প্রকাশিত : শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(হেমন্তকাল)।।১৭ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক :বিক্রমপুরের আলোকিত মানুষ প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় উপমহাদেশের আধুনিক বাংলা সঙ্গীতের একজন কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী।
আজ স্বনামধন্যা শিল্পী প্রতীমা বন্দোপাধ্যায় এর ৯১-তম জন্মদিনে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
—-বিক্রমপুরের বাহেরক গ্রামের সেই মেয়েটির কথা কি মনে আছে? যার বাবার নাম
মণিভূষণ চট্টোপাধ্যায় আর মায়ের নাম কমলা? তাও চিনতে কষ্ট হচ্ছে! তাহলে
বলা যাক, সেই মেয়েটির নাম প্রতিমা। হ্যাঁ, সুরের জাদুকরী–প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
(জন্ম:২১ ডিসেম্বর ১৯৩৪ : মৃত্যু: ২৯ জুলাই ২০০৪)
বিক্রমপুরেরই মেয়ে। আজো বাঁশ বাগানের মাথার ওপর যখন চাঁদ ওঠে, পুকুরপাড়ে যখন থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে, তখন বেদনা মাখানো মিষ্টি সুরে কে যেন কানে কানে বলে যায়_’মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই’ ! কাজলা দিদি’র প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কি ভোলা যায়!
প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ডিসেম্বর মাসের ২১ তারিখে। সালটা ১৯৩৪। বাবা মণিভূষণ চট্টোপধ্যায়ের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল গাইয়ে হিসেবে। চমৎকার ঠুংরি, দাদরা গাইতেন। ওস্তাদ বাদল খানের শিষ্য। বেশ কিছু গানের রেকর্ডও বেরিয়েছিল তার। হিন্দুস্থান কোম্পানি থেকে তার গাওয়া বাংলা কাব্যগীতি বের হয় ১৯৪৩ সালে। অজয় ভট্টচার্যের কথায় ও শচীন দেব বর্মণের সুরে এর একখানি গান ছিল ‘যৌবনে হায় ফুল দলে পায়’। তবে মাত্র ২৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার।
তখন প্রতিমার বয়স বছরখানেকের মতো। আর যিনি প্রতিমার গর্ভধারিণী, সেই কমলা দেবীরই বয়স ছিল মাত্র ১৮। কন্যাকে কোলে নিয়ে অকূল সাগরে ডিঙা ভাসালেন মা কমলা চট্টোপাধ্যায়। সেই বয়সে মেয়েকে মানুষ করা, সংসার সামলানোর মতো দুই কঠিন দায়িত্ব এসে চাপে তার কাঁধে। তিনি চেয়েছিলেন, মণিভূষণ চট্টোপাধ্যায়ের কন্যাও যেন তার বাবার মতো গান গাইতে শেখে। সংসারে নিত্যদিনের অভাব অনটনের মধ্যেও তিনি একটু একটু করে টাকা জমিয়ে মেয়েকে একটা হারমোনিয়ম কিনে দিয়েছিলেন। প্রাথমিক তালিমটা দিয়েছিলেন তিনি নিজেই। প্রতিমার বয়স পাঁচ বছর হলে তার গান শেখানোর ভার তুলে দেন পণ্ডিত ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের শিষ্য প্রকাশকালী ঘোষালের হাতে।
গান ছিল প্রতিমার রক্তে। আর ছিল মায়াবী কণ্ঠ। প্রকাশকালী সবটুকু উজাড় করে দিয়ে গান শিখিয়েছিলেন প্রতিমাকে। গুরু ভীষ্মদেবের কাছে নিয়েও তিনি পরিচয় করিয়ে দেন প্রতিমাকে। ভীষ্মদেব মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রতিমার গান শুনে।
প্রতিমার বয়স তখন সাত কি আট। বিক্রমপুর থেকে ঢাকা শহরে এসেছেন আত্মীয়বাড়ি বেড়াতে। আত্মীয়রা তো বটেই সে বাড়ির আশপাশের লোকজনও প্রতিমার গান শুনে তাজ্জব। তারাই উদ্যোগ নিয়ে ঢাকা রেডিওতে গান গাইবার ব্যবস্থা করে দেন তাকে। কলকাতা বেতারেও গান গাওয়ার সুযোগ এসে যায় সেই কিশোরী বয়সেই। খুব তাড়াতাড়ি চারদিকে নাম ছড়িয়ে পড়তে লাগল তার। ব্যাপারটা এমন দাঁড়াল যে, গানের জলসা মানেই প্রতিমা।
বিয়ের পর কলকাতায় এক ঘরোয়া আসরে প্রতিমার গান শুনে মুগ্ধ হন সে সময়ের নামকরা সুরস্রষ্টা সুধীর লাল চক্রবর্তী । তিনিই তাকে দিয়ে ১৯৫১ সালে ‘সুনন্দার বিয়ে’ ছবিতে গাওয়ালেন ‘উছল তটিনী আমি সুদূরের চাঁদ’। সুধীর লাল পাকা জহুরি। রত্ন চিনতে তার ভুল হয়নি। প্রতিমার সে গান বাজি মাত করল সহজেই। সে আমলে লোকের মুখে মুখে ফিরত সে গান। এরপর ১৯৫৪ সালে সঙ্গীত বহুল ছবি ‘ঢুলি’তে রাজেন সরকারের সুরে প্রতিমার সব গানই হিট। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, যুথিকা রায়, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের মতো ঝানু শিল্পীর পাশে সসম্মানে জায়গা করে নিলেন নবীনা প্রতিমা। এই ছবিতেই প্রতিমার গাওয়া রাগাশ্রিত ‘নিঙাড়িয়া নীল শাড়ি শ্রীমতী চলে’ তো রীতিমতো ইতিহাস সৃষ্টি করল। রাগাশ্রিত গান কিন্তু ওস্তাদি জাহিরের চেষ্টা নেই। সহজ সাবলীল এই গায়কী বিপুল প্রশংসা কুড়ায় সে সময়। ১৯৫৫ সালে সূচিত্রা-উত্তম অভিনীত বিখ্যাত ছবি ‘শাপমোচনে’ চিন্ময় লাহিড়ীর সঙ্গে গাওয়া ‘ত্রিবেনী তীর্থ পথে কে গাহিল গান’ সম্পর্কেও একই কথা বলা চলে। রাগাশ্রিত কিন্তু কালোয়াতি আড়ম্বর নেই।
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের যুগপুরুষ ওস্তাদ আমীর খানের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে গান গাওয়ার দুর্লভ সুযোগ এল ‘ক্ষুধিত পাশান’ ছবিতে। চলচ্চিত্রটির পরিচালক তপন সিংহ সঙ্গীত পরিচালক প্রবাদপ্রতীম সরোদবাদক ওস্তাদ আলি আকবর খানকে বললেন, রবীন্দ্রনাথের ‘যে রাতে মোর দুয়ার গুলি ভাঙল ঝড়ে’ এই গানের সুর নিয়ে কিছু একটা করা যায় কিনা! আলি আকবর তখনই তৈরি করলেন সেই বিখ্যাত গান ‘ক্যায়সে কাটে রজনী ইয়ে সজনী’। এই গানেই ওস্তাদ আমীর খানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। অত বড় ওস্তাদের সঙ্গে গলা মেলানো চাট্টিখানি কথা নয়। দুরুদুরু বুকে আমীর খানের পাশে মাইক্রোফোনের সামনে বসলেন প্রতিমা। তবে তার সহজ সাবলীল কণ্ঠ উৎরে গেল ভালভাবেই। এরপর ১৯৫৪ সালে পণ্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘যদু ভট্ট’ ছবিতে গাইলেন ওয়াজিদ আলি শা’র সুর দেয়া ইতিহাস সৃষ্টিকারী সেই গান ‘বাবুল মোরা’। এই গানই প্রথম বিএফজে পুরস্কার এনে দেয় তাকে।
অত্যন্ত নিঃসঙ্গ অবস্থায় কেটেছে তার জীবনের শেষ দিকটা। মানসিক অসুস্থতাও দেখা দিয়েছিল। মৃতু্র বছর কয়েক আগে এই অবস্থাতেই ১৯৯৬ সালে কলকাতার রবীন্দ্র সদনে আয়োজিত এক সঙ্গীত উৎসবে তাকে ধরে নিয়ে এলেন নির্মলা মিশ্র। নির্মলার হাত ধরে আটপৌরে শাড়ি পরা প্রবীণা এই শিল্পী ধীরে ধীরে মঞ্চে প্রবেশ করতেই করতালিতে ফেটে পড়ে গোটা আসর। একে একে গাইলেন ফেলে আসা দিনের অসাধারণ সেই সব গান। আশ্চর্য মাদকতা জড়ানো কণ্ঠে বয়সের ছাপ নেই বিন্দুমাত্র। দীর্ঘ দিন পর কলকাতার শ্রোতারা প্রতিমাকে এভাবে পেয়ে আপ্লুত হযে ওঠেন সেদিন। শিহরণ জাগানো অজানা এক অনুভূতিতে সেদিন থরথর করে কেঁপেছিল রবীন্দ্রসদন। পরদিন পত্রিকায় পত্রিকায় প্রতিমা বন্দনাতেই তার অসধারণ গায়কীর প্রমান মেলে।
২০০৪ সালের ২৯ জুলাই শেষ বয়সের সব জ্বালা যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন তিনি ।
(গুগল সহায়তায় সম্পাদিত)
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
email – bikrampurkhobor@gmail.com