ড. নূহ-উল-আলম লেনিন এর ৭৫তম জন্মদিন আজ

0
75
ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। ছবিটি তুলেছেন নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল

প্রকাশিত: শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১ইং।। ৪ঠা বৈশাখ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ(গ্রীস্মকাল)।৪ রমজান ১৪৪২ হিজরী

বিক্রমপুর খবর: অনলাইন ডেস্ক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূহ-উল-আলম লেনিন: রাজনীতিবিদ, কবি, লেখক ও গবেষক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুখপত্র মাসিক উত্তরন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য। সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তাঁহার বর্ণাঢ্য জীবনের ৭৪ বছর পূর্ণ করলেন আজকের এই দিনে।

ড. নূহ-উল-আলম লেনিন ঘটাকরে জন্মদিন পালন করা তিনি একেবারেই পছন্দ করেন না। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের দপ্তর ও পরিসম্পদ সম্পাদক জানান –

” আমরা তাঁহার ছায়া সঙ্গীরা ঘ্যানঘ্যান করার কারনে আর আটকাইয়া রাখতে পারেন না। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের লৌহজং কেন্দ্র থেকে সূর্য উঠার আগেই ঐ কেন্দ্রের সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের নেতৃতে একদল হাজির হয় ফুল আর নাগের হাটের মিষ্টি নিয়ে, মুন্সিগঞ্জ কেন্দ্রের সাধারন সম্পাদক আবু হানিফের নেতৃতে আরেক দল এভাবে শ্রীনগর, সিরাজদিখান ও টংঙ্গিবাড়ি কেন্দ্রের সংগঠনের কর্মীরা ফুলেল শুভেছা জানাতে হাজির হয় আর আমরা যারা ঢাকায় থাকি বিশেষ করে কেন্দ্রীয় পর্ষদের যারা আছেন তাহারাসহ সকলেই উপস্থিত থাকি।

সাথে যুক্ত হন সারাদিন ফাঁকে ফাঁকে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, কবি সাহিত্যিক, তাঁহার বন্ধুবান্ধব, রাজনৈতিক সহকর্মী, বিভিন্ন সংগঠন আর পরিবারের সদস্যরা মিলে খুবই সাদামাটাভাবে জন্মদিন পালিত হয় এই নির্লোভ মানুষটির কলাবাগানের বাসায়।

এভাবেই আমারা প্রতি বছর আজকের এইদিনে ১৭ এপ্রিল সকালে তাঁহার বাসায় জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে হাজির থাকলেও, এবারে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত, ঘরের বাহিরে যেতে পারছি না আমরা কেউ।

এখন চলছে সারা বাংলাদেশে লকডাউন তাই এবারে যার যার ঘরে বসেই আমরা সকলেই তাঁহাকে ৭৫তম শুভ জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাই। ”

বিক্রমপুর খবরে’র পক্ষ থেকে আপনার ৭৫তম শুভ জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করছি। আপনি আমাদের গর্ব-বিক্রমপুরের গর্ব আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

নূহ-উল-আলম লেনিনের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৭ এপ্রিল এক রাজনৈতিক পরিবারে লৌহজং উপজেলার রানী গাঁও গ্রামে। পরে তাহার পরিবার রানী গাঁও গ্রাম থেকে স্হান্তরিত হয়ে কনকসার গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তার বাবা স্কুলশিক্ষক আবদুর রহমান মাস্টার ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মা মোমেনা খাতুন ছিলেন কৃষক আন্দোলনের কর্মী।

১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন-ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টির বিশেষ গেরিলা বাহিনী সংগঠিত করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ছাত্রসমাজের আন্দোলনে নেতৃত্বর ভূমিকা পালন করেন। পঁচাত্তর পরবর্তীকালে নূহ-উল-আলম লেনিনকে মোশতাক-জিয়া-এরশাদের আমলে দীর্ঘ দিন আত্মপোগনে থাকার পাশাপাশি কারা নির্যাতনও ভোগ করতে হয়েছে। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং অবিভক্ত সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য।

নূহ-উল-লেনিন ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়। পরবর্তীতে তিনি তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, পরের কাউন্সিলে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ২০১৬ সালের কাউন্সিলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। ১/১১ পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে নূহ-উল-আলম লেনিন রাজনীতিতে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। স্বৈরাচারী সরকারের জেল, জুলুম, হুলিয়া, অত্যাচার-নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ভয়ে যখন অনেক ছোট দলের অনেক বড় নেতা কিংস পার্টিতে যোগদান করেছেন। কিংবা চামড়া বাঁচাতে বড় দুই দলের অনেকেই সংস্কারপন্থী সেজে মাইনাস-টু ফর্মুলা মেতেছিলেন। ঠিক সেই সময়ে নূহ-উল-আলম লেনিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অফিসে নিয়মিত উপস্থিত থেকে বাতি জ্বালিয়েছেন। এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনকে সুদৃঢ় করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বস্থানীয়দের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন। পাশাপাশি ওই সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় স্বৈরচার সরকারের গণতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনামূলক কলাম লিখেছেন।

নূহ-উল-আলম লেনিন একাধারে রাজনীতিবিদ, গবেষক, প্রাবন্ধিক কবি ও কলামিস্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী একাধিক কমিটিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহার রচনা এবং দলের ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচি প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। দীর্ঘ ১১ বছর যাবৎ তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মুখপত্র ‘উত্তরণ’-এর প্রকাশক ও সম্পাদক। একই সঙ্গে তিনি দলীয় অনলাইন ‘উত্তরণ বার্তা’-র সম্পাদক এবং প্রকাশক। প্রায় দুই দশকের অধিককাল ধরে তিনি সম্পাদনা করছেন মুক্তচিন্তার সাময়িকী ‘পথরেখা’।

নূহ-উল-আলম লেনিন পৌড় বয়সে ২০১৪ সালে লেনিন পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে। তার গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ‘বাঙালি সমাজ ও বাংলা সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ: মূল প্রবণতা, পুনঃপাঠ ও পুনর্মূল্যায়ন’।

তার প্রকাশিত উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- বাঙালি সমাজ ও সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদ, মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু, শেখ মুজিবের রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতা জীবন, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির স্বপ্ন, দুই খণ্ডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও নির্বাচিত দলিল, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: প্রতিবাদের প্রথম বছর, আওয়ামী লীগ বদলালে বাংলাদেশ বদলাবে। তিনি প্রায় ২ ডজনের অধিক বই সম্পাদন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেযোগ্য হচ্ছে- ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় ও বাঙালির কলঙ্কমোচন, দুই খণ্ডে জননেত্রী শেখ হাসিনার ১০০ নির্বাচিত ভাষণ, সমুখে শান্তি পারাবার, তেভাগা সংগ্রাম, দুঃশাসনের চার বছর : সংকট ও উত্তরণের পথ, বাংলাদেশের নগরায়ন ও পরিবর্তনশীল গ্রামজীবন, চলচ্চিত্রের চালচিত্র, প্রসঙ্গ : নারী নানা প্রেক্ষিত, চিত্রকলা ও স্থাপত্য : ঐতিহ্য আধুনিকতা ও শিল্পজিজ্ঞাসা এবং শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে প্রতিবাদী কবিতার সংকলন : গণতন্ত্র মুক্তি পাক। প্রকাশিত উল্লেখ্যোগ্য কাব্যগ্রন্থ- একটি অখণ্ড পৃথিবীর জন্য, পোড়া মাঠে চৈত্রের ফসল, স্বপ্ন করপুটে, অনেকদূর যেতে হবে, ভালবাসা হিসেব জানেনা ও আকাশের সিঁড়ি অন্যতম।

সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন- এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন গড়ে তুলেছেন- বিক্রমপুর জাদুঘর, বঙ্গীয় গ্রন্থ জাদুঘর ও জ্ঞানপীঠ স্বদেশ গবেষণা কেন্দ্র। ২৮ মে ২০১৩ বিক্রমপুর জাদুঘরের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে তার নেতৃত্বে পরিচালিত প্রত্মতাত্ত্বিক গবেষণা ও উৎখননে বিক্রমপুরে আবিস্কৃত হয়েছে নবম-দশম শতাব্দীর বৌদ্ধ বিহার, বৌদ্ধ মন্দির কমপ্লেক্সসহ বেশ কিছু প্রত্মত্ত্বাতিক নিদেশন। তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান- ঐতিহ্য অন্বেষণ-এরও অন্যতম ট্রাস্টি এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।

দল-মত নির্বিশেষে নূহ-উল-আলম লেনিন একজন প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আদর্শবান রাজনীতিবিদ। চলনে অতি সাধারণ হলেও বলনে ঋদ্ধ মেধাবী টিভিকথক। অনেকে তার দীক্ষায় দিক্ষিত হয়ে বনে গেছেন তার অনুসারী। অনেকের কাছেই তিনি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার বাতিঘর, রাজনৈতিক আদর্শ-সততা প্রতীক। মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেও অনেকেই প্লট-ফ্ল্যাট-নগদ টাকা, চাকরি দিয়েছেন। তবে নূহ-উল-আলম লেনিনকে যারা চিনেন, তাদের কাছে এই উপহার সততা ও কর্মনিষ্ঠার বড় এক স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রী স্বপ্রণোদিত হয়েই নূহ-উল-আলম লেনিনকে এই ফ্ল্যাট এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। কারণ শত কষ্টের মধ্যে লেনিন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সতীর্থ পরম হিতাঙ্ক্ষী শেখ হাসিনার কাছে কখনো কিছু চাননি। একবাক্যে নূহ-উল-আলম লেনিন সত্যাশ্রয়ী মানুষ হিসেবে অনেকের কাছেই অফুরন্ত অনুপ্রেরণার উৎস।

দুই কন্যাসন্তানের জনক লেনিনের স্ত্রী অধ্যাপিকা কাজী রোকেয়া সুলতানা সাবেক ছাত্রনেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও নারীনেত্রী। বড় মেয়ে সুর্বণা সেঁজুতি টুসি একজন আলোচিত চলচিত্রকার, নাটক-সিনেমার খ্যাতিমান স্ক্রিপ রাইটার। ছোট মেয়ে পুষ্পিতা পৃথ্বী একজন অর্থনীতিবিদ।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..                                                                                                

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।

আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন।   

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন