কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকার জনপ্রিয় ১১টি গান

0
18
কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকার জনপ্রিয় ১১টি গান

প্রকাশিত: বুধবার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং।। ২৪শে ভাদ্র ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)।২৯শে মহররম ১৪৪৩ হিজরী।।

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : ভূপেন হাজারিকা একজন স্বনামধন্য কন্ঠ শিল্পী। এই কিংবদন্তিতুল্য কণ্ঠশিল্পী ১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অসমে জন্মগ্রহন করেন। অত্যন্ত দরাজ গলার অধিকারী এই কণ্ঠশিল্পীর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। অসমিয়া চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে গানের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় গান গেয়ে ভারত এবং বাংলাদেশে অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

তিনি মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই গান লিখে সুর দিতে থাকেন। ভূপেন হাজারিকার গানগুলোতে মানবপ্রেম, প্রকৃতি, ভারতীয় সমাজবাদের, জীবন-ধর্মীয় বক্তব্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এছাড়াও, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী সুরও উচ্চারিত হয়েছে বহুবার।

 কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকার জনপ্রিয় ১১টি গান==

১.

মানুষ মানুষের জন্যে
জীবন জীবনের জন্যে
একটু সহানুভূতি কি
মানুষ পেতে পারে না… ও বন্ধু।
মানুষ মানুষকে পণ্য করে,
মানুষ মানুষকে জীবিকা করে,
পুরোনো ইতিহাস ফিরে এলে
লজ্জা কি তুমি পাবে না… ও বন্ধু।
বলো কি তোমার ক্ষতি
জীবনের অথৈ নদী
পার হয় তোমাকে ধরে
দুর্বল মানুষ যদি।
মানুষ যদি সে না হয় মানুষ
দানব কখনো হয় না মানুষ
যদি দানব কখনো বা হয় মানুষ
লজ্জা কি তুমি পাবে না… ও বন্ধু।
……………………………

২.

আজ জীবন খুঁজে পাবি
ছুটে ছুটে আয়। ।

মরণ ভুলে গিয়ে
ছুটে ছুটে আয়
হাসি নিয়ে আয় আর
বাঁশি নিয়ে আয়,
যুগের নতুন দিগন্তে সব
ছুটে ছুটে আয়
ফাগুন ফুলের আনন্দে সব
ছুটে ছুটে আয়।

মনের চড়ায় পাখিটির
বাঁধন খুলে দে
শিকল খুলে মেঘের নীলে
আজ উড়িয়ে দে,

যত বন্ধ হাজার দুয়ার ভেঙ্গে
আয়রে ছুটে আয়,
আজ নতুন আলোর দিগন্তে সব
ছুটে ছুটে আয়
আর মরণ ভুলে গিয়ে
ছুটে ছুটে আয়।

সময় ধারাপাতে দেখ
নেই বিয়োগের ঘর
চলার পথের পথের বাঁকে
নেইকো আপন পর। ।
কি আর পাবি কি আর দিবি
আঙুল গুনে কি
লাভের খাতায় হিসাব করে
জীবন ভরে কি,

আজ পাওনা দেনা মিটিয়ে দিয়ে
আয়রে ছুটে আয়,
আর ভালবাসার পান্না হীরে কুড়িয়ে নিবি আয়
এই ফাগুন ফুলের আনন্দে সব
ছুটে ছুটে আয়
হাসি নিয়ে আয় আর
বাঁশি নিয়ে আয়……. …..

৩.

আমি এক যাযাবর, আমি এক যাযাবর
পৃথিবী আমাকে আপন করেছে, ভুলেছি নিজের ঘর।।

আমি গঙ্গার থেকে মিসিসিপি হয়ে ভলগার রূপ দেখেছি
অটোয়ার থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে প‌্যারিসের ধূলো মেখেছি
আমি ইলোরার থেকে রং নিয়ে দূরে শিকাগো শহরে দিয়েছি
গালিবের শের তাশখন্দের মিনারে বসে শুনেছি।।

মার্ক টোয়েনের সমাধিতে বসে গোর্কির কথা বলেছি
বারে বারে আমি পথের টানেই পথকে করেছি ঘর
তাই আমি যাযাবর, তাই আমি যাযাবর।।

বহু যাযাবর লক্ষ্যবিহীন, আমার রয়েছে পণ
রঙের খনি যেখানে দেখেছি, রাঙিয়ে নিয়েছি মন
আমি দেখেছি অনেক গগনচুম্বী অট্টালিকার সারি
তার ছায়াতেই দেখেছি অনেক গৃহহীন নরনারী
আমি দেখেছি অনেক গোলাপ-বকুল, ফুটে আছে থরে থরে
আবার দেখেছি না ফোটা ফুলের কলিরা, ঝরে গেছে অনাদরে
প্রেমহীন ভালোবাসা বেসে বেসে, ভেঙ্গেছি সুখের ঘর।।
পথের মানুষ আপন হয়েছে, আপন হয়েছে পর
তাই আমি যাযাবর, আমি এক যাযাবর।।

৪.

গঙ্গা আমার মা পদ্মা আমার মা
ও ও তার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা যমুনা।।

একই আকাশ একই বাতাস
এক হৃদয়ের একই তো শ্বাস।
দোয়েল কোয়েল পাখির ঠোটে একই মুর্ছনা।
ও ও তার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা যমুনা।।

এপার ওপার কোন পাড়ে জানি না
ও আমি সব খানেতে আছি
গাঙ্গের জলে ভাসিয়ে ডিংগা
ও আমি পদ্মাতে হই মাঝি
শংখ চিলের ভাসিয়ে ডানা
ও আমি দুই নদীতে নাচি

একই আশা ভালবাসা কান্না হাসির একই ভাষা।
দুঃখ সুখের বুকের মাঝে একই যন্ত্রনা
ও ও তার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা যমুনা।।

৫.

বিমূর্ত এই রাত্রি আমার
মৌনতার সুতোয় বোনা
একটি রঙিন চাদর
সেই চাদরের ভাজে ভাজে
নিশ্বাসেরই ছোঁয়া
আছে ভালোবাসা আদর

কামনার গোলাপ রাঙা
সুন্দরি এই রাত্রিতে
নিরব মনের ভরসা
আনে শ্রাবন ভাদর
সেই বরষার ঝরো ঝরো
নিশ্বাসেরই ছোঁয়া
আর ভালোবাসা আদর

বিমূর্ত এই রাত্রি আমার
মৌনতার সুতোয় বোনা
একটি রঙিন চাদর

দুরের আর্তনাদের নদীর
ক্রন্দন কোন ঘাটের
ভ্রুক্ষেপ নেই পেয়েছি আমি
আলিঙ্গনের সাগর
সেই সাগরের স্রোতে আছে
নিশ্বাসেরই ছোঁয়া
আর ভালোবাসা আদর

বিমূর্ত এই রাত্রি আমার
মৌনতার সুতোয় বোনা
একটি রঙিন চাদর..

৬.

দোলা হে দোলা হে দোলা
হে দোলা
আঁকা-বাঁকা পথে মোরা
কাঁধে নিয়ে ছুটে যাই
রাজা মহারাজাদের দোলা
ও দোলা
আমাদের জীবনের
ঘামে ভেজা শরীরের
বিনিময়ে পথ চলে দোলা
হে দোলা
হেইয়ানা হেইয়ানা
হেইয়ানা হেইয়া

দোলার ভিতরে ঝলমল করে যে
সুন্দর পোষাকের সাজ
আর ফিরে ফিরে দেখি তাই
ঝিকমিক করে যে
মাথায় রেশমের তাজ
হায় মোর ছেলেটির
উলঙ্গ শরীরে
একটুও জামা নেই খোলা
দু’চোখে জল এলে
মনটাকে বেঁধে যে
তবুও বয়ে যায়
দোলা হে দোলা

যুগে যুগে ছুটি মোরা
কাঁধে নিয়ে দোলাটি
দেহ ভেঙ্গে ভেঙ্গে পরে
হো পরে
ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু
রাজা মহারাজাদের
আমাদের ঘাম ঝরে পড়ে
হো পড়ে
উঁচু ঐ পাহাড়ে
ধীরে ধীরে উঠে যাই
ভালো করে পায়ে পা মেলা
হঠাৎ কাঁধের থেকে
পিছলিয়ে যদি পড়ে
আর দোলা যাবে নাকো তোলা
রাজা মহারাজার দোলা
বড় বড় মানুষের দোলা
ও দোলা

আঁকা-বাঁকা পথে মোরা
কাঁধে নিয়ে ছুটে যাই
রাজা-মহারাজাদের দোলা
হে দোলা হে দোলা হে দোলা
হে দোলা..

৭.

শরৎ বাবু
খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে
তোমার গফুর মহেষ এখন
কোথায় কেমন আছে
তুমি জানো না
হারিয়ে গেছে কোথায় কখন
তোমার আমিনা
শরৎ বাবু এ চিঠি পাবে কিনা
জানি না আমি
এ চিঠি পাবে কিনা জানি না

গেল বছর বন্যা হলো
এ বছরে খরা
খেতে ফসল ভাসিয়ে নিলো
মাঠ শুকিয়ে মরা
এক মুঠো ঘাস পায় না মহেষ
দুঃখ ঘোচে না
তুমি জানো না
শরৎ বাবু এ চিঠি পাবে কিনা
জানি না আমি
এ চিঠি পাবে কিনা জানি না

বর্গিরা আর দেয় না হানা
নেই তো জমিদার
তবু কেন এদেশ জুড়ে
নিত্য হাহাকার
জেনেছো দেশ তো স্বাধীন
আছে ওরা বেশ
তোমার গফুর আমিনা আর
তোমারই মহেষ
এক মুঠো ভাত পায় না খেতে
গফুর আমিনা
তুমি জানো না
শরৎ বাবু এ চিঠি পাবে কিনা
জানি না আমি
এ চিঠি পাবে কিনা জানি না

৮.

ও মালিক সারাজীবন কাঁদালে যখন আমায় মেঘ করে দাও
তবু কাঁদতে পারবো পরের দুঃখে অনেক ভাল তাও
মানুষ যেন কোর না আমায় মেঘ করে দাও।।

ফসল হারা শুকনো মাটির বৈশাখেতে তৃষ্ণা পেলে
সাগর থেকে জল এনে যে বৃষ্টি ধারায় দেব ঢেলে
আর রামধনুকে বলবো আমায় রাঙিয়ে দিয়ে যাও।।

আকাশটা যে হবে কাগজ তাতে বিজলী আখর দিয়ে
আরেকটা নয় মেঘদূত হোক লেখা আমায় নিয়ে,
আমি মজনুর চোখে হবো না মেঘ এই কি তুমি চাও?

৯.

সাগর সঙ্গমে সাঁতার কেঁটেছি কত
কখনতো হই নাই ক্লান্ত
তথাপি মনের মোর প্রশান্ত সাগরের উর্মিমালা অশান্ত।

মোর মনের প্রশান্ত সাগরের বক্ষে
জোয়ারের নাই আজি অন্ত
অজস্র লহোড়ী নব নব গতিতে
এনে দেয় আশা অফুরন্ত।।

মোর প্রশান্ত পারেরও কত মহা জীবনের
শান্তি আজি আক্রান্ত
নব নব সৃষ্টিতে দৈত্য-দানবে করে
নিষ্ঠুর আঘাত অবিশ্রান্ত
তাই তো মনের মোর প্রশান্ত সাগরের উর্মিমালা অশান্ত।।

ধ্বংসের আঘাতে দিয়ে যায় প্রতিঘাত
সৃষ্টির সেনানী অনন্ত সেই সংঘাত আনে মোর
প্রশান্ত সাগরে প্রগতির নতুন দিগন্ত
তাই তো মনের মোর প্রশান্ত সাগরের উর্মিমালা অশান্ত।।

মোর গভীর প্রশান্ত সাগরের শক্তি
ধ্বংসকে করে দিক ভ্রান্ত
অগনন মানুষের শান্তির অভিযান দৃষ্টিকামী জীবন্ত
তাই তো মনের মোর প্রশান্ত সাগরের উর্মিমালা অশান্ত।।

১০.

কিরে আমায় বিয়া করবি নয় ?
বলছিতো আমার সময় নাই ! আমায় ভুল বুজিছ নাই মায়া ভুল বুজিছ নাই আমায় ভুল বুজিছ নাই অ’ মায়া ভুল বুজিছ নাই ! বৈশাখ মাসে দারুন গরম খরাই পুবে চায় বৈশাখ মাসে দারুন গরম খরাই পুবে চায় জৈষ্ঠি মাসে জ্যেষ্ঠ ছেলের বিহা করতে নাই আমায় ভুল বুজিছ নাই আমায় ভুল বুজিছ নাই মায়া ভুল বুজিছ নাই ৷

তেনে আষাঢ় শ্রাবন ?
আষাঢ় শ্রাবন চাষের কাজে ব্যস্ত আমি রই অ’…. আষাঢ় শ্রাবন চাষের কাজে ব্যস্ত আমি রই ভাদ্র মাসে শাস্ত্রমতে বিহা করতে নাই ভাদ্র মাসে শাস্ত্রমতে বিহা করতে নাই আশ্বিনেতে দূৰ্গা পূজা ! আশ্বিনেতে দূৰ্গা পূজা কার্তিকে দিন নাই অঘ্রানেতে ধান কাটাতাই সময় কোথা পায় ? আমায় ভুল বুজিছ নাই আমায় ভুল বুজিছ নাই মায়া ভুল বুজিছ নাই ৷

তেনে পৌষ মাঘে ?
হাড় কাপানে শীতের কামোড় পৌষ মাসে রয় ! হ’ অ’ ….. হাড় কাপানী শীতের কামোড় পৌষ মাসে রয় ! মাঘের শীতে বাঘ পালায় বিহার কথা নয় ! মাঘের শীতে বাঘ পালায় বিহার কথা নয় ফাগুন মাসে দৌল যাত্রা ! ফাগুন মাসের দৌল যাত্রা ! বাজে ঢোলক বাজনা ! চৈত্র মাসে মালিকে যে দিতে হ’বে খাজনা ! অ’ আমায় ভুল বুজিছ না মায়া ভুল বুজিছ না মায়া ভুল বুজিছ না আমায় ভুল বুজিছ না আমায় ভুল বুজিছ না হে মায়া ভুল বুজিছ না ৷৷

১১.

মোর গাঁয়েরও সীমানার

পাহাড়ের ওপারে

নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি।

প্রতিধ্বনি শুনি আমি প্রতিধ্বনি শুনি।

কান পেতে শুনি আমি-

বুঝিতে না পারি।

চোখ মেলে দেখি আমি-

দেখিতে না পারি।

চোখ বুজে ভাবি আমি-

ধরিতে না পারি।

হাজার পাহাড় আমি-

ডিঙোতে না পারি।

নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি।

প্রতিধ্বনি শুনি আমি প্রতিধ্বনি শুনি।

হতে পারে কোন যুবতীর-

শোকভরা কথা।

হতে পারে কোন ঠাকুমার-

রাতের রূপকথা।

হতে পারে কোন কৃষকের-

বুকভরা ব্যথা।

চেনা চেনা সুরটিকে কিছুতে না চিনি।

নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি।

প্রতিধ্বনি শুনি আমি প্রতিধ্বনি শুনি।

শেষ হল কোন যুবতীর-

শোকভরা কথা।

শেষ হল কোন ঠাকুমার-

বলা রূপকথা।

শেষ হল কোন কৃষকের-

বুকভরা ব্যথা।

চেনা চেনা সুরটিকে কিছুতে না চিনি।

নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি।

প্রতিধ্বনি শুনি, প্রতিধ্বনি শুনি।

মোর কালো চুলে সকালের সোনালী রোদ পড়ে।

চোখের পাতায় লেগে থাকা কুয়াশা যায় সরে।

জেগে ওঠা মানুষের হাজার চিৎকারে-

আকাশছোঁয়া অনেক কথার পাহাড় ভেঙে পড়ে।

আকাশছোঁয়া অনেক কথার পাহাড় ভেঙে পড়ে।

মানবসাগরের কোলাহল শুনি।

নতুন দিনের যেন পদধ্বনি শুনি।

পদধ্বনি শুনি, পদধ্বনি শুনি।

মোর গাঁয়েরও সীমানার

পাহাড়ের ওপারে

নতুন দিনের যেন প্রতিধ্বনি শুনি।

প্রতিধ্বনি শুনি।

প্রতিধ্বনি শুনি আমি প্রতিধ্বনি শুনি।

কথা আর কণ্ঠ : ভূপেন হাজরিকা ।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..  

   (বিজ্ঞাপন)  https://www.facebook.com/3square1          

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।

আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

                                                                        Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন।   

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন