের অন্য একটি লাইব্রেরি এবং বরিশাল বিএম কলেজের লাইব্রেরি- এই সব। বিশেষ করে বিএম কলেজের সমৃদ্ধ লাইব্রেরি আরজ আলীকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছিল। এই লাইব্রেরিই আরজ আলীকে দিয়েছিল অপার জ্ঞানের সন্ধান। বরিশালের ক্ষণজন্মা এই পুরুষ নিজ দর্শনগুণেই আজ দেশজুড়ে বোদ্ধামহলে আলোচিত এক নাম। সাধারণ হয়েও তিনি ছিলেন অসাধারণ।
অভাবের সংসারে বেঁচে থাকার জন্য আরজ আলী এক সময় আমিনের কাজও (জমি জরিপকারী) করেন। লোকের জমি মেপে যে পয়সা পেতেন তা সংসারের খরচ মিটিয়ে বাকি টাকা দিয়ে নিয়মিত বই কিনতেন। এভাবেই তিল তিল করে বই কিনে ১৩৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’।
আরজ আলীর রচিত পান্ডুুলিপির সংখ্যা মোট ১৫টি। এর মধ্যে তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিলো ৪টি। এই বইগুলো হলো-সত্যের সন্ধান, অনুমান, সৃষ্টি রহস্য ও স্মরণিকা।
আজীবন তিনি সত্যানুসন্ধানে ব্যপৃত থেকেছেন। সত্যের সন্ধানে বইয়ে প্রশ্ন করেছেন যে, আমরা জানি আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হচ্ছেন দয়ালু, উনি দয়ার সাগর। তিনি প্রশ্ন করেন, একটি সাপ যখন তার খাদ্য হিসাবে একটি ব্যাঙ কে গিলে খাচ্ছে, তখন সাপের কাছে হয়ত আল্লাহ পাক দয়ালু, কিন্তু ব্যাঙ এর কাছে তো আল্লাহ পাক দয়ালু নন। তাইলে এই দয়ালু নামটা কি আল্লাহর সত্ত্বার সাথে মানায়? এভাবেই তার মনে জাগা নানা জিজ্ঞাসাকে তিনি বইতে সম্পৃক্ত করেন।
সার্টিফিকেট বর্জিত স্বশিক্ষিত এবং শুধুমাত্র সত্যানুসন্ধানে ব্রতী একজন লোক-দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর। সত্যানুসন্ধানে উনি কতটা সফল হয়েছেন, নাকি সত্যের পথে চলতে গিয়ে ভুল গাড়িতে চড়েছেন সেটা নিয়ে হয়তো বিতর্ক থাকতে পারে। তবে তিনি সত্যানুসন্ধানের আপোষহীন মনোভাব এবং নিরলস প্রচেষ্টার সন্মাননা উনি পেয়ে যাবেন যুগ যুগ ধরে।
মুক্তচিন্তা এবং স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে সেই চিরাচরিত নিয়মের ধারাবাহিকতার বলি আরজ আলী মাতুব্বরকেও হতে হয়েছে। স্বাধীন মত এবং চলমান লোকজ ধর্ম বিশ্বাসের বিরুদ্ধমত প্রকাশের কারণে নাস্তিক ও কম্যুনিস্ট আখ্যা দিয়ে ১৯৫১ সনে তার বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। তবে শত প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে আপোষহীন ভাবে স্বাধীন মত প্রকাশের এক সাহসী সৈনিক বেশেই তাকে আমরা দেখতে পাই।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..           

‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর

আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন

জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor

email – bikrampurkhobor@gmail.com

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন