মুন্সীগঞ্জে প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশনে দালালদের তৎপরতা

0
30
মুন্সীগঞ্জে প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশনে দালালদের তৎপরতা

প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট ২০২০ইং ।। ২৭শে শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।

বিক্রমপুর খবর : মোহাম্মদ সেলিম মুন্সীগঞ্জ থেকে : সোমবার মুন্সীগঞ্জে জেলা জনশক্তি ব্যুরো অফিসে করোনার সময় বিদেশ থেকে ফেরত মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশন কাজ চলছিলো। জেলার ৬টি উপজেলার প্রবাসীরা সকাল থেকে এ অফিসের নিচতলায় ও শহরের প্রধান সড়কের পাশে জড়ো হতে থাকে। সোমবারের দিনের সময় বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে এখানে মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে।

এক সময় এখানটাতে জন সমুদ্রে পরিণত হয় বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে এখানকার আশপাশে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দেয়। এখানে এ কাজের সময় কেউ করোনার সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে না চাওয়ার কারণে একে অন্যের সাথে শরীরের সাথে শরীর লেগে এখানে পাসপোর্টের ফরম ও জমা দিতে দেখা যায় দিনভর।

এ সময়টিতে এখানে প্রতিটি সিঁড়ি ও অফিসে পচন্ড ভীর লক্ষ্য করা যায়। এই ভীরের কারণে এ অফিসের প্রধান ফটক আংশিক বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে এ প্রক্রিয়ায় এখানে বিভিন্ন রকমের দালালের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায় দিনের শেষ সময়টা পর্যন্ত। এখানে একটি ফরম পূরণ করতে আগত প্রবাসীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা আদায় করতে দেখা যায় দালাল শ্রেণির লোকজনদেরকে। এ অফিসের নিচ তলায় একটি  ট্র্যাভেল এজেন্সির অফিসের ভেতর দালালরা ফরম পূরণে ব্যস্ত সময় পাড় করতে দেখা যায়।

তাদের ছবি তুলতে এ প্রতিবেদক গেলে তার দিকে রুখে দাঁড়ায় ভেতরে থাকা দালালেরা। ঈদের পর তেকে এখানে এ প্রক্রিয়া চালু রয়েছে বলে অফিস সূত্রে জানা যায়। এ অনেকের অভিমত হচ্ছে, গতকাল সোমবার এ ফরম পূরণের শেষ দিন জেনে অনেক প্রবাসী এখানে ফরম পূরণে করে জমা দিতে এসেছেন বলে জানা গেছে। তবে অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়টি বর্তমানেও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গতকাল সোমবার দিনই ফরম পূরণের শেষ দিন নয়। এটি এ মুহুর্তে চলমান প্রক্রিয়াধীর রয়েছে বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে। সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ফরম পূরণের মাধ্যমে এখানে সকল কাগজপত্রাধী জমা নেয়া হচ্ছিলো।

কিন্তু এ সময়ের মধ্যে এ অফিসে এ প্রতিবেদক প্রবেশ করলে হঠাৎ করেই ফরম পূরণ ছাড়াই শুধুমাত্র পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপিসহ মোবাইল নাম্বারসহ কাগজপত্রের জমা দেয়ার জন্য হ্যান্ড মাইকের ঘোষণা আসে। এ বিষয়টি রহস্যে জন্ম দেয়। কিন্তু এ বিষয়টি আগত প্রবাসীরা অনেকেই কোনভাবেই কর্ণপাত করেনি। বরং নিচতলার একটি ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকে সেই ফরমের ৫০ টাকা বিনিময়ে পূরণ করে জমা দিতে দেখা গেছে দিনের শেষভাগ পর্যন্ত।

তবে মাইকে ঘোষণার পরে কেউ কেউ এ সময় ফরম ছাড়াই জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ অফিসের প্রবেশ মুখে ট্র্যাভেল এজেন্সির অনেক দালালরা লোকজন ধরে ধরে উপরে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এখানকার ট্র্যাভেল এজেন্সির এখানে এ ধরণের কাজ করার কথা না, অথচ তারা সোমবার দিন এখানে তাদের অফিসের নিজস্ব কাজ বাদ দিয়ে অধিক টাকার লোভে ৫০ টাকার বিনিময়ে ফরম পূরণের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেন। সাইন বোর্ডের আড়ালে এখানে তাদের মূলত দালালি ব্যবসা হচ্ছে মূল।

এর ফলে এখানে একাধিক দালালের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের ভেবে দেখা উচিত বলে অনেকেই মনে করেন। এখানে আগত লৌহজং উপজেলার আঁটিগাঁও থেকে আসা মালোশিয়া প্রবাসী জসিম ও একই গ্রামের অন্য প্রবাসী ওয়াসিম জানান, সরকার প্রবাসীদের আর্থিক সাহয্যে দিবে এ শুনে তারা এখানে গতকাল সোমবার এসেছেন। তবে তারা আরো জানান, আমাদের আর্থিক সাহায্যে না দিয়ে যদি বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো তবে ভালো হতো। তারা আরো জানান,

আমরা করোনার কয়েকদিন আগে দেশে ফিরে এসেছি। সেই সময় আমাদেরকে ৬ মাসের ছুটি দেয়া হয়ে ছিল। সেই ছুটিও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তিতে কি হবে তা তারা এখনো জানেন না। অনেকের অভিযোগ হচ্ছে যে, এ ভবনের একটি মাদ্রাসা থেকেও টাকার বিনিময়ে এ কাজে ফরম পূরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তারা এ বিষয়ে জানান যে, তাদের কিছু নিকট আত্নীয় স্বজনদের কিছু কিছু ফরম তারা পূরণ করেছেন। তবে সেখানে টাকা পয়সার বালাই নেই।

এখানে ফরম পূরণে ও জমার সময় কোনভাবেই সামাজিক ও স্বাস্থ্যবিধি কোনভাইে মানা হয়নি। এ সময় যদি এরমধ্যে কোন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে সোমবারের ঘটনায় এখান থেকেই অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এখানকার অফিসটা অনেকটাই স্বল্প পরিসরে। সেক্ষেত্রে এখানকার কতৃপক্ষ যদি ভবনের নিচে আগত প্রবাসীদের প্রধান সড়কের পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে সোমবার দিনের কাজ করা হলে এখানে করোনার এতোটা ঝুঁকি থাকতো না বলে অনেকেই মনে করছেন। এখানে ফরম জমার সময় নারী প্রবাসীদের সংখ্যা ছিলো প্রচুর।

এ ভবনে দালালদের মাধ্যমে ফরম পূরণের ঘটনায় মানুষের উপচে পড়া ভীরের অভিযোগ নিয়ে এখানে অন্যতলায় বসবাসকারী চরকেরয়ার ইউনিয়নের এক মহিলা মেম্বার ছুটে আসেন সেই ট্র্যাভেল এজেন্সি অফিসে। এখানে দালালদের তৎপরতা বন্ধ করার জন্য তিনি বেশ সোচ্চার হন। কিন্তু তার সেই কথা এখানকার দালালরা মোটেই শুনেননি বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি পরে জনশক্তি ব্যুারো অফিসে ছুটে যান। কিন্তু ফলাফল শূণ্য দেখা যায়।

মুন্সীগঞ্জ জেলা জনশক্তি ব্যুরোর সহকারি পরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে তাদের অধিদপ্তর থেকে একটি নতুন সার্কুলার এসেছে, জেলার ৬টি উপজেলায় করোনার সময় যেসব প্রবাসীরা দেশে ফিরে এসেছেন তাদের রেজিস্টেশন করার জন্য বলা হয়েছে। সেই আদেশের কাজ গতকাল সোমবার চলছে। যেসব প্রবাসীদের ছুটি ইতোমধ্যে বা শেষ পর্যায়ে রয়েছে তাদের ছুটি বর্ধিত করার লক্ষ্যে জনশক্তি ব্যুরো চলমান প্রক্রিয়ায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এ রেজিস্টেশনের মাধ্যমে প্রবাসীদেরকে প্রতিটি উপজেলা পরিষদ থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকার ঘোষিত অনুযায়ি আর্থিক সাহায্যে প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান। এ অফিস এসব কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে প্রবাসীদের স্ব স্ব উপজেলায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। তাদের কাজ শুধু এটুকু।

জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন বলে জানা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..                    

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন