প্রকাশিত : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।।২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(হেমন্তকাল)।।১১ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : লৌহজং প্রতিনিধি : শ্রীনগর প্রতিনিধি : অনলাইন ডেস্ক :
বিক্রমপুরের কৃতিসন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবি===========(চার)========
বিক্রমপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় মোট চার জনের ভেতর তিনজনের বাড়ি শ্রীনগর উপজেলায় আমরা হয়তো শহীদ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ ছাড়া বাকি ৩ জনের সম্পর্কে অনেকেই তেমন জানিনা, আমি চেষ্টা করেছি তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে কিছু তথ্য তুলে ধরার __
শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাক্তার আতিকুর রহমান
শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাক্তার আতিকুর রহমানের পিতার নাম জুলফিকার আহমেদ মাতার নাম আমিরুন্নেছা বিক্রমপুরে শ্রীনগর উপজেলার কোলাপাড়া গ্রামে।
ঢাকার ৫৬ টিপু সুলতান রোডের চেম্বারে বসে রোগী দেখছিলেন চিকিৎসক আতিকুর রহমান। সহযোগী হিসেবে ছিলেন তাঁর ভাতিজা কয়েস রহমান। সেখান থেকেই তাঁদের দুজনকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এরপর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। দিনটি ছিল একাত্তরের ২৬ সেপ্টেম্বর।
শহীদ চিকিৎসক আতিকুর রহমানের জন্ম ১৯৩১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কোলাপাড়া গ্রামে। বাবা মীর জুলফিকার আহমদ ও মা আমিরুন্নেছার ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। সাত বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। শুরু হয় সংসারের টানাপোড়েন। পড়াশোনার জন্য নির্ভর করতে হয় বড় ভাইদের ওপর। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতার বালিগঞ্জ এ জে মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করে ভর্তি হন ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলের এলএমএফ কোর্সে।
আতিকুর রহমান কর্মজীবন শুরু করেন ফরিদপুর জেলা বোর্ডের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার হিসেবে। পারিবারিক প্রয়োজনে একপর্যায়ে সরকারি চাকরি ছেড়ে ঢাকায় এসে নারিন্দায় ৯ নম্বর সাহেব লেনে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। ১৯৫৫ সালে তিনি জাহানারা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ১৯৭০ সালে মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলের এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন তিনি। বাংলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারকগ্রন্থর শহীদ চিকিৎসকদের তালিকায় আতিকুর রহমানের নাম রয়েছে। এ ছাড়া আগামী প্রকাশনীর শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থেও তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী আছে।
আতিকুর রহমানের মেজ ভাইয়ের ছেলে ফরিদুর রহমান বলেন, ‘সে সময় আমরা খুব ছোট ছিলাম। বড় ভাই, বাবা ও চাচাদের কাছে শুনেছি। চাচা কাজ শেষে বাড়ি ফিরেও অসহায় মানুষদের চিকিৎসাসেবা দিতেন। সৎ ও পরোপকারী মানুষ হিসেবেই তিনি পরিচিত ছিলেন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় ব্যাপক গণহত্যা চালায়। প্রাণভয়ে অসংখ্য মানুষ ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আতিকুর রহমান ঢাকাতেই ছিলেন। কোতোয়ালি ও সূত্রাপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়ে তিনি আহতদের চিকিৎসা করতেন। ওষুধ কিনে দিতেন। আর্থিক সহযোগিতা করতেন।
আতিকুর রহমানের ছোট মেয়ে মিমি আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও নানাভাবে সাহায্য করতেন। একাত্তরের ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁর বাবা টিপু সুলতান রোডের জাহানারা ফার্মেসিতে বড় চাচার গৃহপরিচারিকার ছোট বোনকে চিকিৎসা দেন। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ছিল মেয়েটি। তাকে চিকিৎসা দিয়ে ওষুধপথ্য কেনার জন্য কিছু টাকাও দিয়েছিলেন। এটাই ছিল তাঁর শেষ রোগী দেখা।
মিমি বলেন, ‘৭টা ১০ মিনিটে আমরা জানতে পারলাম, বাবা ও কয়েস ভাইকে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। এরপর তাঁদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাবা আমাদের জন্য মাত্র ৮০ টাকা ব্যাংকে রেখে গিয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর মা আমাদের নিয়ে ধানমন্ডিতে নানাবাড়িতে চলে আসেন। নানা এ এস এম রাশেদ অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ ছিলেন। অনেক কষ্টে আমাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাবার আত্মদানের জন্য সমবেদনা জানিয়ে মায়ের কাছে চিঠি এবং দুই হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠি এখনো তাঁদের কাছে আছে।
২০১৮ সালে তাঁদের মা মারা গেছেন। বড় ভাই ওবায়দুর রহমান ব্যবসায়ী। বড় বোন নাদিরা রহমান ও তিনি দুজনেই গৃহবধূ। তাঁরা ঢাকাতেই থাকেন। বাবার জন্য শোক তাঁদের কাটে না। তবে দেশের জন্য তিনি আত্মত্যাগ করেছেন, এটা ভেবে গর্বে বুক ভরে যায়।
তথ্য সূত্রঃ গ্রন্থনা: ফয়সাল হোসেন, মুন্সিগঞ্জ
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
email – bikrampurkhobor@gmail.com