ড.নূহ-উল-আলম লেনিন
প্রকাশিত : সোমবার, ১৬ মার্চ ২০২০ ইং ।। ২ চৈত্র ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর : ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয়ের পর আদমজী পাটকলে বাঙালি বিহারি দাঙ্গার অজুহাতে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। গভর্নর ইস্কান্দার মির্জা ৯২/ক ধারা জারি করেন। সকল গণতান্ত্রিক তত্পরতা নিষিদ্ধ করেন। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ মুজিবুর রহমান। একমাত্র মন্ত্রী শেখ মুজিবকেই ১৬ জুন ১৯৫৪ সালে গ্রেফতার করা হয়। জাতিরপিতা শেখ মুজিবুর রহমানের উপর প্রকাশিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনর চতুর্থ খন্ডে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। ঐ প্রতিবেদনের ৭৩ পৃষ্ঠায় List of Security Prisoners শীর্ষক তালিকায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ১২৯ জন রাজবন্দির নাম পরিচয় তুলে ধরা হয়। এই তালিকার ক্রমিক নং ৪-এর বন্দির নাম আবদুর রহমান মাস্টার @ কারিকর পিতামৃত জবর আলী। তার গ্রেফতারের তারিখ ১০/৬/৫৪ । এই রহমান মাস্টার আমার পিতার নাম। এই তালিকার বাইরে স্বতন্ত্রভাবে বঙ্গবন্ধুর নামের উল্লেখ রয়েছে।
রহমান মাস্টার শেখ মুজিবুরের ১২ বছরের বডো্ ছিলেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সাথে রহমান মাস্টার্র প্রথম পরিচয়। মাঝে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে রহমান মাস্টার জেলে ছিলেন। শেখ মুজিব এই দরিদ্র বামপন্থি স্কুল শিক্ষককে শ্রদ্ধা করতেন। তাদের মধ্যে এক ধরনের সখ্য গডে্ উঠেছিল। রহমান মাস্টার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, তেভাগা সংগ্রাম এবং পাকিস্তান আমলের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ গ্রহণ ও নির্যাতন ভোগ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন।
একমাত্র উপার্জনক্ষম রহমান মাস্টার ১৯৫৪ সালে গ্রেফতার হলে তার পরিবার চরম অর্থ সংকটে পডে্। আমরা ছোট ছোট তিন ভাই-বোন ক্ষিদের যন্রণায প্রায়ই উপোস দিতাম। কোনোদিন মা চাল সংগ্রহ করে আনলে আমরা ফ্যান নিয়ে কাড়ারাডি করতাম।
শেখ মুজিব এটা জানতেন। বামপন্থি হলেও ১৯৫০ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত বাবা আওয়ামী লীগ করতেন। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করলে ১৯৫৪-এর কারাবন্দি হিসেবে স্কুলের কাছে প্রাপ্য বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন। বাবার কাছে শুনেছি শেখ মুজিব উদ্যোগী হয়ে বাবাকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে এই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছিলেন।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় কার্যত বিনা চিকিৎসায় এবং অর্ধাহার অনাহারে বাবার মৃত্যু হয়। আমাদের শৈশব- কৈশোর চরম দারিদ্রের মধ্যে কেটেছে। বাবা বলতেন দেশের কাজ করতে নেমে কারো কাছে হাত পাতবেনা।অসত্যের কাছে মাথা নোয়াবেনা।
বাবার প্রেরণায় আমরা তিনভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা বাবার আদর্শের কথা মনে রেখে আমাদের মুক্তিযাদ্ধা ভাতার টাকা কেউই ব্যাক্তিগতভাবে খরচ করিনা। পুরো টাকাই আমরা রহমান মাস্টার স্মৃতি পাঠাগার এবং বঙ্গীয় গ্রন্থ জাদুঘর পরিচালনার জন্য ব্যয় করি।
বাবা বঙ্গবন্ধুকে আজীবন শ্রদ্বা করতেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের নামে বিশেষ করে শাহ মোয়জ্জেমের গণ বিরোধী অপকর্মের তীব্র সমালোচনা করতেন। বঙ্গবন্ধুকেও তিনি এ কথা জানিয়েছন। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন। ক্ষেদ নিয়ে বলতেন,এরাই শেখ সাহেবকে শেষ করবে।
বাবার কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে।