প্রকাশিত : শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(হেমন্তকাল)।। ৪ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : লৌহজং প্রতিনিধি : আব্দুল কাদের খান। কাদের মাষ্টার নামেই সমধিক পরিচিত। ছিলেন ঐতিহ্যবাহী পয়শা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব প্রধান শিক্ষক। যিনি মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে বহুল সমাদৃত। আজ তার ২৩ তম মৃত্যু দিবস। ২০০১ সালের এইদিনে আমাদের ছেড়ে তিনি চলে গেছেন।
মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার বৌলতলী ইউনিয়নের মাইজগাঁও গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান তিনি। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। লেখাপড়ায় অন্য দশজনের চেয়ে ছিলেন আলাদা। তাই ওস্তাদ আব্দুর রহমান মুন্সি সাহেব তাকে ভীষণ আদর করতেন।
পয়শা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনিই প্রথম ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন।
বাবা রশিদ খান ছেলেকে ভর্তি করেন
রুশদী উচ্চ বিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে প্রায় ৫ মাইল দূরে স্কুল। রোদ বৃষ্টি, ঝড় তুফান আর বর্ষার অথৈ পানির সাথে যুদ্ধ করে ক্লাস এইটে আবার ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। মেধাবী আর বিনয়ী হওয়ার কারনে শিক্ষকদের আলাদা স্নেহ আদর পেতেন। কিন্তু সংসারের অভাব তাকে কেবলই আঁকড়ে ধরতো। ভালো খাবার, ভালো পোশাক তাঁর কপালে খুব একটা জোটেনি। পড়াশোনার পাশাপাশি সেই বয়সেই টিউশুনি শুরু করেন। টিউশুনির পয়সা থেকে বাবাকে মাসে মাসে কিছুটা সহযোগিতা করেন।
দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এলো এস এস সি পরীক্ষা। রুসদী স্কুল থেকে ষ্টার মার্কসসহ এস এস সি (এন্ট্রান্স) পাস করেন।
এরপর সরকারি হরগঙ্গা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই এস সি পাস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে বি এস সি পাস করেন।
এরপর তিনি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে বি এড পাস করেন।
──⊱◈◈কর্মজীবন◈◈⊰──
রুসদী উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক পদোন্নতি লাভ করেন।
এরপর লৌহজং পাইলট গার্লস হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৭২ সালে পয়শা উচ্চ বিদ্যালয় পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলে- ইউনুছ ভান্ডারী, সামাদ মোল্লা, বন্ধু কাদের চেয়ারম্যান এবং এলাকাবাসীর অনুরোধে তিনি পয়শা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
একটি নতুন স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ছাত্রছাত্রী জোগাড় করা, বোর্ড থেকে তাদের রেজিষ্ট্রেশন, ফর্ম ফিলাপের ব্যবস্হা করা, অন্যান্য শিক্ষকদের বেতন সংগ্রহ করা- চাট্টিখানি কথা নয়। তিনি হাসিমুখে এই সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন। পয়শা স্কুলকে মুন্সিগঞ্জ জেলার মধ্যে একটি আদর্শ স্কুল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।
আমাদের এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। হাতেগোনা ২/১ টি পরিবার বাদে সবাই ছিল গরীব। তিনবেলা অনেকের ঘরে খাবার জুটতো না। যাদের সংসারে দু’বেলা খাবারের জোগাড় হয়না- তারা স্কুলের বেতন দিবে কিভাবে?
এমন নিন্মবিত্ত পরিবারের অসংখ্য ছাত্রছাত্রীকে নামমাত্র বেতন কিংবা বিনা বেতনে পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। অধিকাংশ এস এস সি পরীক্ষার্থীরাই ফর্ম ফিলাপের টাকা জোগাড় করতে পারে নাই। এ কারণে মাঝে মাঝে সহকর্মী শিক্ষকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করতেন। তারা বলতেন, যেখানে আমাদের নিজেদের সংসার চলেনা -সেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে ফ্রি করে দিলে আমরা চলবো কিভাবে? কখনো কখনো ম্যানেজিং কমিটি ও তার উপর অসন্তুষ্ট হতেন। তিনি সবকিছু হাসিমুখে মেনে নিতেন। আসলে স্কুলটিকে তিনি এতোটাই ভালবেসেছিলেন -যে কারণে তিনি সকল দুঃখ, কষ্ট, সইতে পেরেছিলেন।
তিনি গম্ভীর স্বভাবের ছিলেন। যারা পড়ালেখায় ভালো-তাদেরকে তিনি ভীষণ আদর করতেন এবং সহযোগিতা করতেন। আর এ কারণেই তিনি ও সকলের প্রিয় শিক্ষক ছিলেন।
নিজের অস্বচ্ছল সংসারের চিন্তা তিনি কখনো করেননি। অভাব আর অনটনের মধ্যে কাটিয়েছেন সারাজীবন। জীবনে বড় বড় সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তিনি স্কুল ছেড়ে যাননি। তিনি স্কুলটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। তিনি ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর। আমৃত্যু তিনি মানুষ গড়তে চেয়েছিলেন।
এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপেক্ষিতে তার মৃত্যু হয়। আজ তাঁর প্রয়ান দিবসে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে মিনতি জানাই-তিনি যেন আমাদের এই প্রিয় মানুষটিকে হেফাজত করেন।
──⊱◈◈প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান◈◈⊰──
✪ বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্যেও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেননি।
✪ মতিঝিল গভঃ হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুযোগ পেয়ে ও যোগদান করেননি।
✪ উইলস লিটল স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ
✪ আব্দুল্লাহপুর হাই স্কুল, মুন্সিগঞ্জ- প্রধান শিক্ষকের পদ।
✪ এভিজেএম গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ।
✪ একটি “গ্রুপ অব কোম্পানিজ” এর ম্যানেজারের পদ।
──⊱◈◈তথ্য সংগ্রহ◈◈⊰──
মাহবুব খান আনোয়ার
আঃ কাদের খানের বড় ছেলে
──⊱◈◈লেখক◈◈⊰──
ঢালী মনিরুজ্জামান
অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র সহ-সভাপতি
প্রাক্তন ছাত্র সংসদ
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
email – bikrampurkhobor@gmail.com