পাটগ্রামে হত্যা এবং মৃতদেহ পোড়ানোর ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজন শনাক্ত -বলছে পুলিশ

0
3
পাটগ্রামে হত্যা এবং মৃতদেহ পোড়ানোর ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজন শনাক্ত -বলছে পুলিশ

প্রকাশিত:শনিবার,৩১অক্টোবর ২০২০ইং ।। ১৫ই কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)।। ১৩ই রবিউল আউয়াল,১৪৪২ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পুলিশ জানিয়েছে, পাটগ্রাম উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে একজন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর তার মৃতদেহ আগুন দিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন হিসাবে চিহ্নিত কয়েকজনের নাম দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো, অগ্নিসংযোগ এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে তিনটি মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, মৃতদেহ পোড়ানোর কারণে দেহাবশেষ যেটুকু পুলিশ উদ্ধার করেছে, তার ময়নাতদন্ত করা হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই দেহাবশেষ শনিবার নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

বৃহস্পতিবারের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর পাটগ্রামের পরিস্থিতি থমথমে।

গোটা পাটগ্রাম উপজেলায় পুলিশ র‍্যাবের পাশাপাশি সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপি মোতায়েন রয়েছে।

পাটগ্রামের বুড়িমারী ইউনিয়নে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে পিটিয়ে হত্যা করে একজন ব্যক্তিকে। তারা নিহত ব্যক্তির মৃতদেহও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ঘটনার পরদিন শুক্রবার স্থানীয় পুলিশ বলেছে, ঘটনায় অনেক মানুষের অংশগ্রহণ থাকলেও কিছু লোক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল- এমন তথ্য তারা পেয়েছে।

পাটগ্রামে নৃশংস হামলায় নিহত শহীদুন নবী।
ছবির উৎস,TOUHIDUNNABI
ছবির ক্যাপশান,
পাটগ্রামে নৃশংস হামলায় নিহত শহীদুন নবী।

পাটগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুমন কুমার মহন্ত বলেছেন, লোকজনের সাথে কথা বলে এবং ঘটনার ভিডিও দেখে পুলিশ সন্দেহভাজন কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে তারা সন্দেহভাজনদের পরিচয় এবং সংখ্যা প্রকাশ করতে চান না।

“আমরা মোটামুটি শনাক্ত করতে পেরেছি। এখানে তো ধর্মীয় একটা সেন্টিমেন্ট সব সময়ই থাকে। যারা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করে, তারা এই সেন্টিমেন্টের সুযোগ নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে। এরকম একটা কিছু আছে। এখন আমরা ভিডিও এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মোটামুটি কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে সংখ্যাটা বলছি না।”

বুড়িমারীতে নিহত ব্যক্তির নাম আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন নবী। তার বাড়ি রংপুরে। তিনি রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন।

বছর খানেক সময় ধরে চাকরি না থাকায় দুই সন্তানের পিতা এই ব্যক্তি কিছুটা মানসিক সমস্যায় ছিলেন বলে তার পরিবার বলেছে।

পরিবারটির সদস্যদের শুক্রবার রংপুর থেকে পাটগ্রামে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ কর্মকর্তারা কথা বলেছেন।

কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার পর নিহতের চাচাতো ভাই সাইফুল আলম বিপ্লব বলেছেন, এই আলোচনার ভিত্তিতেই তারা পরিবারের পক্ষ থেকেই হত্যা মামলা দায়ের করেন।

“আমরা হত্যা মামলা করেছি। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।”

নিহত শহীদুন নবীর পরিবার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুত বিচার চেয়েছে।
ছবির উৎস,TAUDIDUNNABI
ছবির ক্যাপশান,
নিহত শহীদুন নবীর পরিবার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুত বিচার চেয়েছে।

ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিভিন্ন গোয়ন্দাসংস্থা সেখানে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

