৯৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
প্রকাশিত : বুধবার, ১জুলাই ২০২০ইং ।। ১৭ই আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : সব নৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া জাতির আলোকবর্তিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ৯৯ বছর পেরিয়ে শত বছরে পদার্পণ করেছে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে স্বল্প পরিসরে ৯৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে, দেশের সব সংকট মুহূর্তে মুক্তির পথ দেখানো বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা ভালো নেই। নিজেদের মেধার পরিচয় দিয়ে এ বিদ্যাপীঠে ভর্তি হয়েও তারা আবাসন সংকট, যানবাহন সংকট, ক্লাসরুম সংকটসহ নানা সংকট থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্তার বিকাশের লক্ষ্যে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯২১ সালের ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্বার উন্মুক্ত হয়। সে সময়কার ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পরিবেশ গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকালে তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন।
ঢাবির শতবর্ষ নিয়ে শিক্ষাবিদ ও ঢাবির ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, প্রথম ৭০ বছর আমরা অত্যন্ত ভালোভাবে এগিয়ে গেছি। আমাদের শিক্ষার মান ছিল। বড় বড় নামকরা পণ্ডিত ছিলেন।
তবে সেই ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি। শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যাশিত অর্জন করতে পারিনি। তবে কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী একটা মান ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করছেন। যদিও পরিমাণগত দিক থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, ইন্সটিটিউট সংখ্যা বেড়েছে, বিভাগের সংখ্যা বেড়েছে, সংখ্যার দিক থেকে আমাদের যা প্রয়োজন সবই আছে তবে মানের ক্ষেত্রে একটা শূন্যতা দেখতে পাচ্ছি। আর এ শূন্যতা না কাটলে বিশ্ববিদ্যালয় একটা উন্নত কোচিং সেন্টারে পরিণত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কথা উল্লেখ করে ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞানে এখানে প্রথাসিদ্ধ পাঠ হয়। মৌলিক গবেষণা ঢাবিতে খুবই কম হয়। আর যেসব প্রবন্ধ এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের নয়। আর এগুলো রিভিউ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক কোনো রিভিউআরও নেই। পাশাপাশি কলকাতা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের অনেক গবেষণা। কারণ তাদের ইনকাম আছে, তাদের ইন্ডাস্ট্রি তাদের সাপোর্ট দিচ্ছে। নেপালের তিনটা স্কপার ইনডেক্সে জার্নাল আছে আমাদের একটাও নেই। আমরা কখনও র্যাংকিংয়ে উঠতে পারি না। উঠলেও আবার হারিয়ে যাই। আমার মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ১০০টার মধ্যে থাকার কথা ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় আবাসন সংকট নিয়ে ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমি যখন ঢাবিতে ভর্তি হই তখন আবাসন সমস্যা ছিল না। আমি ৬৮ সালের দিকে ভর্তি হই তখন একটা সুবিধা ছিল যে পরিমাণ আবাসিক সিট রয়েছে সেটাকে মাথায় রেখে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। স্বাধীনতার পর চাপ বাড়তে থাকলে আমরা ছাত্র সংখ্যা বাড়িয়েছি কিন্তু আবাসনের ব্যবস্থা করিনি। এরপর শুরু হয়ে গেল গণরুম, গেস্টরুম কালচার। এটা এখন একটা ভয়াবহ সংস্কৃতিতে পরিণত হয়ে গেছে। তবে এ সংকট কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। সরকার চেষ্টা করলে এর সমাধান করতে পারে।
ঢাবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে এবং কোনো আনুষ্ঠানিক বড় সমাবেশ ছাড়াই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি। এতে প্রশান্তির জায়গাটিতে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। মূলত করোনা মহামারীর কারণে আমাদের অনেক কিছুই প্রতীকী রূপে ও সংক্ষেপে করতে হচ্ছে। বিশেষ করে এ আয়োজনে শিক্ষার্থীরা না থাকায় শুধু ঐতিহ্য, গৌরব ও মর্যাদার জন্য এতটুকু আমরা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সংকটসহ বিভিন্ন সংকট সমাধানে শতবর্ষকে সামনে রেখে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০০ বছরের কর্মসূচির মধ্যে সবই আছে। ওগুলো এক সময় দেখে নিও।
ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, আসলে রাজনৈতিক আলোচনা বা ইতিহাসে কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সুনাম বা অবদান সামনে চলে আসে। কিন্তু শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা সে জিনিসটা দেখি না। এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশা ও দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটা প্রথা চলে আসছে তা হল আবাসিক হলে থাকতে হলে রাজনৈতিক দলের মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করতে হয়।
এটা আসলে একটা দাস প্রথার মতো। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতি আশা করে না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা হলগুলোতে যে মানবেতর জীবনযাপন করে সেটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভাবছে বলে আমাদের চোখে পড়েনি।
ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি বন্ধ হওয়া দরকার উল্লেখ করে নূরুল হক নূর বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে। কারণ আমরা দেখি স্টুডেন্ট অ্যাকটিভিজমের বা দলীয় রাজনীতির নামে যে ছাত্র রাজনীতি, যে শিক্ষক রাজনীতি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে রাজনীতি চলে তা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো সেইভাবে এগোতে পারেনি। তবে আমাদের চেষ্টা রয়েছে খুব শিগগিরই একাডেমিক দিকটা আরও সমৃদ্ধি লাভ করবে। র্যাংকিংয়ের দিক থেকে অতি শিগগিরই অনেক এগিয়ে যাবে।
আবাসন সংকট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর আমিন শুভ বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাবিতে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট, যানবাহন সংকট এবং হলগুলোর গেস্ট রুম কালচার আমাকে আশাহত করেছে। এ সংকটের পেছনে প্রশাসনের উদাসীনতা অনেকটা দায়ী বলে আমি মনে করি।
স্বল্প পরিসরে ৯৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সকাল সাড়ে ১০টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়ানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে। বেলা ১১টায় অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লারুমে ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এতে মূল বক্তা হিসেবে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ‘শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রসঙ্গ : আন্দোলন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক বক্তব্য দেবেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (প্রশাসন), প্রোভিসি (শিক্ষা), কোষাধ্যক্ষ, সাবেক দুই ভিসি, দুই ডিন, একজন প্রভোস্ট, একজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ঢাবি শিক্ষক সমিতিসহ অন্যসব সমিতির পক্ষ থেকে নেতারা এ অনলাইন অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হবেন।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..