প্রকাশিত : শনিবার,২০ জুন ২০২০ ইং ।। ৬ই আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : কামাল লোহানী; এদেশের সাংবাদিকতা, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। চির বিদ্রোহের অধ্যায়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ; স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন- সর্বক্ষেত্রে সর্বাগ্রে থাকা মানুষ।
শনিবার (২০ জুন) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর মহাখালীতে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন চির বিদ্রোহী এই মানুষটি। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
কামাল লোহানী সাংবাদিকতা দিয়ে পেশাজীবন শুরু করলেও নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন সবসময়। এদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
কামাল লোহানী হিসেবে পরিচিত হলেও, তার পুরো নাম কিন্তু আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার খান সনতলা গ্রামে তার জন্ম। বাবা আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী। মা রোকেয়া খান লোহানী।
মাকে হারান মাত্র সাত বছর বয়সে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যে কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে চলে আসেন পাবনায়। পাবনা জিলা স্কুল থেকে ভাষা আন্দোলনের বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। এ সময় তিনি যুক্ত হন রাজনীতিতে। যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে। পাবনায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন যোগ দেন। এরই মধ্যে পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টানেন তিনি। যুক্ত হন রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতিচর্চায়।
১৯৫৩ সালে পাবনার তৎকালীন জিন্নাহ্ পার্কে (বর্তমান স্টেডিয়াম) মুসলিম লীগ কাউন্সিলে নুরুল আমিনের আগমনের প্রতিবাদ করায় প্রথম গ্রেপ্তার হন তিনি। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে কাজ করায় আবারও গ্রেফতার হন তিনি।
১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে পারিবারিক মতবিরোধ হওয়ায় ঢাকা চলে আসেন কামাল লোহানী। চাচাতো ভাই ফজলে লোহানীর সহযোগিতায় ওই বছরই দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা দিয়ে কর্মজীবন শুরু হয় তার। একই বছর তিনি ন্যাপে যোগ দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
ঢাকার আসার পরেই নাচের প্রতি আগ্রহ জন্মে কামাল লোহানীর। বুলবুল ললিতকলা একাডেমির হয়ে কামাল লোহানী তার নৃত্যগুরু জি এ মান্নানের ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ প্রযোজনায় অংশ নেন তিনি। পাকিস্তান সাংস্কৃতিক দলের হয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে তিনি যান। এরই ফাঁকে তিনি চাকরি করেন দৈনিক ‘আজাদ’, দৈনিক ‘সংবাদ’, ‘পূর্বদেশে’।
১৯৬০ সালে চাচাতো বোন সৈয়দা দীপ্তি রানীকে বিয়ে করেন কামাল লোহানী৷ ২০০৭ সালের ২৪ নভেম্বরে তার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের অনুপ্রেরণাদাত্রী স্ত্রী দীপ্তি লোহানীর প্রয়াণে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন কামাল লোহানী। এ দম্পতির এক ছেলে ও দুই মেয়ে সাগর লোহানী, বন্যা লোহানী ও ঊর্মি লোহানী।
পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার রাষ্ট্রবিরোধীতা শুরু তারপরে আর পিছে ফিরে তাকাননি। অংশ গ্রহণ করেছেন দেশের সবক’টি গণসংগ্রামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অস্বীকার করতে যে পাকিস্তানি কার্যক্রম তিনি তার বিরুদ্ধে দাঁড়ান। রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রসারে তখন ছায়ানট গঠিত হয়। তিনি ছিলেন ছায়ানটের প্রথম সাধারণ সম্পাদক।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তার ছিল দৃঢ় ভূমিকা। শতবর্ষ পালনের আয়োজনে ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যে তিনি বজ্রসেনের ভূমিকায় অংশ নিয়ে প্রশংসিত হন৷ ১৯৬২ সালে স্বল্পকাল কারাবাসের পর কামাল লোহানী ‘ছায়ানট’র সাধারণ সম্পাদক হন৷ সাড়ে চার বছর এই দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন ‘ক্রান্তি’ নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন ঢাকা বেতারের৷ দায়িত্ব নেয়ার পর বিধ্বস্ত বেতারকে পুনর্গঠনে মনযোগী হন৷
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে ধারাবিবরণী দিয়েছিলেন কামাল লোহানী। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর কলকাতা সফর উপলক্ষে দমদম বিমানবন্দরেও ধারাবিবরণী দিয়েছিলেন তিনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে আবার সংবাদপত্রে যোগদান করেন। সংবাদপত্রের সাংবাদিক -কর্মচারিদের বেতন ভাতা নিয়মিত করতে সাংবাদিক ইউনিয়ন শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। কখনও সুবিধাভোগী ছিলেন না। ১৯৭৩ সালে যোগ দেন ‘দৈনিক জনপদ’-এ৷ ১৯৭৪ সালে ‘বঙ্গবার্তা’, এরপর ‘দৈনিক বাংলার বাণী’ পত্রিকায় কাজ করেন।
সরকার ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সংবাদপত্র এ্যানালমেন্ট অধ্যাদেশ জারি করে মাত্র চারটি পত্রিকা ছাড়া সব পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। নির্মল সেন ও কামাল লোহানী বাকশালে যোগদানে অস্বীকৃতি জানান।
ফলে চাকরিহীন অবস্থায় ১৯৭৭ সালে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বার্তা’র নির্বাহী সম্পাদক হন। ১৯৭৮ সালে তাকে সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হলে ‘দৈনিক বার্তা’ ছেড়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে (পিআইবি) যোগ দেন। প্রকাশনা পরিচালক ও ‘ডেপথনিউজ বাংলাদেশ’ েএর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার কয়েক মাস পরেই তিনি সেখানকার সহযোগী সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন।
১৯৯১ সালে তিনি প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৬ মাসের মাথায় বিএনপি সরকারের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি পিআইবিতে ফিরে আসেন।
২০০৮ সালে দুই বছরের জন্য আবার শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন৷ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন চার বছর৷ তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন৷ এর বাইরেও তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সদস্য৷
জীবনের বহু বছর সাংবাদিকতা করে, মিছিল করে, জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করলেও কামাল লোহানীর একখন্ড জমি বা বাড়ি,গাড়ি হয়নি। চোখের অসুখ ছিলো বেশ আগে থেকেই। তবে বাড়ি-গাড়ির জন্য তার আক্ষেপও ছিল না। সবার প্রাণের মানুষ ছিলেন তিনি। লোহানী কাকা বা লোহানী ভাই , সবার আপনজন ছিলেন তিনি। তার অর্জনতার কথা প্রাণ ছুঁয়ে যায়। অসাধারণ বক্তা ছিলেন তিনি।এই চির বিদ্রাহী তার বক্তৃতায় কোন কিছু ছাড় দিত না। ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট আন্দোলন , গণনাট্য সংঘের কার্যক্রম নিয়ে কিছুদিন আগেও যে লেখাটা লিখেছেন সে লেখাটা ভারতবর্ষের কৃষক ও গণসংস্কৃতি আন্দোলনের একটি দলিল। তিনি লিখেছেন-
‘ স্বাধীনতা সংগ্রামে যে রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি সংস্কৃতিক আন্দোলন বিছ্ছিন্নভাবে ঘটেছিল, তাকে কমিউনিস্টরা সংঘবদ্ধ করে একটি সংগঠণে রূপ দিয়েছিলেন , যাকে বাংলায় ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বলা হয়। গণনাট্যের এই সংগঠন সারা ভারতকে ছড়িয়ে পড়েছিল প্রবল বেগে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়োজনে কিংবা আন্দোলন- সংগ্রামে ক্রমশ: এই গণসঙ্গীত-নাটকের জোয়ার জেগেছিল, সেই সেদিন। বৃটিশ-বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামেও এদের বিরাট অবদান রয়েছে। যেমন ধরুন, বৃটিশ শোষকদের অন্তিমকালে বাংলায় কৃষক সমাজ তেভাগার সংগ্রাম শুরু করলেন। যা অব্যাহত ছিল ভারতবিভাগের পরও। বৃটিশ ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে চলে যাবার পরও ভারতে কংগ্রেস সরকার ও পাকিস্তানে মুসলিম লীগ সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাকিস্তানের পূর্বাংশে অর্থাৎ এই পূর্ব বাংলায় সেই তেভাগা আন্দোলনই ছিল পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রথম আঘাত। প্রচণ্ড দমন নীতি চায়িয়েছিল লীগ সরকার। বহু কৃষকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, মামলা চাপিয়ে দিয়ে তাদের বিশাল সংখ্যায় গ্রেফতার করেছিল ‘স্বাধীন’ বলে আখ্যায়িত পূর্ব পাকিস্তানে।
জনগণ প্রথমেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন সেদিন যে, এই জালিম মুসলিম লীগ সরকার আমাদের জন্যে নয়। পাঠক মনে পড়ে কি চল্লিশ দশকের শেষভাগের সেই গণআন্দোলনকে? ওই আন্দোলনে কৃষক ছিলেন মূল শক্তি। একে বৃটিশ ও পাকিস্তনী শাসকগোষ্ঠী দমন করতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পর্যন্ত নামিয়েছিল এবং অকথ্য নির্যাতন, গ্রেফতার , ধর্ষণ নানা কৌশলে অংশগ্রহণকারীদের শায়েস্তা করা হচ্ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও কৃষকরা সংঘবদ্ধ হয়ে এই পাশবিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এই প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ময়মনসিংহে কমরেড মণি সিংহ, রাজশাহীতে ইলামিত্র-রমেন মিত্র , সিলেটে কমরেড অজয় ভট্টাচার্য, দিনাজপুরে হাজী দানেশ, ভামারাম সিং, গুরুদাস তালুকদার, রংপুরে পাবনায় কমরেড অমূল্য লাহিড়ী, খুলনায় কমরেড বিষ্ণু চ্যার্টাজি, ফরিদপুরে কমরেড শান্তি সেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। তাইতো সংগ্রামের পথরেখায় আমাদের যে যাত্রাভিযান শুরু হয়েছিল রক্তের আখরে, সেই পরিক্রমায় রেণুকনা দিয়ে লিখিত হয়েছে সংস্কৃতি-সম্ভাবনা আর সেই রক্তের কারুকাজে অনুবীক্ষণ করেছি পরিবর্তনের, সংশোধনের। এ পথেও সংস্কৃতিই ছিল চৈতন্যের হাতিয়ার।’ (সংস্কৃতিই গণঐক্যের বলিষ্ট হাতিয়ার)।
এসব লেখার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে তিনি যে কৃষক মেহনতী মানুষের সংগ্রামের সাথে মিশে আছে যে সংস্কৃতি,তিনি তারই প্রতিনিধিত্ব করেন। মেহনতী মানুষের সংগ্রামে সংস্কৃতি যে মূল হাতিয়ার সেটা সহজেই প্রতিভাত হয়। বিশেষত তাঁর বই- লড়াই সংগ্রামের গানের ভুমিকা পড়লেও দেখা যায় যে পাকিস্তান আমলের যত গণসংগ্রাম তাতে সংস্কৃতির ভুমিকা কি ছিলো। সংস্কৃতি যে গণমানুষের মুক্তির হাতিয়ার সে বিশ্বাসের কথা তিনি বার বার প্রমান করেছেন। তার লেখায় চলনে- বলনে মেহনতী মানুষের সংগ্রাম ও তার সংস্কৃতি সমাজ প্রগতির মূল বিষয় সেটা তিনি প্রমান করেছেন। তিনি লিখেছেন-‘এ যাবতকালে বাঙালী সংগ্রাম জন্ম দিয়েছে অগণিত গান, নাটক, গল্প, নৃত্যনাট্য, চিত্রকলা। বিদ্রোহ আর বিপ্লবের সময় আর স্থানে, সংগ্রামে আর আন্দোলনে লোকজ সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে এই কালের নানান কবির নানান গাথা, বীরত্বগাথা, চারণকবি মুকুন্দ দাসের স্বদেশী গান, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের দেশপ্রেমের অগণতি লেখা ও সুর করা গান, কবি কিশোর সুকান্ত ভট্টাচার্যের সুতীক্ষ্ণ কবিতার ধারাল অস্ত্র আমাদের চলার পথে দিয়েছে অবারিত সাহস, অফুরন্ত বৈভব, যা দিয়ে আমরা একাত্তরকে করেছি স্মরণীয় বাঙালী জীবনে, পাকিস্তানী দস্যুদলকে বাইশ বছর পর এদেশ থেকে হটিয়ে, আগ্রাসী শক্তিকে পরাভূত করে।’ বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে অনেক কাজ করেছেন তিনি, লিখেছেন অনেক গবেষনালব্ধ লেখা।কিছুদিন আগ থেকে নিজের হাতে লিখতে কষ্ট হওয়া উদীচীর এক তরুন কর্মী তার কথার শ্রুতি লিখন করতেন।
তাঁর লেখা প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে, ‘আমাদের সংস্কৃতি ও সংগ্রাম’, ‘আমরা হারবো না’, ‘সত্যি কথা বলতে কি’, ‘লড়াইয়ের গান’, ‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও নৃত্যশিল্পের বিস্তার’, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার’, ‘এদেশ আমার গর্ব’, ‘মুক্তিসংগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতার’, ‘যেন ভুলে না যাই’, ‘রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন বাংলা বেতার’, ‘দ্রোহে প্রেমে কবিতার মত’ এবং কবিতার বই ‘শব্দের বিদ্রোহ’। প্রকাশিতব্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শত্রু বধের উৎসবে’, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার’ – দ্বিতীয় খন্ড, ‘যেন ভুলে না’ – দ্বিতীয় খন্ড। এছাড়াও তাঁর ঘটনাবহুল সাংবাদিকতা জীবন সম্পর্কে তাঁর নিজের বানীকে লেখ্যরূপে প্রেস ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ প্রকাশ করেছে ‘অগ্রজের সঙ্গে একদিন’।
তার জীবন ও কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।কলকাতা পুরসভার দ্বিশতবর্ষ সম্মাননা পেয়েছেন তিনি ১৯৯১ সালে। প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সম্মাননা এবং রাজশাহী লেখক সংঘ সম্মাননা পান তিনি। এ ছাড়া ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর ক্রান্তি স্মারক- ২০০৩, ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর ঋষিজ সম্মাননা ও স্মারক সহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সম্মাননা তাঁর মিলেছে। বাংলা একাডেমী ফেলো কামাল লোহানী জাহানারা ইমাম পদক পেয়েছেন ২০০৮ সালে। জাহানারা ইমাম পদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন৷
কামাল লোহানী ও দীপ্তি লোহানী দম্পতির এক পুত্র ও দুই কন্যা।তিনি তার বড় মেয়ে বন্যা লোহানীর কাছেই থাকতেন।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..