যে মসজিদে গত বৃহস্পতিবার আছরের নামাজের পর নিহত ব্যক্তিকে ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই বুড়িমারী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম ও খাদেমের বক্তব্য নিয়েছেন লালমনিরহাট জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

মসজিদটির খাদেম মো: জোবেদ আলী বিবিসিকে বলেছেন, মসজিদের ভিতরে তাদের কয়েকজনের সাথে নিহত ব্যক্তির কথা কাটাকাটি হয়েছিল। কিন্তু কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা অল্প সময়েই ছড়িয়ে পড়েছিল।

“ওরা দুইজন আসি পেছনের কাতারে নামাজ পড়ছিল- আছরের নামাজ। নামাজের পর কয়েকজন মুসল্লী ছিল, তখন এই ঘটনা ঘটলো। ঐ লোকটা যখন ভেতরে আসলো আমাদের সাথে নানা কথা বলছিল, আমি বললাম যে, ভাই আপনি পরিচয়টা দেন। উনি বললো যে, আমি র‍্যাব। আমি এখানে অস্ত্র খুঁজতে এসেছি। উনি তখন র‍্যাকে (বই রাখার তাক)রাখা কোরআন শরীফের পাশে পা দেয়, সেখানে পা দিয়ে র‍্যাকে অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশি করতেছিল। তখন একজন মুসল্লী এসে তাকে থাপা দিয়ে ধরে বাইরে নিয়ে যায়।”

মো: জোবেদ আলী আরও বলেছেন, “কোরআন শরীফের পাশে পা দিছিলতো, জিনিসটা ছড়ায়ে পড়ে, সেজন্য ঐ ঘটনা ঘটে। আর ঘটনার সময় আমি এখান থেকে শুনছি শুধু, আল্লাহু আকবর, নারায়ে তাকবির। আর ওদিকে যে কী হয়েছে, তা আমি দেখি নাই।”

তবে নিহত ব্যক্তি নিজেকে র‍্যাবের সদস্য দাবি করেছিলেন বলে যে অভিযোগ এসেছে, সে ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ বলেছে, নিহত ব্যক্তি পুলিশ বা র‍্যাবের সাথে কোনভাবেই জড়িত ছিলেন না।

কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের ভাষায় নৃশংস একটি হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতি তৈরির পেছনে মুল বিষয় ছিল পা দিয়ে কোরআন শরীফ অবমাননা করার অভিযোগের গুজব। এখন এর সাথে নানারকম বক্তব্য স্থানীয় লোকজন দিচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।

লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেছেন, “নিহতের সাথে যিনি ছিলেন, সেই ব্যক্তির সাথে আমরা কথা বলেছি। আর মসজিদের ভিতরে যারা ছিলেন, তাদের সাথেও আমরা কথা বলেছি। আসলে পরস্পরবিরোধী কয়েকটা কথা আমরা পাচ্ছি। প্রাথমিকভাবে আমরা যেটা শুনেছি যে, উনি নাকি র‍্যাব পরিচয় দিয়েছেন। আর গুজবটা ছড়িয়েছে যে, কোরআন শরীফে পা দেয়া হয়েছে। এখন আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখছি। সবকিছু তদন্ত করে সঠিক বিষয়টা আমরা বের করবো।”

বুড়িমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আবু সাইদ নেওয়াজ নিশাত জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তি এবং তার সাথে থাকে আরেক ব্যক্তি-দু’জনকে রক্ষার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শত শত মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ভাঙচুর করে, অগ্নিসংযোগ করে দু’জনের মধ্যে একজনকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।

তিনি উল্লেখ করেছেন, সেজন্য ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তারা ১৫/১৬ জনের সুনির্দিষ্ট নাম দিয়ে মামলা করেছেন।

আর পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হচ্ছে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে।

এই দু’টির সাথে পরিবার দায়ের করেছে হত্যা মামলা।

মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে কয়েকজনের নাম দেয়া হলেও অজ্ঞাতনামা অভিযুক্তও রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..

‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন