প্রকাশিত :রবিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২০ ইং ।। ১৩ বৈশাখ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ। ২ রমজান ১৪৪১
বিক্রমপুর খবর : কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু,মুন্সিগঞ্জ থেকে : মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আড়িয়ল বিলে পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষক পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে নবান্নের উৎসব। হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার কৃষান-কিষানি। প্রচণ্ড গরমে ঘাম ঝরলেও ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা কৃষকদের মুখে এখন হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে।
ধানচাষিরা জানান, গত মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আড়িয়ল বিলের ধান কাটার উদ্বোধনের পর থেকে স্থানীয় কৃষান-কিষানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধান কাটার অত্যাধুনিক কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার যন্ত্র। ফরিদপুর ও শরীয়তপুর থেকে এসেছেন কয়েকশ’ শ্রমিক। তাই জমির পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকের চোখেমুখে এখন স্বস্তির চিহ্ন। অথচ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় এক সপ্তাহ আগেও বিলের কৃষকরা ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন।
বিলবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আড়িয়ল বিলের শ্রীনগর উপজেলার গাদিরঘাট, মদনখালী, বাড়ৈইখালী, আলমপুর, লস্করপুর মত্যখালী, হাষাঁড়া, শ্রীধরপুর গ্রামসহ আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন গ্রামের জমিতে থাকা পাকা ধান কাটা এবং তা বাড়ির আঙিনায় নিয়ে যেতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কৃষক পরিবারগুলো।
ধানচাষি বারেক মিয়া বলেন, ‘এবার ৫ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করেছি। ধান কাটার মৌসুম ঘনিয়ে আসার আগেই অতিবৃষ্টিতে জমির সব ধান তলিয়ে যাওয়ার চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু আধুনিক পদ্ধতির মেশিন ও সরকারি উদ্যোগে শ্রমিক সংকট নিরসন হওয়ায় এখন পাকা ধান কেটে ঘরে বা আঙিনায় তোলা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।’
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা গেছে, আড়িয়ল বিলের ২৪ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে শ্রীনগর উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টরের কিছু বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। এখন ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটার কাজ উদ্বোধন করেন। এরপর থেকেই কৃষকরা পাকা বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে চালিয়ে যাচ্ছেন অবিরাম কর্মযজ্ঞ।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ আলম জানান, পাকা ধান কাটা শুরু হওয়ায় আড়িয়ল বিলে এখন কৃষকদের মনে বাড়তি আনন্দ বিরাজ করতে দেখা গেছে। ধান কাটার অত্যাধুনিক কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার যন্ত্রের পাশাপাশি ফরিদপুর ও শরীয়তপুর থেকে এসেছে হাজারেরও বেশি শ্রমিক। বিভিন্ন জেলা থেকে আরও শ্রমিক আসছে আড়িয়ল বিলে। এ ছাড়া প্রশাসনের সহযোগিতার পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আড়িয়ল বিলের কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং শামিল হয়েছেন পাকা ধান কাটার উৎসবে।
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, সরকার ইতোমধ্যে কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। করোনা মোকাবিলায় বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে জেলা প্রশাসন নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও উত্তরবঙ্গের যেসব শ্রমিক আসছেন, তাদের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের পৃথক থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রমিকদের খোঁজখবর রাখতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্টদের বলা হয়েছে।