প্রকাশিত:মঙ্গলবার,৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ইং ।। ২১ মাঘ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর :মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি :মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলা,ভাঙচুর,গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দুপুর ও বিকালে পৃথক সময়ে এ হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে স্বপন গ্রুপের চারজন ও মেজবাউদ্দিন গ্রুপের দুজন গুলিবিদ্ধসহ ১২ জন আহত হয়। এ সময় একপক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করতে গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করে। ককটেলের বিকট শব্দে এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে সাত গ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ও বিকালে পৃথক সময়ে এ হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ফাহিম দেওয়ান (১৬),আকাশ দেওয়ান (২০),সাহাবুদ্দিন তালুকদার (৪৫), হাসিবুল (২০),আবু সাইদ (৬০),রাকিবকে (২৫) মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহত সুমা বেগম (৩০),লাকি বেগম (২৮) ও বিউটি বেগমকে (৪০) স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ইউনিয়নের নোয়াদ্দা, আমঘাটা, কংশপুরা, মুন্সীকান্দি, বেহারকান্দি, লক্ষ্মীদিবি ও ঢালীকান্দি গ্রামে দু’পক্ষের সমর্থিতদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও দু’পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে, ঘটনার পরপরই মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের একাধিক টিম অবস্থান নিয়ে ও অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পুরাবাজার এলাকায় মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য স্বপন দেওয়ান ও মেজবাহউদ্দিন ঢালীর সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপুর ২টার দিকে স্বপন দেওয়ানের সমর্থকরা নোয়াদ্দা গ্রামে গিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। মেজবাহউদ্দিনের লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বপন দেওয়ান ও তার লোকজনকে ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। গ্রামবাসী জানায়, মেজবাহউদ্দিন সমর্থকরা বিকেলে স্বপন দেওয়ানের মুন্সীকান্দি গ্রামের আশপাশে অবস্থান নিলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় দু’পক্ষই গুলি ও ককটেলের বিস্ম্ফোরণ ঘটায়। এ সময় স্থানীয় নোয়াদ্দা,আমঘাটা,কংশপুরা, মুন্সীকান্দি,বেহারকান্দি,লক্ষ্মীদিবি,ঢালী কান্দিসহ আটটি গ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আনিচুর রহমান জানান,ঘটনার খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ২৯ জানুয়ারি সন্ত্রাস কবলিত মোল্লাকান্দির মাদক,সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদরোধে চরডুমুরিয়া এলাকায় স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং এলাকাবাসীদের নিয়ে ওপেন হাউজ ডে ও মতবিনিময় সভা করেন মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মোমেন পিপিএম। ওই সভায় মোল্লাকান্দি ইউপিতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের সবাই উপস্থিত ছিলেন। তারা পুলিশ সুপারকে কথা দিয়েছিলেন,মোল্লাকান্দি এখন থেকে শান্ত থাকবে এবং কোন সহিংসতা ঘটবে না। কিন্তু সভা করার ৫ দিনের মাথায় মোল্লাকান্দিতে চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনা গ্রুপের ইউপি মেম্বার স্বপন দেওয়ান ও সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা মোল্লা গ্রুপের অপর ইউপি মেম্বার মেজো ঢালী গ্রুপের মধ্যে গুলি,ককটেল বিস্ফোরণ,হামলা পাল্টা হামলা ও বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটলো।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন ‘মোল্লাকান্দির অশান্তি আর শেষ হল না’। চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দির এই সহিংসতা প্রতিবছরের জাতীয় কাগজগুলিতে সংবাদ প্রকাশে মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের মানক্ষুণ্ণ হয় বলে অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করেন।