প্রকাশিত: শুক্রবার,১৭ ডিসেম্বর ২০২১ইং।। ৩রা পৌষ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)।। ১২ জামাদিউল আউয়াল ১৪৪৩ হিজরী।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ফরাসি সাংবাদিক অ্যান ডি হেনিং। এ সময় তিনি বিধ্বস্ত দেশ আর বাঙালিদের দৃঢ়তার ছবি তার ক্যামেরায় তুলে আনেন। তার ক্যামেরায় উঠে আসে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, শরণার্থীদের ছবি। তার লক্ষ্য ছিল, বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরা। মুক্তিযুদ্ধের সেইসব দুর্লভ ছবি প্রথমবারের মতো দেখার সুযোগ পেলো বাংলাদেশের মানুষ।
আজ শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ‘উইটনেসিং হিস্ট্রি ইন দ্য মেকিং ফোটোগ্রাফস বাই অ্যান ডি হেনিং’ শীর্ষক প্রদর্শনী।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ফরাসি সাংবাদিক অ্যান ডি হেনিংয়ের তোলা বঙ্গবন্ধু ও যুদ্ধকালীন ৩৮টি ছবি প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমিতে।
দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় ৫০ বছর আগে ফরাসি সাংবাদিকের তোলা অপ্রকাশিত সেসব আলোকচিত্র প্রদর্শনীর জন্য এনেছে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন।
১৯৭১ সালে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের স্থিরচিত্র ধারণের জন্য প্রথমবার ফ্রান্স থেকে এসেছিলেন ২৫ বছর বয়সী ফটোসংবাদিক অ্যান ডি হেনিং।
মুক্তিকামী বাঙালি যেমন অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনি ক্যামেরার লেন্সকেই মুক্তি সংগ্রামের অস্ত্র করে তুলেছিলেন এই আলোকচিত্রী।
পাকিস্তানি সেনাদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে কুষ্টিয়ার পথে-প্রান্তরে চষে বেড়িয়েছেন তিনি। তার তোলা ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা পৌঁছে যায় ফ্রান্সসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে
সাদাকালোয় তোলা সেসব ছবিতে ধরা পড়েছে বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খা, লড়াই, সাহস আর আত্মদান। উঠে এসেছে মানুষের দুর্দশা, শরণার্থী জীবন ও পাকিস্তান বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ।
শুধু তাই নয় স্বাধীনতার পর হেনিং আবারও ফিরে আসেন বাংলাদেশে। ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু ছবিও ধরে রেখেছে তার ক্যামেরা।
মূল উদ্দেশ্যই ছিলো মুক্তির সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধূকে অবলোকন। কেমন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাকে সোনার বাংলায় রুপান্তরিত করার স্বপ্ন দেখছেন জাতির জনক।
সংগ্রামের সাদাকালোর ছবি শেষে এবার স্বপ্নের মতো রঙিন ছবিতে ধরা পড়েছেন বঙ্গবন্ধু। উজ্জল সেইসব ছবি ধারণের ৫০ বছর পর বাংলাদেশে প্রকাশ পেল।
গোপন ধন উদ্ধারের মতো ৭৫ বছর বয়সী হেনিংয়ের কাছ থেকে সেসব ছবি প্রদর্শণের জন্য নিয়ে এসেছে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণবয়ন্তী উপলক্ষে হেনিংয়ের তোলা দুর্লভ সেসব ছবি নিয়ে শুক্রবার বিকালে শুরু হয়ে প্রদর্শনী- ‘উইটনেসিং হিস্ট্রি ইন দ্য মেইকিং’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের এসব দূর্লভ ছবি আগামী প্রজম্মকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরো আগ্রহী করে তোলবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, মাত্র ২৫ বছর বয়সে এ্যান ডি হেনিং বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের কাছে ছুটে এসে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি তোলেন। ১৯৭২ সালে আবার বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের ছবি তোলেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
দর্শনার্থী ও শিল্প রসিকরা বলছেন, অর্ধ শতাব্দী আগে তোলা এই ছবিগুলো কালের সীমা পেরিয়ে সমসাময়িক হয়ে উঠেছে। পরিণত হয়েছে গৌবর ও বেদনার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিলে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে ৭৬ বছর বয়সী হেনিং প্রদর্শনীতে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও ভিডিও বার্তায় স্মৃতিচারণ করেছেন একাত্তরের সেই দিনগুলির।
আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এবং সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই প্রদর্শনী চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রদর্শনী দেখছেন উপস্থিত দর্শনার্থীরা।
প্রদর্শনীতে মোট ৩৮টি ছবি স্থান পেয়েছে। এরমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ছবির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ১১টি ছবি, ভিয়েতনাম যুদ্ধের ৯টি ছবি ও তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ মূহূর্তের ছবি স্থান পেয়েছে। রুকমিনী রেকভানা কিউ চৌধুরীর নির্দেশনা ও পরিচালনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এই প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে সাধারণ দর্শকদের জন্য। প্রদর্শনী চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।