প্রকাশিত: সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ইং।। ১৩ই পৌষ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ(শীতকাল)।। ১২ই জমাদিউল-আউয়াল,১৪৪২ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : ‘মুখ ও মুখোশ’ দেশের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন আব্দুল জব্বার খান। বাংলা সবাক চলচ্চিত্রের জনক আবদুল জব্বার খান-এর ২৭তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। । তিনি ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর, ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
যাঁর হাত ধরে আমাদের এই ভূ’খন্ডে বাংলা সবাক চলচ্চিত্রের সূচনা হয়েছিল, উন্মোচিত হয়েছিল চলচ্চিত্র নির্মানের নতুন এক সম্ভাবনার দিগন্ত- তিনি আবদুল জব্বার খান।
অভিনেতা-পরিচলক-প্রযোজক-পরিবেশক-কাহিনী-চিত্রনাট্যকার আব্দুল জব্বার খান ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ এপ্রিল, আসামের গোলকগঞ্জের, দফরপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পৌত্রিক নিবাস বিক্রমপুরের লৌহজং থানার উত্তর মসদগাঁও। পিতার নাম হাজী মোহাম্মদ জমশের খান এবং মা মোসামৎ আব্বান খাতুন। আসামের ধুবড়ী এলাকায় তাঁর বাবা পাটের ব্যবসা করতেন। সেখানেই শৈশবে তিনি স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলে পড়া অবস্থায় তিনি নিয়মিত মঞ্চনাটক করেছেন। নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তিনি নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করতেন।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে ডিপ্লোমা নিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন। ঢাকায় এসে সংগঠিত করেন ‘কমলাপুর ড্রামাটিক এসোসিয়েশন’। এ সংগঠনের উদ্যোগে তিনি ‘টিপু সুলতান’ ও ‘আলীবর্দী খান’ নাটক মঞ্চায়ন করেন। পরে তিনি- ঈসাখাঁ, প্রতিজ্ঞা, ডাকাত, দেবলা দেবী, সিন্ধু বিজয়, চিরকুমার সভা, মাটির ঘর, বংগবর্গী, মেঘমুক্তি, শক্তির মন্ত্র , মীরকাশিম , কেদার রায়, মাটির মানুষ , মিশরকুমারী ,বাংলার প্রতাপ, পলাশী, বীর রাজা, রাতকানা, বেজায় বগড়, বৃস্টি বাবা সতীতীর্থ, নারী ধর্ম, ছেড়া তাঁর, বলবীর দুস্য ,নাথের শেষে, রাজা রানী’সহ অনেক নাটক রচনা করেন।
আব্দুল জব্বার খান ১৯৫৩-তে ‘ডাকাত’ নামক নাটক অবলম্বনে বাংলাদেশের প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণ শুরু করেন, চলচ্চিত্রিট মুক্তি পায় ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ আগষ্ট।
পরবর্তিতে তিনি আরো যেসব চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন– জোয়ার এলো, নাচঘর, উজালা, বাঁশরী, কাঁচ কাটা হীরে, এবং খেলাঘর।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে আব্দুল জব্বার খান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের চলচ্চিত্র বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। তিনি পপুলার ষ্টুডিওর অংশীদার ছিলেন। সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র জুরি বোর্ড, অনুদান কমিটি, সেন্সর বোর্ড, ফিল্মস ইন্সটিটিউট এবং ফিল্ম আর্কাইভে।
তিনি ষাটের দশকে গঠিত পাকিস্তান প্রযোজক সমিতির অন্যতম সংগঠক এবং নেতা ছিলেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান ফিল্ম ডিলগেনশের সদস্য হিসেবে আফ্রিকান
দেশসমূহ সফর করেন।
আব্দুল জব্বার খান চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য- বাচসাস বিশেষ পুরষ্কার, এফডিসির রজতজয়ন্তী পদক, হীরালাল সেন স্মৃতি সংসদ এবং বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন স্বর্নপদক লাভ করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।
তাঁর সম্মানার্থে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘আব্দুল জব্বার খান স্মৃতি পাঠাগার’।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে, বর্তমান ঢাকার সোনারগাঁও সার্ক ফোয়ারা থেকে এফডিসি ছাড়িয়ে টঙ্গী ডাইভারশন রোড পর্যন্ত সড়কটি ‘আবদুল জব্বার খান সড়ক’ নামে পরিচিত হবে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আবদুল জব্বার খান, একটি কিংবদন্তী নাম। এই নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, অনন্তকাল।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’