প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার,৪ জুলাই ২০২৪ ইংরেজি, ২০ আষাঢ়,১৪৩১বাংলা(বর্ষা কাল),২৭ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি
বিক্রমপুর খবর : নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিনা আলম মুন্সিগঞ্জের রামপালে রঘুরামপুরে বিক্রমপুরী বৌদ্ধ বিহার, টঙ্গিবাড়ি উপজেলা নাটেশ্বরে নাটেশ্বর বৌদ্ধ মন্দির কমপ্লেক্সে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন এবং শেষে শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাসুর গ্রামে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
আজ ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে প্রথমে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের রঘুরামপুরে বিক্রমপুরী বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেন। মোষলধারে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তিনি বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেন। পরে সাইড মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন।
এরপর টঙ্গিবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে নাটেশ্বর বৌদ্ধ মন্দির কমপ্লেক্সে চলমান খনন কাজ পরিদর্শন করেন। বিক্রমপুরী বৌদ্ধ বিহার সম্পর্কে এবং নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক খননের বিশদ বিবরণ উপস্থাপন অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। এখানেও খনন কাজ পরিদর্শন করার সময় অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিনা আলম এঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে পরিদর্শন করেন। সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রত্নসম্পদ ও সংরক্ষণ) মোঃ আমিরুজ্জামান, আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা, সহকারী পরিচালক (প্রকাশনা)মোঃ মহিদুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফেরদৌস ওয়াহিদ, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: আতাউর রাব্বী। টঙ্গিবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসলাম হোসাইন, টঙ্গীবাদী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ববি মিতু, অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের সহধর্মিণী অধ্যাপক আফরোজা আক্তার, বিক্রমপুর জাদুঘর এর কিউরেটর এবং অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন আহমেদ এবং মুন্সিগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা বৃন্দ।
শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাসুর গ্রামে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন। প্রথমেই শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারফ হুসাইন ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিনা আলমকে। পরে মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে আগত সকল সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বিক্রমপুর জাদুঘরে কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারিতে প্রদর্শিত বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নির্ভর বর্ননা করেন। বিক্রমপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন।
উন্মুক্ত বিক্রমপুর জাদুঘরের পুরো এলাকা সবাইকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে দেখেন এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। পরিশেষে মন্তব্য বইয়ে মূল্যবান মতামত লিপিবদ্ধ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে রামপালের রঘুরামপুরে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার, টঙ্গিবাড়ীর নাটেশ্বরে এক থেকে দেড় হাজার বছরের পুরোনো একটি বৌদ্ধনগরী আবিষ্কার করা হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রায় ৩ মিটার গভীর পর্যন্ত মানব বসতির চিহ্ন পাওয়া যায়।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ঐতিহ্যর নিদর্শন মাটির নিচ থেকে আবিষ্কার করেছেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক সংগঠন আর প্রত্নতত্ত্বের খনন কাজ করেছেন ঐতিহ্য অন্বেষণ নামে একটি প্রতিষ্ঠান যার কর্ণধার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।
সামাজিক সংগঠন ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’ মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাড়িখাল ইউনিয়ন এর উত্তর বালাসুর গ্রামের জমিদার যদুনাথ রায়ের ১৯৬৫ সাল থেকে পরিত্যক্ত বাড়িতে “বিক্রমপুর জাদুঘর” প্রতিষ্ঠা করে। সরকারকে বছরে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা লীজের অর্থ পরিশোধ করে জাদুঘরটি পরিচালনা করে আসছে।
২০১০ সালের ২৯ মে জাদুঘর ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এম.পি।
২০১৩ সালের ২৮ মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ বিক্রমপুর জাদুঘর-(BIKRAMPUR MUSEUM) ‘-এর শুভ উদ্বোধন করেন।
২০১৪ সালের ২০ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি জাদুঘরটির দ্বারোদঘাটন করেন।
পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছে অনুযায়ী বাংলাদেশে একমাত্র “নৌকা জাদুঘর” ( Boat Museum) উদ্বোধন করেন।
প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা জুড়ে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছে জাদুঘর এবং গেস্ট হাউজ বা পান্থশালা ।
বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রতিদিন শত শত দর্শক আসছে জাদুঘর পরির্দশন করতে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে বড় বড় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়ে থাকে।
বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের বাকি ৬ দিন জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্যে দুপুরে ১ ঘন্টা বিরতি দিয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে। #