প্রকাশিত : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(শরৎকাল)।। ২০ জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর: শ্রীনগর প্রতিনিধি : বিক্রমপুরের কৃতি সন্তান স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রয়াণ দিবস আজ। ইতিহাসের কয়েকজন খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের মধ্যে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ছিলেন অন্যতম। তিনি একজন বাঙালি পদার্থবিদ, উদ্ভিদবিদ ও জীববিজ্ঞানী। যিনি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন গাছের প্রাণ আছে। গাছেরাও উত্তেজনায় সাড়া দেয়।
তিনি এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন যা উদ্ভিদদেহের সামান্য সাড়াকে লক্ষগুণ বৃদ্ধি করে প্রদর্শন করে। তাঁর এই গবেষণাও আজ আধুনিক যুগে টেলিভিশন ও মহাকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি অঞ্চলের ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রাম। তাঁর পিতা ব্রাহ্মসমাজের ধর্মাবলম্বী ভগবান চন্দ্র বসু। তিনি ছিলেন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মায়ের নাম বামা সুন্দরী দেবী।
১৮৮৭ সালে ব্রাহ্ম সমাজের বিখ্যাত সংস্কারক দুর্গা মোহন দাসের কন্যা অবলাকে বিয়ে করেন জগদীশ চন্দ্র বসু। তিনি একজন নারীবাদী ছিলেন এবং তাঁর স্বামীর বৈজ্ঞানিক জীবনকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেছিলেন।
জগদীশ চন্দ্র বসুর শিক্ষাজীবনঃ
তাঁর বাবা চেয়েছিলেন তিনি ইংরেজি ভাষা শেখার আগে তাঁর নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করা এবং এদেশীয় ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষা শেখানোর। তাই তাকে একটি স্থানীয় স্কুলে পাঠানো হয় যেখানে তাঁর বিভিন্ন ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের সহপাঠী ছিলেন।
জগদীশ চন্দ্র বসু কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে পড়াশুনো করে ১৮৬৯ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ভর্তি হন। যেখানে তিনি ইউজিন ল্যাফন্টের সঙ্গে পরিচিত হন যিনি তাঁর মধ্যে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি করেছিলেন।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ডে যেতে চান তবে তাঁর পিতা তাঁর এই ইচ্ছায় রাজি ছিলেন না কারণ তিনি চাইতেন জগদীশ চন্দ্র বসু একজন বিদ্বান হোক।
বাবার ইচ্ছাতে অবশেষে, তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি ট্রাইপস পাশ করেন এবং ১৮৮৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি শিক্ষালাভ করেন। কেম্ব্রিজে জন উইলিয়াম স্ট্রাট, ফ্রান্সিস মেটল্যান্ড, জেমস ডেওয়ার, ফ্রান্সিস ডারউইন মতো শিক্ষকদের কাছে শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখানে তাঁর সহযোদ্ধা প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সাথেও তাঁর পরিচয় হয়, যার সাথে তিনি ভাল বন্ধু হয়েছিলেন।
১৮৮৫ সালে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ভারতে ফিরে আসেন এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন। প্রথম চাকরিতেই তিনি বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন এবং তার বেতন ব্রিটিশ অধ্যাপকদের তুলনায় অনেক নিচু স্তরে নির্ধারিত হয়েছিল। তবে জগদীশ চন্দ্র বসু প্রতিবাদ হিসাবে বেতন গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এবং তিন বছর বিনা বেতনে কলেজে পড়িয়েছিলেন।
দীর্ঘকাল ধরে প্রতিবাদের পরই তাঁর বেতন ব্রিটিশদের সমতুল্য করা হয়েছিল এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ তাকে স্থায়ী করে দেন এবং তাকে তার পূর্বের তিন বছরের পুরো বেতন দিয়েছিলেন। কলেজে ২৪ বর্গফুট একটি ছোট ঘরে তাকে গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে হয় এবং তাঁর এত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও তাঁর বিজ্ঞান সাধনার প্রতি হার না মানার সাহস দেখে ভগিনী নিবেদিতাকে অবাক করে তুলেছিলেন। জগদীশ চন্দ্র বসু নিজের অর্থের সাহায্য তাঁর গবেষণার জন্য অর্থায়ন করেছিলেন।
প্রতিদিন তাঁর কলেজের অধ্যাপনার পাশাপাশি যেটুকু সময় থাকত তিনি গবেষণার কাজ করতেন। আঠারো মাসের অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা করেন এবং ১৮৯৫ সালে একটি ৫মিমি থেকে স্বল্পতম রেডিও-তরঙ্গ তৈরি করেছিলেন। যা বলা হয় অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ। আধুনিক টেলিভিশন এবং মহাকাশের ক্ষেত্রে এই ধরণের তরঙ্গের ভুমিকা অনস্বীকার্য। তিনি ১৮৫৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল-এর সামনে তাঁর প্রথম বৈজ্ঞানিক কাগজ’, অন দ্য পোলারাইজেশন অফ ইলেকট্রিক রেইস” উপস্থাপন করেন। ১৮৯৬ সালে তাঁর গবেষণাগুলি লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়।
১৮৯৬ সালে তিনি মার্কোনি সাথে দেখা করেন যিনি যিনি ওয়্যারলেস সিগন্যালিং পরীক্ষায় কাজ করছিলেন। মার্কোনি দীর্ঘদিন ধরে টেলিগ্রাফি নিয়ে কাজ করতেন। ১৮৯৯ সালে রয়্যাল সোসাইটির একটি পেপারে “iron-mercury-iron coherer with telephone detector” প্রকাশ করেন।
তিনি বায়ো ফিজিক্সের ক্ষেত্রেও একজন অগ্রণী ছিলেন এবং তিনি একজন বাঙালী বিজ্ঞানী যিনি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ”গাছের প্রাণ আছে”। তিনি প্রথম গবেষণা করেছিলেন উদ্ভিদ প্রাণীর মতোই উত্তেজনায় সাড়া দেয় অর্থাৎ তারা ব্যথা অনুভব করতে এবং স্নেহ অনুভব করতে সক্ষম। এছাড়াও তিনি এটাও প্রমান করে দেন উদ্ভিদের জীবন চক্র রয়ছে এবং তাঁর এই গবেষণা লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি প্রকাশ করেন।
গবেষণা ছাড়াও তিনি একজন লেখক ছিলেন। ১৮৯৬ সালে তাঁর রচিত “নিরুদ্দেশ কাহিনী” বাংলা বিজ্ঞান কথাসাহিত্যের প্রথম প্রধান কাজ ছিল। এই গল্পটি পরে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছিল।
জগদীশ চন্দ্র বসু অধ্যয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবিচ্ছিন্ন চিহ্ন রেখে গেছেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে ক্লকওয়ার্ক গিয়ার্স ব্যবহার করে উদ্ভিদের বৃদ্ধি পরিমাপের জন্য ক্রিস্কোগ্রাফ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন।প্রথম ওয়্যারলেস সনাক্তকরণ ডিভাইস আবিষ্কারেরও তাঁর কৃতিত্ব। তবে জগদীশ চন্দ্র বসু নিজের গবেষণার জন্য জীবদ্দশায় কোনো পেটেন্ট গ্রহণ করেন নি। তাঁর মৃত্যুর কিছুকাল আগে তিনি কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বসু বিজ্ঞান মন্দির।
১৯৩৭ সালের ২৩ শে নভেম্বর, ৭৮ বছর বয়সে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু মৃত্যুবরণ করেন। তবে তিনি রেখে গেছেন কিছু আশ্চর্যজনক তাঁর আবিষ্কার।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor