প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার,৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ইং ।। ১৬ মাঘ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, চলতি বছর (২০২০) জুলাই মাসের মধ্যে পদ্মাসেতুর সবগুলো স্প্যান (স্টিলের কাঠামো) বসানো সম্পন্ন হবে।
গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
সংসদে প্রশ্নোত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২২টি স্প্যান এরই মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ১৯টি আগামী জুলাইয়ের মধ্যে স্থাপন করা হবে।
গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজের ভৌত অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ। নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৬৬ শতাংশ। আগামী বছরের জুন মাসে এ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সৈয়দা রুবিনা আক্তারের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আন-পার্সোনালাইজড ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ডের স্বল্পতার কারণে স্বাভাবিক গতিতে লাইসেন্স কার্ড প্রিন্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজনে (ভিসা/বিদেশ যাত্রা/চাকরির আবেদন) দৈনিক নির্ধারিত সিলিং অনুযায়ী লাইসেন্স কার্ড প্রিন্ট ও সরবরাহ চলমান আছে।
তিনি আরও বলেন, আন-পার্সোনালাইজড কার্ডের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র চলমান আছে। এটি সম্পন্ন হলে প্রত্যাশীদের যথাসময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, পদ্মাসেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ৪১ টি স্প্যান দিয়ে তৈরি হবে এই সেতু। ২৩ জানুয়ারি এই ৪১টির মধ্যে ২২টি স্প্যানই বসে গেছে। আর এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর প্রায় অর্ধেক।
মোট ৪২ টি পিলারের মধ্যে ৩৬টি পিলারের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে আর মাত্র ৬ টি পিলার (৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭, এবং ২৯ )। এই ৬টি পিলারের কাজ শেষ হলেই দেখা যাবে পুরো পদ্মাসেতু।
সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জটিল ছিল ৬ ও ৭ নম্বর পিলার। ৪ বছর আগে এ দুটি পিলারে জটিলতা দেখা দেয়ায় শেষ পর্যন্ত পদ্মাসেতু হবে কিনা, তা নিয়েই দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। বিশ্বে এর আগে কোথাও হয়নি- এমন একটি পদ্ধতিতে এ দুটি পিলারের জটিলতা কাটিয়ে শতভাগ কাজ শেষ করতে পারাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, পদ্মাসেতুতে প্রথম স্প্যান ‘৭-এ’ ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের উপর বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৭-বি’ সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৭-সি’ সেতুর ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১১ মার্চ। স্প্যান ‘৭-ই’ সেতুর ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ১৩ মে। স্প্যান ‘৭-এফ’ সেতুর ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৯ জুন।
স্প্যান ‘১-এফ’ সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারে অস্থায়ীভাবে বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর। স্প্যান ‘৬-এফ’ সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি। স্প্যান ‘৬-ই’ সেতুর ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি।
স্প্যান ‘৬-ডি’ সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ। স্প্যান ‘৩-এ’ সেতুর ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল। স্প্যান ‘৬-সি’ সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল। স্প্যান ‘৩-বি’ সেতুর ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ মে। স্প্যান ‘৩-সি’ সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৯ জুন।
স্প্যান ‘৪-এফ’ সেতুর ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। স্প্যান ‘৪-ই’ সেতুর ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারে বসে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর এবং স্প্যান ‘৩-ডি’ সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের উপর বসে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর।
২৬ নভেম্বর সেতুর ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারে বসে স্প্যান ‘৪-ডি’। ১১ ডিসেম্বর ‘৩-ই’ স্প্যান বসে সেতুর ১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারের উপর। ১৮ ডিসেম্বর ২১ ও ২২ নম্বর পিলারে উপর বসে স্প্যান ‘৪-সি’। ৩১ ডিসেম্বর ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারে বসে স্প্যান ‘৩-এফ’।
পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সবগুলো স্প্যান আগামী মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে। জুলাই মাসের মধ্যেই এগুলো পিলারের ওপর বসানো হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূলসেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।