বিক্রমপুরের কৃতিসন্তান ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা অনিল মুখার্জি জন্মদিন আজ
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(শরৎকাল )।। ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : অনিল মুখার্জি (১০ অক্টোবর ১৯১২-০৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ ইং)সুলেখক,বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। বিক্রমপুরের এই কৃতিসন্তান ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের আন্দামানে জেল বন্দী ছিলেন।পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনেও দীর্ঘ সময় জেলে কাটিয়েছেন।তবুও মানবমুক্তির সংগ্রামে কমিউনিস্ট আন্দোলনে যুক্ত থেকেছেন নির্ভিক চিত্তে।ভূমিকা রেখেছেন আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে।আমৃত্যু কাজ করেছেন শ্রমজীবী মানুষের শোষণমুক্তির জন্য।তিনি নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কলে কারখানায় শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। মানবমুক্তি আন্দোলন তথা মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিশিষ্ট সংগঠক কমরেড অনিল মুখার্জী। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম স্থপতি, শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব অনিল মুখার্জী ব্রিটিশদের শোষণ ও নির্যাতন থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য একের পর এক আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। ১৯৩০ সালে কলেজের ছাত্র থাকাবস্থায় কংগ্রেসের আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেই আন্দোলনেই প্রথম গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর ব্রিটিশ সরকার প্রথমে তাকে মেদিনীপুর ও হিজলি জেলে আটক করে রাখে। হিজলি জেল খুবই কুখ্যাত একটা জেল, এরপরে তাকে আন্দামান জেলে নির্বাসিত করা হয়। আন্দামানে থাকাকালীন সময়ে অনিল মুখার্জী মার্কসবাদে দীক্ষিত হন। ১৯৫৬ সালে কমরেড অনিল মুখার্জী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (গোপন) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বের ৭৫টি দেশের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেন। বস্তুত ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭১ সাল টানা ১৭ বছর তিনি পলাতক ও আত্মগোপনে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও অনিল মুখার্জী অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতিরও তিনি ছিলেন অন্যতম রূপকার।
ক্ষুদরিাম ও কানাইলালের গল্প শুনে তাঁদের মতো দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করার শপথ নেন তিনি। সেকারণে স্কুলে পড়ার সময়েই জড়িয়ে পড়েন বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে। কিশোর বয়সে রাজনীতিতে নামার পর থেকে নিজের জীবনের সুখ-সম্ভোগের চিন্তা অনিল মুখার্জির মনকে কোন দিন পীড়া দেয়নি।
১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে প্রথম কারাবরণ করেন অনিল মুখার্জি। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জের স্বগৃহে অন্তরীণ রাখা হয়। কিন্তু তিনি অন্তরীণ আদেশ অমান্য করে আত্মগোপন করেন। আত্মগোপন থাকাকালীন কুমিল্লার প্রবীণ বিপ্লবী নেতা হরিকুমার চক্রবর্তীসহ পুলিশ কর্তৃক ঘেরাও হয়ে আহত অবস্থায় ধরা পড়েন অনিল মুখার্জি। এসময় তিনি প্রথমে ঢাকা ও পরে মেদিনীপুরের হিজলী বন্দী শিবিরে আটক ছিলেন। জেলে থাকা অবস্থায় সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩০ সালে আন্দামান জেলে প্রেরণ করে। আন্দামান বন্দীদের মরণপণ আন্দোলনের ফলে ১৯৩৮ সালে তিনি মুক্তি পান। তখন কমরেড নেপাল নাগের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। এসময় তিনি নারায়ণগঞ্জের পার্টি কর্মীদের সহায়তায় শীতলক্ষা নদীর দুই পাড়ের সুতাকল ও বস্ত্রকল শ্রমিকদের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৪৬ সালে কমরেড অনিল মুখার্জী নারায়ণগঞ্জে সুতাকল শ্রমিকদের ঐতিহাসিক ধর্মঘট ও জঙ্গি সংগ্রাম পরিচালনা করেন। কিন্তু তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাঁর ওপর এজন্য হত্যার মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। ফলে তিনি আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কমরেড অনিল মুখার্জী নিজ মাতৃভূমি পূর্ব পাকিস্তানেই থেকে যান এবং আত্মগোপনে থেকে কমিউনিস্ট পার্টি ও শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করেন। পূর্বের খুনের মিথ্যা মামলার কারণে ১৯৫১ সালে তিনি ধরা পড়েন। প্রমাণের অভাবে তিনি তখন ফাঁসির সেল থেকে স্থানান্তরিত হন।
খুনের মিথ্যা অভিযোগ থেকে ১৯৫৫ সালে ছাড়া পান কমরেড অনিল মুখার্জি। কিন্তু ওই বছরই পুলিশ ধর্মঘটের যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁকে আবার আত্মগোপনে যেতে হয়। তবে এ অবস্থায়ই তিনি গোপনে দু’বার সোভিয়েত ইউনিয়নে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিনিধি রূপে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সম্মেলনে এবং সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে কমরেড অনিল মুখার্জী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (গোপন) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির গোপনে অনুষ্ঠিত প্রথম কংগ্রেসে তিনি তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়াও ১৯৬৯ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বের ৭৫টি দেশের কমিউনিস্ট পার্টির মহাসম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেন অনিল মুখার্জি। এরপর ১৯৭৩ ও ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় ও তৃতীয় কংগ্রেসে পুনরায় তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
তাঁর লিখা বহু গ্রন্থ এখনো পাঠক মহলে সমাদৃত।।
আজীবন সংগ্রামী এই মানুষটি ১৯৮২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
আমৃত্যু সংগ্রামী এই কিংবদন্তির আজ ১১৩ তম জন্মদিন।স্মরণ করি এবং ফুলেল শ্রদ্ধা জানাই।।