প্রকাশিত: বুধবার,২৩ জানুয়ারি ২০১৯।
বিক্রমপুর খবর::নিজস্ব প্রতিনিধি:আজ (২৩ জানুয়ারি,বুধবার)বসছে ষষ্ঠ স্প্যান পদ্মা সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নাম্বার পিয়ারের ওপর ধূসর রঙের স্প্যানটি বসানো হবে জাজিরা প্রান্তে এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর একটানা ৯০০ মিটার প্রায় ১ কিলোমিটার অংশ দৃশ্যমান হবে। এছাড়া মাওয়া প্রান্তে অপর একটি স্প্যান দুটি পিলারের ওপর বসানো রয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে আজ এক কিলোমিটারেরও বেশি দৃশ্যমান হবে পদ্মা সেতু।
গতকাল মঙ্গলবার (২২জানুয়ারি)সকাল সাড়ে ৯টায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন হাজার ১৪০ টনওজনের ষষ্ঠ স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার)৬এফ স্প্যানটি নিয়ে জাজিরার উদ্দেশে মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে রওনা দেয় তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার শক্তিশালী ভাসমান ক্রেন‘তিয়ান ই’।
মূল সেতু,নদীশাসন,সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়াসহ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ, নদীশাসন কাজের শেষ হয়েছে ৫০ শতাংশ। এছাড়া সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। সেতুর ২৬১টি পাইলের মধ্যে ১৯১টি পাইলের কাজ পুরোপুরি শেষ এবং ১৫টি পাইলের আংশিক কাজ শেষ হয়েছে। মোট পিয়ার ৪২টি। এর মধ্যে ১৬টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। ১৫টি পিয়ারের কাজ চলছে। মোট স্প্যান ৪১টি। ইতোমধ্যে ৬টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। এতে সেতুর ৯০০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হবে। এছাড়া ১৭টি স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে। আরও ১৮টি স্প্যানের প্রস্তুত কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো.শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, মূল সেতুর অগ্রগতি ভালো,এ পর্যন্ত ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত পুরো প্রকল্পে ৬৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর জাজির প্রান্তে ৫টি স্প্যান বসানো হয়েছে। ষষ্ঠ স্প্যানটি আজ বুধবার বসানো হবে। এছাড়া ১৪ পিয়ারের পাইলিং কাজ চলছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলোর পাইল শেষ করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান,২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যান,১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর তৃতীয় স্প্যান, ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের ওপর চতুর্থ স্প্যান এবং সবশেষ গত ২৯ জুন ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে। পাঁচ স্প্যানের দৈর্ঘ্য হয় ৭৫০ মিটার। বর্তমানে ৪১-৪২ নাম্বার পিয়ারে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। এছাড়া গত বছরে থেকেই সেতু ১৪টি পিয়ারের পাইলিং করা হচ্ছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর পিলার নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় মাওয়া প্রান্তে স্প্যান বসানো যাবে না। এখন ৬ ও ৭ নম্বর পিয়ার নির্মাণকাজ শেষ হলে মাওয়ায় স্প্যান বসানো শুরু হবে। মাঝ নদীতে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলার দুটিও প্রস্তুত করা হয়েছে।
পিয়ার/খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে,এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট পিয়ারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতিটি পিয়ারে করা হয়েছে ছয়টি করে পাইল। একটি থেকে আরেকটি পিয়ারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই নির্মাণ করা হচ্ছে সেতু। ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। তবে কাঁদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ১৪টি পিয়ারের মধ্যে ১টি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেতুর ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫ পিয়ারে ৭টি করে পাইলিং করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৪টি পিয়ারের পাইলিং কাজ চলছে। স্প্যানের মতো পিয়ার নির্মাণের কাজও বেশ দ্রুত চলছে। মূল নদীতে ৪০টি পিয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি পিলারের নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ১৪টি পিয়ারের কাজ আগামী মার্চ মাসের শেষ হবে। বাকি ১১টি পিয়ারের পাইল ড্রাইভের কাজ চলছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে চলতি বছরের মধ্যে স্প্যান বসানোর কাজ শেষ করা হবে।পুরো সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। একটি থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। সপ্তম স্প্যানটি ৩৬ ও ৩৫ পিয়ার দুটিতে বসানো হবে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আরও পাঁচটি স্প্যানের ৯০ শতাংশ প্রস্তুতের কাজ শেষ হয়েছে। এ মাসের মধ্যে এসব স্প্যান প্রস্তুত হয়ে যাবে। এই স্প্যানগুলো আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বসানো হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট পিয়ারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতিটি পিয়ারে করা হয়েছে ছয়টি করে পাইল। একটি থেকে আরেকটি পিয়ারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই নির্মাণ করা হচ্ছে সেতু। ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে।
পিয়ার ও স্প্যানের পাশাপাশি সেতুতে রেলপথের জন্য স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। দুটি রেলওয়ের স্ল্যাব বসানো শেষ। আগামী মাসে শুরু হবে ২২ মিটার প্রস্থের রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। পদ্মা সেতুর স্প্যানের ওপরে স্ল্যাব তৈরি কাজ এগিয়ে চলছে। রোডওয়ে বক্স স্ল্যাব ২৮টি সম্পন্ন হয়েছে। নানা সাইজের এই বক্স স্ল্যাব প্রয়োজন হবে ৩ হাজার ৫০টি। এই স্ল্যাবের ওপর দিয়েই চলবে গাড়ি। কুমারভোগ ওয়ার্কসপের উত্তর পাশে এই স্ল্যাব তৈরি হচ্ছে। আর নিচের তলার ট্রেনের জন্যও সমপরিমাণ স্ল্যাব তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সাড়ে ৫শ’র বেশি ট্রেন ওয়ে বক্স স্ল্যাব তৈরি করা হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্রে জানায়।
সূত্র জানায়, বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল।পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।