প্রকাশিত : শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।।২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(শরৎকাল)।। ৫ জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর :
লেখক: আব্দুর রশিদ খান
স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন, রাড়িখাল
১.জগদীশচন্দ্র বসুর নামে স্কুল প্রতিষ্ঠার গোড়ার কথা
স্যার জে বোস ইনস্টিটিউশন, রাড়িখাল ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমান হাইস্কুল ও কলেজ থেকে একটু পশ্চিমে খেলার মাঠ সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বের উঁচু ঢিবিতে। এর আগে স্কুলটি ‘মাইনর স্কুল’ হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। ৪৪ বছর এখানেই টিনশেড ঘরে স্কুলের কার্যক্রম চলার পর ১৯৬৫ সালের ঝড়ে স্কুল ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলে জগদীশচন্দ্র বসুর পৈত্রিক বাড়িতে বসবাসরত তাঁর পিতা ভগবানচন্দ্র বসুর চাচাত ভাই সতিশ চন্দ্র বসুর উত্তরাধিকারী হেমচন্দ্র বসুর সহযোগিতায় হাইস্কুলটি সেখানেই স্থানান্তরিত হয়। বাড়ির পূর্ব দিকে ঝড়ে পড়ে যাওয়া টিন চালার স্কুল ঘরটি পুনরায় মেরামত করে উঠানো হয়। হেমচন্দ্র বসুর পরিবার নাম মাত্র মূল্যে অর্থাৎ ৩৫ হাজার টাকায় বাড়িটি স্কুলের নিকট বিক্রি করে পরের বছর ১৯৬৬ সালে কলকাতা চলে যান। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জগদীশ ভবনে বসবাসকারী হেমচন্দ্র বসুর ছেলে সমরচন্দ্র বসুকে আমি দেখেছি। তিনি আমার কাকা মোবারক হোসাইন খান ও খালাতো ভাই খলিলুর রহমানের সাথে পড়তেন। রাড়িখালের মিশনের হোস্টেলে পড়াশুনাসহ সেখানেই একত্রে তারা রাতে থাকতেন। সমর বাবু সে সময়ে একজন ভাল সামাজিক সংগঠকও ছিলেন। দেশত্যাগের পর কলকাতার গরিয়াতে তিনি থাকতেন, আমার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ ছিল, সর্বশেষ তার মেয়ে সোমা রায় জানিয়েছেন- সমর বোস গত ২৫ অক্টোবর ২০১৮ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। বিজ্ঞানী জগদীশ তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মের জন্য ১৯১৬ সালে নাইটহুড ও ১৯২০ সালে রয়েল সোসাইটি ফেলোতে ভূষিত হলে তাঁর নাম ডাক সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতায় বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য টিকেটের বিনিময়ে অর্থ সংগ্রহের লক্ষে তিনি ধারাবাহিক বক্তৃতা দেয়া শুরু করলেন, এ সময় বিক্রমপুর সন্মেলনসহ ঢাকার কয়েকটি অনুষ্ঠানে তিনি বক্তৃতা দেন। বাংলা ১৩২২ সনের ১১ পৌষ জগদীশচন্দ্র বসু মুন্সীগঞ্জে সাহিত্য সন্মেলনে যোগ দেন এ সময় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শ্রী রমাপ্রসাদ চন্দ্র, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ডঃ রমেশ চন্দ্র মজুমদার ও আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরী উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সুনামের ছোঁয়া নিজ গ্রাম রাড়িখালেও প্রভাব ফেলে। এ গ্রামের তাঁর শুভানুধ্যায়ী ও স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী মুকুন্দ বোস, কেদারী সেন, বঙ্কিম দাস, কামাক্ষা মিত্র ও সতিশ বোস একত্রিত হয়ে স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর নামে স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। স্কুলের ফাণ্ড সংগ্রহের জন্য তাঁরা সুদুর রেঙ্গুন পর্যন্ত গিয়েছিলেন। প্রথম দিকে প্রাইমারি ও হাইস্কুল একত্রে ছিল, আশেপাশের ৩/৪ কি মি ব্যাসার্ধের ছাত্র ছাত্রিরা পায়ে হেঁটে বা বর্ষাকালে নৌকায় স্কুলে আসত। দূরবর্তী ছাত্রদের স্কুল সংলগ্ন রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমে হোস্টেল সিস্টেমে থাকারও ব্যবস্থা ছিল। বাবু সিতানাথ ঘোষ, মুকুন্দ চন্দ্র বোস, সুরেশ চন্দ্র ঘোসাল, বাবু বামন চন্দ্র ঘটক, সতিশ বোস ও নিবারন ভট্টাচার্য প্রমুখ শিক্ষক মণ্ডলীর অক্লান্ত পরিশ্রমে স্কুলটি দাঁড়িয়ে যায়। এ স্কুল থেকে ১৯২৬ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় সর্বপ্রথম প্রথম বিভাগ পান দামলা গ্রামের জনাব আব্দুল আজিজ সিকদার এবং মহিলা হিসাবে প্রথম মেট্রিক পাস করেছেন ১৯৬৫ সালে মাইজপাড়ার মতি মিয়ার মেয়ে সৈয়দা মাহমুদা বেগম। পরবর্তী সময়ে আব্দুল আজিজ, বিষ্ণুপদসেন শিক্ষক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। আমরা যখন দঃ রাড়িখাল প্রাইমারি স্কুলে পড়ি, বর্ষাকালে গ্রামের হাইস্কুলের ছাত্রসহ একত্রে আমাদের বাইচের কোষা বেয়ে প্রথমে হাইস্কুল পড়ুয়াদের নামিয়ে দিয়ে যেতাম, একবার বড় ভাই মরহুম কাইয়ুম খানের হাল ধরতে ভুল হওয়ায় কোষা নৌকাটি মান্দার গাছের ভিতর ঢুকে পড়লে বাড়ির শিক্ষক আমির হোসেন স্যার সহ আমরা সবাই মান্দার গাছের কাঁটায় আহত হই। অল্পের জন্য কোষা নৌকা ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। এ ঘটনা এখনো মনে দাগ কেটে আছে।
২. রাড়িখাল স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন হতে ৯০ বছর পুর্বে প্রথম First Division পাওয়া কৃতি শিক্ষার্থীর কথা।
রাড়িখাল স্কুলটি সৃষ্টি হয়েছিল ১৯২১ সালে এর ৫ বছর ব্যবধানে ১৯২৬ সালে দামলা গ্রামের ইলিম সিকদার এর ছেলে জনাব আব্দুল আজিজ সিকদার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় (Roll- Nar No- 171) ইংরেজি ও পার্সিসহ মোট ৫টি বিষয়ে লেটার সহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। অত্যান্ত মেধাবী আব্দুল আজিজের এ ফলাফলে Education Department, Bengal এর ঢাকা বিভাগ হতে মহসিন ফান্ড স্টাইপেন্ডস পেয়েছিলেন, আবার ইংল্যান্ডে উচ্চ শিক্ষায় পড়াশুনার জন্য স্কলারশিপ পেয়েছিলেন কিন্তু ভাগ্য খারাপ- তাঁর বাড়ির ঠিকানায় চিঠি আসতে বিলম্ব ঘটায় লন্ডন যাওয়া হয়নি। তিনি কলকাতায় বৈঠকখানা রোডে মেসে থেকে পরাশুনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও লেখালেখি করতেন তাঁর রুমমেট ছিল সাহিত্যিক এয়াকুব আলী চৌধুরী, তিনি কবি নজরুলসহ বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকদের সান্নিধ্য লাভ করেন। পড়াশুনা চলাকালীন পিতার আর্থিক লাঘবে তিনি সরকারী চাকুরীতে যোগ দেন। ‘৪৭ এর পর পূর্ব পাকিস্তান পোস্ট এন্ড টেলিগ্রাফ বিভাগের সুপারিন্টেন্ডেন্ট তৎপরবর্তি এ জি অফিসে কন্ট্রোলার অফ একাউন্টস (রাজস্ব) থাকাবস্থায় ১৯৬৮ সালে অবসর গ্রহন করেন। পরবর্তী ২ বছর গ্রামের বাড়িতে কিছুদিন কাটিয়ে ঢাকার কাঁঠালবাগানে নিজ বাড়ি ‘সিকদার ভবনে’ বসবাসরত অবস্থায় ৭৫ বছর বয়সে ১৭-১১-১৯৮০ তারিখ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ২ পুত্র ৫ কন্যা রেখে যান। দামলা হতে খালে কোলাপাড়া যাবার মুখেই তাঁদের বাড়ি, তাঁর ছেলেরা পিতার দোয়া কামনায় বাড়ির পাশে মসজিদ নির্মাণ করেছেন। তাঁর ভাতিজা আব্দুর রশিদ সিকদার পরিসংখ্যান ব্যুরোর ডাইরেক্টর ছিলেন, আরেক ভাতিজা লুৎফর রহমান সিকদার বিআরডিবি তে কর্মরত, লুৎফর আমার শ্রেণীবন্ধু ছিলেন। মরহুম আজিজ সিকদারের কিছু ডকুমেন্টস ও ডায়েরীর পাতার কপি আমাকে সরবরাহ করেছেন ছোট ছেলে Mohsin Sikdar, এ নিদর্শনগুলো তাঁর বিদ্যাপীঠের যাদুঘরে সংরক্ষণ করার জন্য স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল এর নিকট হস্তান্তর করেছি।
হাইস্কুলে ভর্তি ও বই ক্যরিকেচার
রাড়িখাল স্যার জগদীশচন্দ্র বসু উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হতে গেলাম ১৯৬৬ সালে। প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ স্যারের কক্ষে টানানো জগদীশচন্দ্র বসুর একটি ছবি এই প্রথম বারের মত দেখলাম, তখন স্কুলের দপ্তরী ছিলেন বৃদ্ধ মন্তাজ খাঁ। আমার বড় ভাই মনিরআলম এবং আমি একসাথে একই শ্রেণীতে ভর্তি হব- এ নিয়ে খুব অস্বস্তি লাগছিল কয়েকদিন ধরে, দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া বড় ভাই কাইয়ুম খান ক্লাস চলাকালীন গাদিঘাটের রফিক স্যার এর নিকট আমাদের উত্তর ধারের লিচুতলার টিনশেড কক্ষটিতে বুঝিয়ে দিয়ে এলেন, দুরু দুরু বুকে ক্লাসে ঢুকে পড়লাম। অনেকগুলো ছেলে মেয়ে একনজরে আমাদের দিকে তাঁকিয়ে থাকলো, দিনটা কোনরকমে পার করলাম, পরদিন উত্তর কোলাপাড়ার প্রাইমারীর সহপাঠী নজরুল মাঝি বললো, ক্লাসের ক্যাপ্টেন বিষ্ণু স্যার এর ছেলে রনদা ও তাঁর ভাই পটল আমাদের সাথে পড়ছে। বুকে সাহস বেড়ে গেলো, পরে দেখলাম, হাতারপাড়ার জুলহাস ও সিরাজুল, কয়কীর্তনের অর্ধেন্দু ও সুধেন এভাবে আরোও তিন জোড়া ভাই আমাদের সাথে পড়ছে। সে সময় মুল পাঠ্য বই পরিবর্তন হতো না, সিনিয়র ভাইদের নিকট হতে অর্ধেক দামে কিনতাম, মূল্য দেখে যোগফল টেনে তার অর্ধেক, এক পয়সা ও কম নিতো না। এক্সট্রা কিছু বই শ্রীনগরের ফারুক লাইব্রেরী বা আনছার লাইব্রেরী হতে কিনে আনতাম। কেনা বই এর কদর ছিল অনেক বেশী, নুতন বইয়ের ঘ্রাণে মনে আমেজ বুলিয়ে যেতো। স্কুলে অংক বই হারিয়ে গাদিঘাটের জলিলকে কাঁদতে পর্যন্ত দেখেছি। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা যেভাবে বেড়েছে তাতে মনে হয় না শুধুমাত্র বই এর অভাবে কারো পড়াশুনা বন্ধ হয়ে আছে। বিনা মুল্যের বইতে একজন অভিভাবকের যতটুকু আর্থিক সাশ্রয় হয় তার চেয়ে ঢাকের শব্দ বেশী। এ ছাড়া মাগনা বইয়ের কদর কখনও কেনা বইয়ের মতো হয় না। এ ভাবে গণহারে বিনা মুল্যে বই না দিয়ে এ বাবদ অর্থ দরিদ্র ছাত্র/ছাত্রীদের কল্যাণে বা স্কুলের টিফিন বাবদ ব্যয় করা যেতে পারে।
৪. স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু উচ্চ বিদ্যালয়ের চারজন প্রধান শিক্ষক
ক ) আজিজ স্যার- রাড়িখালের সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম আব্দুল আজিজ স্যার এর একটি দুর্লভ ছবি মালয়েশিয়া থেকে এফ বি মেসেঞ্জারে আমার নিকট পাঠিয়েছেন তাঁর ছেলে জনাব Sohag Hossain. তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জনাব আব্দুল আজিজ বি এ ০৩-০৩-৫৫ হতে ০২-০৫-৬৭ সময়কালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। ‘৬৫ সালে ঝড়ে পড়ে যাওয়া পুরাতন স্থান থেকে জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়িতে স্কুল স্থানান্তরের কাজ তিনিই করে গেছেন। এর আগে স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা স্মরণিকাতে প্রকাশের জন্য অনেক চেষ্টা করেও তাঁর ছবি পাওয়া যায় নি। একজন যোগ্য ও মেধাবী প্রধান শিক্ষক হিসেবে এলাকাবাসী এখনো তাঁকে স্মরণে রেখেছেন। জনাব আব্দুল আজিজের বাড়ি ছিল ভাগ্যকুল সংলগ্ন চারিপাড়া মান্দ্রা গ্রামে। তিনি ১৯৮৪ সালে মৃৃত্যুবরণ করেন।
খ ) তোফাজ্জল হোসেন স্যার- তিনি রাড়িখাল স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন এর শিক্ষক/প্রধান শিক্ষক ও কোলাপাড়ার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনিই উত্তর কোলাপাড়া গ্রামের প্রথম মেট্রিকুলেশন, গ্রামের প্রথম বিএ এবং প্রথম এম এ পাশ ছিলেন। এর আগে সাধারন শিক্ষক হিসাবে দীর্ঘদিন একই স্কুলে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর এ ছবিটি গতকালই হাতে পেয়েছি, এলাকায় তাঁর অনেক ছাত্র ছাত্রী, গুনগ্রাহী রয়েছেন- দুর্লভ এ ছবিটি তাঁদের উদ্দেশ্যে এফ বি তে প্রদান করেছি। তোফাজ্জল স্যার ১৯৭১-৭৮ এবং ১৯৮৬ সালে দু’বার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ১৯৬৪-৭১ সময়কাল পর্যন্ত কোলাপাড়া ইউ পি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া ৭১ পূর্ববর্তী সময়ে তিনি কিছুদিন যশলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাঁর দু ছেলে এবং দশ মেয়ে ছিল, বড় ছেলে রফিকুজ্জামান লাভলুর যশোরে কাপুড়িয়া পট্টিতে ‘শাহজালাল বস্রালয়’ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। স্যারের স্ত্রী অসুস্থ অবস্থায় ছোট ছেলে আব্দুর রাজ্জাক রিপন এর নিকট ঢাকার বাসায় আছেন। হেড মাস্টার থাকাবস্থায় তোফাজ্জল স্যার ১৫ আগস্ট ১৯৮৬ তারিখে পরলোকগমণ করেন।
গ ) বারীস্যার- জনাব এ কে এম আব্দুল বারী ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সালের ১২ জুলাই পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে তিনি সরকারী চাকুরী জনশক্তি ব্যুরোতে যোগদান করেন। তার বাড়ি শ্রীনগর থানার পূর্বমুন্সিয়া গ্রামে। দায়িত্ব পালনের শেষ সময়টাতে শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও ছাত্রদের মাঝে অনাকাংখিত বিভেদ সৃস্টি হলে আমাদের ক্লাসের কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী ভিন্ন স্কুল হতে রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষা দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্কুল অরক্ষিত হয়ে পড়ায় মুল্যবান দলিলপত্র, লাইব্রেরীর পুস্তক এবং সকল নথি খোঁয়া যায়। যে কারণে ‘৭১ পুর্ববর্তী ছাত্র/ছাত্রিদের ব্যাচ ভিত্তিক নামের তালিকা বা হাজিরা খাতা পাওয়া যায়নি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এ সময়টা যেমন ইতিহাসে স্মরণীয় তেমনি আমাদের স্কুল জিবনের পরিসমাপ্তি ঘটে তাঁরই সময়ে। এ সময়কালে শিক্ষক হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা হলেন- যথাক্রমে মোঃ সিরাজুল ইসলাম, আবুল হাসেম, বাদল চন্দ্র দাস (কয়কির্তন), মোঃ আব্দুল লতিফ মিয়া (কুকুটিয়া), মোঃ আলাউদ্দিন শেখ, মোঃ শহীদুল্লাহ খান (শেখরনগর), মোঃ আব্দুল মান্নান, মোঃ ওয়াইচ উদ্দিন খান, মোঃ আমজাদ হোসেন, মোঃ আব্দুল মালেক, এম এ আউয়াল (কোলাপাড়া), মৌলভী মোঃ আলী হোসেন, মোঃ আব্দুল খালেক (মান্দ্রা), বিষ্ণুপদ সেন, মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ রফিকুল ইসলাম (গাদিঘাট), নুর মোহাম্মদ (গাদিঘাট), নির্মল কৃষ্ণ নন্দী, আব্দুল মান্নান, আব্দুল আজিজ মাল, মোঃ সোলায়মান, বাবু শ্রী সুধাংশু ভূষণ কাব্যতীর্থ ও ইয়ার মাহমুদ খান। ম্যানেজিং কমিটিতে ছিলেন যথাক্রমে- মীর আনোয়ার আলী, সৈয়দ মোতাহার হোসেন, শিবদাস মিত্র, ভুলু মিয়া,লাল মিয়া ডাক্তার প্রমুখ। তখন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন মুন্সীগঞ্জের SDO জনাব সি এম শফি সামী পরে শ্রীনগরের সিও ডেভ: কে সভাপতি বানানো হয়। অম্বিকাচরণ সাহার পুত্রবধু সরজুবালা হাইকোর্টের রায়ে মালিকানা ফিরে পেলেও স্কুলের শিক্ষকগণ বোর্ডিং বাড়িতেই থেকেছেন। পরবর্তীতে সরজুবালাই স্কুলের নিকট বাড়িটি বিক্রি করে যান।
ঘ ) খালেক স্যার- জনাব আব্দুল খালেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল হিসেবে যথাক্রমে ৮১-৮৪ এবং ৯০-৯৮ সময়কালে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আগেও আমাদের স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিকট যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। ভাগ্যকূল হরেন্দ্রলাল উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন তিনি ১ নভেম্বর ২০১১ মৃত্যুবরণ করেন।
৫. পুরাতন স্থান থেকে জগদীশের পৈত্রিক বাড়িতে স্কুল স্থানান্তর
মরহুম সৈয়দ মোতাহার হোসেন ১৯৬১- ৬৯ সময়কালে আমাদের রাড়িখাল স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশনের সেক্রেটারী ছিলেন। তখন সেক্রেটারী পদবী বর্তমান চেয়ারম্যানের সমতুল্য ছিল। তিনি মাইজপাড়ার মিয়া বাড়ির সন্তান ছিলেন। তাঁর ছেলে সৈয়দ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসাইন আমাদের ৭১ ব্যাচের সহপাঠী ছিলেন। ১৯৬৫ সালের ঝড়ে পুরাতন স্কুল ঘরটি ভেঙে পড়ে গেলে বর্তমান স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর পিতা ভগবান চন্দ্র বসু কর্তৃক ১৮৮৬ সালে তারই আপন চাচাত ভাই সতীশ বোসের নিকট বিক্রি করে দেয়া বাড়িটি (পৈত্রিক ভবনসহ) তিনিই স্কুলের নামে কেনার উদ্যোগ নেন। অবশেষে বাড়িতে বসবাসকারী সমরচন্দ্র বসুর পিতা হেমচন্দ্র বসু ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বাড়িটি স্কুলের নামে লিখে দিলে ঝড়ে পড়ে যাওয়া কাঠ টিন এনে পূর্ব দিকে উত্তর দক্ষিণ লম্বা লম্বি স্কুল ঘর বানিয়ে ফেলা হয়। আমরা সেখানেই ক্লাস করতাম, পরীক্ষার সময় বা অনুষ্ঠান হলে মাঝখানের মুলিবাঁশের বেড়া খুললেই হল রুম হয়ে যেত। এখন সেখানে পাকিজা কোম্পানী তাঁর মা মনসুরুন্নেছার নামে নামে বিল্ডিং বানিয়ে দিয়েছেন। এতদিনে পশ্চিম পাশের প্রশাসনিক ভবনটি নষ্ট হয়ে গেলে ২০০৭ সালে দক্ষিণ রাড়িখালের একজন প্রাক্তন ছাত্র তার নিজ নামে দ্বিতল বিশিষ্ট ড, জাহাঙ্গীর ভবন এবং আরেক প্রাক্তন ছাত্র তার পিতা আমির হোসেন খান ভবন নামে আরেকটি ভবন বানিয়ে দেন।
৬. নারী শিক্ষা ও আমাদের এলাকার প্রথম অগ্রদুত মাহমুদা বেগম
নারী জাগরণের অগ্রদুত বেগম রোকেয়ার প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর একই সাথে জন্মও মৃত্যু দিবস পালিত হয়। তিনি জন্মেছিলেন মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামে ১৮৮০ সালে, মৃত্যু হয়েছিল কলকাতায় ১৯৩২ সালে। স্কুলে পাঠ্য বইতে তাঁর জীবনী পড়তে গিয়ে জানতে পারি তিনি ছিলেন নারীশিক্ষার আলোকবর্তিকা ও সমাজ সংস্কারক। তৎকালীন মুসলিম সমাজে মেয়েদের শুধুমাত্র আরবিও উর্দু ছাড়া বাংলা ও ইংরেজি পড়া নিষিদ্ধ ছিল। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সকল বাঁধা উপেক্ষা করে বেগম রোকেয়া মোমবাতির আলোতে বড় ভাইয়ের নিকট হতে বাংলা ও ইংরেজির পাঠ গ্রহণ করতেন, এজন্য তাঁকে নারী শিক্ষাও নারী জাগরণের অগ্রদুত বলা হয়। স্কুল জীবনে আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রাইমারি ও হাইস্কুলে পড়ার জন্য অনেক মেয়ে আসতেন কিন্তু অকালে বিয়ের কারনে অনেকেই ঝড়ে পরতেন, সে সময় মেট্রিক পরীক্ষার কেন্দ্র মুন্সীগঞ্জে থাকায় দুর্গম পথে সেখানে গিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে মেয়েদের অবস্থান করিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানো অভিভাবকদের জন্য অনেক ঝক্কি ঝামেলার বিষয় ছিল। এজন্য ১৯৬৫ সালের আগ পর্যন্ত কোন মেয়ে মেট্রিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবার সুযোগ পাননি। অনেকে শহরে গিয়ে পুনঃরেজিস্ট্রেশন করে ভিন্ন স্কুল হতে পাশ করেছিলেন। মাইজপাড়ার সৈয়দ মোতাহার হোসেন এর মেয়ে সৈয়দা মাহমুদা বেগম ১৯৬৫ সালে প্রথম রাড়িখাল স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন হতে দুর্গম মুন্সীগঞ্জে গিয়ে এস এস সি পরিক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। এ ক্ষেত্রে এলাকায় তিনি ও নারী শিক্ষার একজন অগ্রদুত। সর্বশষ জানা গেছে তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।
৭. মুন্সীগঞ্জে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার স্মৃতিচারণ
আগে মেট্রিকুলেশন পরে এসএসসির একমাত্র পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল মুন্সীগঞ্জ, তারও আগে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে পরীক্ষা দিতে হত। আমাদের বিক্রমপুরের জনগণের বড় একটি অংশের সহজ যোগাযোগ ছিল পদ্মা নদী দিয়ে স্টীমারে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। এরপর পরীক্ষা কেন্দ্র মুন্সীগঞ্জে স্থানান্তরিত হলে এলাকাবাসী যোগাযোগের ক্ষেত্রে দূর্ভোগে পড়ে যান। ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ হয়ে মুন্সীগঞ্জ যেতে হত, অনেকে শুস্ক মৌসুমে হেঁটেও যেতেন। পরীক্ষা চলাকালীন থাকা খাওয়ার জন্য বাসা ভাড়া আগেই করে রাখতে হত। এলাকার বাসিন্দাগণ কাঠটিনের ঘর খালি করে ভাড়া দিতেন। শহর তখন জমজমাট হয়ে থাকত। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের কারণে পরীক্ষা হয়নি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিতে গেলাম ১৯৭২ এর এপ্রিল মাসে, সীট পড়েছে কে,কে, ইন্সটিটিউটের পশ্চিম পাশের সিঁড়ির গোড়ায় দোতালায়। শিক্ষকদের কোন কড়াকড়ি নেই, যেনতেন পরীক্ষা হয়ে গেল। পরিকল্পনা ছিল- শেষদিন ‘দর্পনা’ সিনেমা হলে সিনেমা দেখবো। বন্ধুদের মুখে শুনছিলাম, এখন ভাল ছবি চলছে না, তবুও গেলাম পোস্টারে লেখা ছবির নাম “নাচে নাগিন বাঁজে বীণ” কি দেখেছিলাম তাও মনে নেই। মুন্সীগঞ্জে গেলে পথিমধ্যে কে, কে, ইন্সটিটিউশন চোখে পড়লে থমকে দাঁড়াই, সিনেমা হল ‘দর্পনা’ দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু সিনেমার বদলে ওটি এখন কমিউনিটি সেন্টার।
৮. সরজুবালা সাহা- এক মহীয়সী নারী, যার অবদানে স্যার জে সি বোস কমপ্লেক্স
রাড়িখালের ধনাঢ্য অম্বিকা চরণ সাহা পরিবারের বড় পুত্রবধু ছিলেন শ্রীমতী সরজু বালা সাহা। অম্বিকা সাহার ৫ পুত্র ও ২ কন্যা ছিল, অম্বিকা সাহা মারা যান ১৯৪৬ সালে। বড় ছেলে মোহিনী মোহন সাহা স্ত্রী সরজু বালাকে নিয়ে ঝালকাঠিতে ব্যবসা করতেন, সেখানে নিঃসন্তান অবস্থায় ১৯৬০ সালে মোহনী মোহন সাহা মৃত্যুবরণ করলে স্ত্রী সরজু বালা স্বামীর অধিকারে অম্বিকাসাহা বাড়ি নামে খ্যাত এ বাড়িতে এসে উঠেন। এসেই দেখতে পান তাঁর স্বামীর অধিকার ক্ষুণ্ণ করে বাকি ৪ ভাই যথাক্রমে যোগেন্দ্র চন্দ্র সাহা , গোপী বল্লভ সাহা, বঙ্কিম চন্দ্র সাহা ও জগদীশচন্দ্র সাহা এর নামে সমুদয় সম্পত্তি এস এ রেকর্ড হয়ে আছে। তিনি অম্বিকা সাহার মেয়ে জামাই কামারগাঁয়ের সূর্যকুমার চৌধু্রীর পুত্র মোতিলাল চৌধুরীকে এ বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করলেন । উল্লেখ্য, মোতিলালের এ স্ত্রী মারা গেলে পরে কু্মিল্লায় ২য় বিয়ে করেন, এ ঘরে আমাদের ক্লাসমেট শান্তনা রানী ওরফে শান্তি ও তাঁর ছোট বোন মাধবীর জন্ম হয়। অম্বিকাসাহার এক মেয়ে যামিনী বালাকে আমরা দেখেছি, ট্যারা চোখে তাঁকাতেন, তিনিও এ বাড়িতে মারা যান। দেবররা একে একে ভারত চলে গেলে সরজু বালা তাঁর অধিকার ফিরে পাবার জন্য মামলা করলে হাইকোর্টের রায়ে তিনি জিতে যান, তিনি ঘাট বাঁধাই ২টি দিঘি, সুদৃশ্য ভবন, সেগুন কাঠের ঘর, গোয়ালঘর, বাগানবাড়িসহ প্রায় ১২ একর সম্পত্তির উপর স্বামীর অধিকার ও দখলী সত্ত্ব ফিরে পান, এ বাড়ি দখল, পাল্টা দখল, জোর করে লিখে নেয়া ও নানা ধরনের মামলা মোকদ্দমার ঝামেলা সইতে হয়েছিল। ‘৭১ সালের ১২ মে পাকিস্তানি সেনারা এ বাড়ি হামলা করে দামি সেগুন কাঠের ঘরটি জালিয়ে দেয় এবং বাড়িটি লুটপাটের শিকার হয়, স্বাধীনতার পরে একদল উদ্যমী তরুণ লুণ্ঠিত সামগ্রী সংগ্রহ করে বাড়িটি বাসযোগ্য করে দেন। ‘৮১ সালে তাঁর পুজা মন্দির থেকে পিতলের মূর্তিগুলো চুরি হয়ে গেলে তিনি মানষিকভাবে ভেঙে পড়েন। রাড়িখাল স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বাড়িটি স্কুলের স্বার্থে দাবি করলে এলাকার প্রভাবশালীদের হুমকি সত্ত্বেও তিনি সানন্দে নামমাত্র মূল্যে পুরো সম্পত্তি ১৯৮৪ সালে স্কুলকে লিখে দিয়ে ভারত চলে যান। তাঁর কেয়ারটেকার গৌড়া বা গৌরাঙ্গ কে স্কুল কর্তৃপক্ষ উত্তর পাশে একটি ঘর নির্মাণ করে বসবাসের সুযোগ করে দেন। গৌড়ার নিকট জানলাম সরজুবালা কলকাতার পরেশ পণ্ডিতের মন্দির, শ্যামবাজার, গড়িয়াবাড়ীর নাতির নিকট গিয়েছিলেন, যাবার এক বছরের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়। সরজুবালাকে কথা দেয়া হয়েছিল- তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ শুধুমাত্র বিল্ডিংটির নাম হবে ‘সরজুবালা ভবন’। তাঁর বাড়িটি এখন স্যার জে সি বোস কমপ্লেক্স নামে বিনোদন কেন্দ্রে রুপান্তরিত হয়েছে, এখান থেকে বছরে প্রচুর অর্থ উপার্জন হলেও সরজুবালাকে দেয় ছোট্ট প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিন অপূর্ণই ছিল, অবশেষে সরজুবালার নামে সম্প্রতি ভবনটিতে একটি নামফলক লাগানো হয়েছে।
৯. বেগম সুফিয়া কামালের রাড়িখাল আগমন
কিছু গুণীজন, যাদের লেখা আমরা পাঠ্যপুস্তকে পড়েছি- ছবিতে সর্ববামে কোমরে হাত কবি আহসান হাবিব, বই হাতে কবি ফররুখ আহমেদ, মাইক্রোফোন হাতে কবি আবুল হোসেন, পেছনে কবি শামসুর রাহমান, সর্বডানে আব্দুল কাদের ও কবি সুফিয়া কামাল। এদের কেউ বর্তমানে বেঁচে নেই, কিন্তু বাংলা সাহিত্যে তাদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কবি বেগম সুফিয়া কামাল জীবদ্দশায় পর পর দু’বার বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর স্মৃতিধন্য গ্রাম বিক্রমপুরের রাড়িখালে এসেছিলেন, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়কালে কয়েক বছর পর্যন্ত এলাকার কিছু উদ্যমী যুবক মিশনে (বর্তমান রাড়িখাল ইউপি কমপ্লেক্স) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন।
১০. প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা
২০০৮ সালে আমাদের ১৯৬৬-৭১ ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা ১৪ মার্চ স্কুল প্রাঙ্গনে মিলিত হয়েছিলাম। তখন ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আমাদের ব্যাচের ছাত্র মোঃ সাজ্জাদ কবির, প্রধান শিক্ষক ছিলেন আমাদেরই প্রাক্তন শিক্ষক মরহুম আব্দুল খালেক। অত্যান্ত আনন্দঘন পরিবেশ, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও সহপাঠী মমিন আলীসহ অনেকের উপঢৌকন বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চারা রোপন, জগদীশের স্কেচ ছবি প্রদান, স্মৃতিচারণ ও আড়িয়ল বিল থেকে সংগৃহীত গরমা (রুই) মাছসহ খাবার পরিবেশনের মাধমে দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এর আগে পরে আমাদের সিনিয়র ব্যাচ ও বেশকিছু জুনিয়র ব্যাচও আলাদাভাবে অনুষ্ঠান করেছে। আগামী ২০২১ সালে স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিশন শতবর্ষ পূর্তিতে পদার্পণ করবে। তখন ৩/৪ দিনব্যাপি উৎসব আয়োজনের কথাবার্তা চলছে, এ লক্ষে ২০১৯ সাল থাকেই প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করা প্রয়োজন।
১১. প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় জগদীশ ভবন
মুন্সীগঞ্জ জেলার রাড়িখাল গ্রামে বৈজ্ঞানিক স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়িটির করুণ দশা দেখে ‘জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানির বাড়িটি যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে’ এ মর্মে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ থেকে এডভোকেট আসাদুজ্জামান বাদি হয়ে তার পক্ষে ব্যারিস্টার মনজিল মোরসেদ কর্তৃক সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় নিয়ে এটি সংস্কার/ পুন: নির্মাণের জন্য ২৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখ হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করা হয়, অতঃপর ৩০ নভেম্বর/২০১৪ তারিখ সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মোয়াজ্জেমুল ইসলাম ও বিচারপতি আশরাফুল কামাল এর হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনকারীর পক্ষে রায় দেন, রাস্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জনাব মোতাহার হোসেন সাজু। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ২০১৬ সালে তাঁদের নীল সাইনবোর্ড লাগিয়ে যান, ইতিমধ্যে ভবনের ছাঁদ ভাঙার কাজ শেষ হয়েছে। পূর্বের আদল হুবহু ঠিক রেখে ভবনটি পুন:র্নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে খবর নিয়ে জেনেছি থেমে থেমে কাজ চললেও বর্তমানে নির্মাণ কাজ অর্থের অভাবে থেমে আছে। যিনি রিট দায়ের করেছিলেন তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ। সর্বশেষ খবর হলো- প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ হতে কাজ শুরুর সবুজ সংকেত মিলেছে।
১২. জগদীশচন্দ্র বসু – আমরা ক্ষমাপ্রার্থী
জগদীশের নামে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাড়িখাল স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন ও ১৯৯৪ সালে উন্নিত কলেজ হতে গত ২০১৬-১৮ সালে দেখেছি এসএসসি ও কলেজ শাখার এইচএসসি তে উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থী সংখ্যা খুবই নগণ্য অর্থাৎ জিপিএ-৫ কলেজ শাখায় মাত্র একজন। বিগত কয়েক বছরের ফলাফলে মেধার দিক দিয়ে তেমন কোন অগ্রগতিও পরিলক্ষিত হয় নি। এ স্কুল অতিতে অনেক কীর্তিমান ছাত্র ছাত্রীর জন্ম দিয়েছে এমনকি ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ২১ তম অবস্থান ছিল এ স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র মরহুম হুমায়ুন আজাদের নাম। ১৯৬৫ সালে ঝড়ে আগের স্থানের টিন কাঠের স্কুল ঘরটি ভেঙে পড়ে গেলে তখনকার স্কুল কমিটির সেক্রেটারি জনাব তোতা মিয়া ও সদস্য জনাব সৈয়দ মোতাহার হোসেন উদ্যোগ নিয়ে জগদীশচন্দ্র বসুর পৈত্রিক বাড়িতে বসবাসকারি হেমচন্দ্র বসুর নিকট হতে বর্তমান বাড়িটি ৩৫ হাজার টাকায় কিনে নেন। তখন পুরনো স্কুল ঘরটি মেরামত করে এখানে তৈরি করা হয়। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা যারা পড়াশুনা করেছি ভাল ফলাফলের জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে থাকি। ১৯৬৬ সালে ভর্তি হয়ে বার বার মাঠ এবং ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতায় অংশ গ্রহন করছি, মনে আছে আমজাদ স্যার এর নির্দেশনায় ওঁঁরা কোদাল নিয়ে মাঠের উচু নিচু গর্তগুলো আমরা মাটি দিয়ে ভরাট করেছি। এ স্কুলে পড়াকালীন যে সকল শিক্ষকমণ্ডলী ও অফিস সহকারিগনের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম- তাদের নাম ২ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে যারা পরলোকগত হয়েছেন- তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা ও যারা বেঁচে আছেন তাঁদের প্রতি সন্মান প্রদর্শন পূর্বক স্কুলের মান উন্নয়নে নিম্নোক্ত প্রস্তাব রাখছি, প্রতি বছর অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন বাছাইকৃত ছাত্রছাত্রিকে বিশেষ তত্ববধানে রেখে (প্রয়োজনে হোষ্টেলে রেখে) মান যাচাই পূর্বক A+ ক্যাটাগরিতে উন্নিত করা হোক। শুনেছি, স্কুলের আর্থিক সচ্ছলতা অনেক বেড়েছে, এটি যদি সত্যি হয় তা হলে নুতন হোষ্টেল বানিয়ে আলাদা ক্যাম্পাস তৈরী করা হোক। স্কুলে মেধা বাড়ার খবর প্রচার পেলে অন্যেরা নিজ ছেলেমেয়েদের শহরে রেখে আর পড়াবেন না। এতে করে মান যেমন বাড়বে তেমনি ভাল অভিভাবকেরও আগমন ঘটবে।
১৩. আমাদেরই শিক্ষক জনাব মোঃ আঃ লতিফ মিয়া
শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থলে সিজুয়ে কিন্ডারগার্টেন এন্ড জুনিয়র হাই স্কুলে এখনো আলো ছড়াচ্ছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের ঊষা লগ্নে তিনি রাড়িখাল স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন এর ১৯৭০-৭২ সময়কালে আমার/ আমাদের শিক্ষক ছিলেন। ‘৭১ এর ২৫ মার্চের কালো রাত্রির পর আমাদের এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি পর্বে পড়াশুনার ছন্দপতন ঘটলে তিনিই আমাদের গাইড হিসেবে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিতেন। তৎপরবর্তী কালে শ্রীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি একাধারে বিজ্ঞানের ৩৭ বছর শিক্ষকতা শেষে অবসর নিয়ে বর্তমান স্কুলে ‘প্রিন্সিপাল’ হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। জেলার ‘সেরা শিক্ষক’ হিসেবে ২০০২ সালে পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর সাথে ক’দিন আগে আমাদের আলাপচারিতায় রাড়িখাল স্কুলের সেই সময়কার স্মৃতিচারণা প্রানবন্ত হয়ে উঠে, প্রাক্তন ছাত্র জনাব কবি ঢালী আমিরুল ইসলাম ও খোরশেদ ভাইও আমাদের সাথে ছিলেন। লতিফ স্যার একাধারে ওপেন কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক, খোদাইবাড়ী নূরজাহান খান হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং উপজেলার দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor