প্রকাশিত : বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫, খ্রিষ্টাব্দ।। ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(শীতকাল)।। ৭ রজব, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : মির্জা গালিব এবং কিছু স্মর্তব্য কথামালা
–ননী গোপাল সরকার
দিল্লির বালিমারাম চাঁদনী চকে একটি সমাধি!
এর গাত্রে লেখা–
” সাড়ে তিনহাত জমিই যে ছিলো গালিবের নজরানামৃত্যুর শেষে পেলে অবশেষে জমিটির মালিকানা।”
লেখাটি পৃথিবী বিখ্যাত কবি মির্জা গালিবের। যেন তিনি আগেই জেনে গিয়েছিলেন পৃথিবীতে প্রকৃত মালিকানা বলতে কিছু হয় না। তবে মৃত্যুতে সাড়ে তিনহাত ভূমি পাওয়া যায়। জীবন সম্পর্কে এমন গভীর অনুভূতির মানুষটির জীবনে একটি খেদ ছিলো। তিনি বলেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর মানুষ অবশ্যই তাঁর মর্যাদা বুঝতে পারবে। তাঁর কথা আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে–মানুষের মাঝে গালিবের কবিতা, শায়েরি, গজল এবং গল্প জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেবল উর্দু বা ফার্সি সাহিত্যে নয়, আজ বিশ্ব সাহিত্যের এক অবিসংবাদিত নাম মির্জা গালিব!
১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর ভারতে আগ্রার কলামহলে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর প্রকৃত নাম ছিলো মির্জা আসাদুল্লাহ বেগ খান গালিব। সংক্ষেপে তিনি মির্জা গালিব বলে পরিচিত। গালিব শব্দের অর্থ হলো–সর্বোচ্চ। বস্তুত তিনি একজন উঁচুমানের কবি ছিলেন। তাঁদের পূর্ব পুরুষ তুরস্ক থেকে সমরখন্দ মতান্তরে উজবেকিস্তান হয়ে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। তাঁর পিতা মির্জা আবদুল্লা বেগ ছিলেন মোঘল সৈন্যবাহিনীর একজন সদস্য। বাল্যকালেই তিনি তাঁর পিতাকে হারান। তথাপি মায়ের বংশের কারনে গালিব কোনো দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হননি।
বাল্যকালে তিনি আগ্রার খ্যাতিমান পন্ডিতদের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি ভাষা তাঁর অবগত ছিলো। ১৮১০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি ধর্মপ্রাণ ওমরাও বেগমের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন মোঘল দরবারের সর্বশেষ সভাকবি। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহে শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ পরাজিত ও বন্দী হলে গালিবের জীবনে চরম দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে। এমনকি তাঁর জীবনের উপর হুমকী চলে আসে। শেষ পর্যন্ত তিনি হয়তো তাঁর কবিখ্যাতির কারনে ইংরেজের রোষানল থেকে প্রাণে বেঁচে যান।
সন্ধ্যাবেলায় সুরা পান করে কবিতা লেখা ছিলো তাঁর অভ্যাস। সৃজনশীলতার জন্য একে তিনি অত্যাবশ্যক মনে করতেন। দেখা যায় কেবলমাত্র ১৮৬৫ সালে এক বছরেই ১৭৯২টি উর্দু ও ১১৩৪০টি ফার্সি শ্লোক রচনা করেছিলেন। গালিবের লেখার জগৎ যেমন ব্যাপক, তেমনি ব্যাপক তার ভাবার্থ। তিনি প্রেমকে জীবনে গূঢ় অর্থে গ্রহন করেছিলেন। তিনি তাঁর আপন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন ভঙ্গিমায় প্রতীকী অর্থে প্রেমের চিত্রায়ন করেছেন– যা পড়লে মনে এক অনিন্দ্য প্রেম-সৌন্দর্য খেলা করে। ইরানী গবেষক ডা. সৈয়দ নেকি আবেদি বলেছেন,”গালিবের ফার্সি গজল যদি না পড়া হয় তবে তাঁর কবিতার কিছুই পড়া হলো না।”
গালিবের নামটি গজলের ক্ষেত্রে চির দেদীপ্যমান। তিনি গজল, কাসিদা, রুবাই, গল্প ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে লিখেছেন। এসব লেখায় জীবনবোধ, দর্শন, প্রেম, ধর্ম ও অতীন্দ্রয়তা স্থান পেয়েছে। তাঁর গজল গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন–জগজিৎ সিং, মেহেদী হাসান, মো: রফি, গোলাম আলী, আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকর প্রমুখ কালজয়ী শিল্পী। সিপাহী বিদ্রোহের পর বাদশাহী অর্থ সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে এবং ইংরেজরা বৃত্তি প্রদান না করায় জীবনের পরবর্তী ১২টি বছর চরম অর্থকষ্টে কাটে মির্জা গালিবের। এমনকি তাঁকে উপোস করেও দিনাতিপাত করতে হয়েছে। অবশেষে ১৮৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এই কালজয়ী কবির জীবনাবসান ঘটে।
এখানে মির্জা গালিবের কিছু শায়েরি বা শ্লোক তুলে ধরা হলো—
১| সন্ধ্যার অন্ধকার কতোটা ভয়াবহ হতে পারে,
তা সেই পাখিকে জিজ্ঞেস করো, যার কোনো ঘর নেই।
২| ধুলো ছিলো চেহারায়,
আর আমি সারাক্ষণ আয়না মুছে গেলাম।
৩| সারাজীবন কেবল সেই মানুষটার কথাই মনে রইলো/ যাকে আমি ভুলে যাবো ভেবেছিলাম।
৪| তুমিও না গালিব খুবই চমৎকার,
চাওয়া পাওয়া সব রাখলা মানুষের কাছে,
আর অভিযোগ করো খোদার কাছে!
৫| যে আর্তনাদ ঠোঁটে এলো না, সে বুকে দাগ কেটে বসে/ যে জলবিন্দু নদীতে পৌঁছালো না, তাকে মাটি শুষে নেয়।
৬| যে প্রাণ দিলাম তোমায় সে তো তোমারই দেওয়া/
আসল কথা এই–তোমাকে কিছুই দেওয়া হলো না।
৭|তোমার দরজার সামনেই ঘর বানিয়ে নিয়েছি আমি
এবারও কি বলবে আমার ঘরের ঠিকানা জানো না তুমি!
৮| প্রদীপ নিভে গেছে তা থেকে ধোঁয়া ওঠে/ আমি নেই, তাই প্রেমের আগুন কালো পোষাক পরেছে।
৯| ভাবনা আবার তোমার গলিতে যেতে চায়/ বোধ হয় হারানো হৃদয়ের কথা মনে পড়েছে।
১০| হে জীবন দু’দন্ড জিরিয়ে নাও/ আমি নিশ্চিত তুমিও ক্লান্ত হয়ে গেছো আমাকে কাঁদাতে কাঁদাতে।
১১| হাতের রেখায় ভাগ্য দেখতে যেও না গালিব/
ভাগ্য তাদেরও আছে–যাদের হাত নেই।
১২| বড্ড শখ ছিলো আমার সবাইকে খুশি রাখার/
হুঁশ তো তখন হলো যখন খারাপ সময়ে নিজেকে একা দেখলাম।
১৩| যদি চিঠি না লিখো, তবে কেন লিখবে না তাই লেখো।
১৪| জীবন বড়ই বিচিত্র/ সন্ধ্যা কাটেনা, অথচ দিব্যি বছর কেটে যাচ্ছে।
১৫| জীবনের কারাগার আর দুঃখের শৃঙ্খল এক ও অভিন্ন/ মৃত্যুর আগে মানুষ কেন দুঃখ থেকে মুক্তি পাবে ?
১৬| পৃথিবীতে পোষাক বিহীন এসেছিলে হে গালিব/
একটি কাফনের জন্য এত লম্বা সফর!
যতই দিন যাচ্ছে কবি মির্জা গালিব প্রাত:স্মরণীয় এবং জীবন চলার পথে অপরিহার্য হয়ে উঠছেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি!
-সংগৃহিত
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর- আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন- বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
email – bikrampurkhobor@gmail.com