প্রকাশিত : শনিবার, ১১জুলাই ২০২০ইং ।। ২৭শে আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : “অ্যালবার্ট”, না এটি কোন জনৈক ব্যক্তির নাম নয়। ৬০ দশকের শেষের দিকে কলকাতা এবং লন্ডনের মধ্যে চলাচল করত একটি ডাবল ডেকার বাস। বাসটি দেখতে যেমন চমৎকার ছিল, কেমন তার ভাড়াটাও ছিল স্মার্ট। ভারতীয় মুদ্রায় ঐতিহাসিক বাস রুটের ভাড়া ছিল ৭,৮৮৯ টাকা। তখনকার সময় যাত্রীরা এ বিপুল পরিমাণে অর্থ খরচ করতেন এই বাসে জায়গা পাবার জন্য।এ ডাবল ডেকার বাস কি শুধু কলকাতা থেকে লন্ডন পর্যন্ত গিয়েছিল তা নয়, কলকাতা থেকে পাড়ি জমিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে।
কলকাতা থেকে লন্ডনের মধ্যে অ্যালবার্টের মোট ১৫ টি রেকর্ড হয়েছে, লন্ডন থেকে সিডনি পর্যন্ত রেকর্ড রয়েছে চারটি।
লন্ডন থেকে কলকাতায় যে রুটটি ধরে অ্যালবার্ট আসতো তাহল,
লন্ডন থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথমেই ডাবল ডেকার বাস বেলজিয়ামে প্রবেশ করত,
সেখান থেকে পশ্চিম জার্মানি হয়ে বাসটিতে অস্ট্রেলিয়ার ভিয়েনাতে,
এরপর একে একে যুগোস্লোভিয়া,
বুলগেরিয়া এবং তুরস্ক হয়ে প্রবেশ করত ইরানে।
সেখান থেকে আফগানিস্তানের মধ্যে দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে ভারতীয় ভূ-খন্ডে প্রবেশ করত আলবার্ট।
বাড়িতে প্রবেশ করার পর বাসটির প্রথম স্টপ ছিল দিল্লি। এরপর যথাক্রমে আগ্রা, এলাহাবাদ, বেনারস। অবশেষে কলকাতায় এসে থামত বাসটি।আলবাট এর ভিতরে চাকচিক্য চোখে পড়ার মতো ছিল। যাত্রীদের যাতে একটানা সিটে বসতে না হয়, ভেতরে চলাচল করার জন্য থাকতে অনেকটা জায়গা। সিটের পাশে থাকত বড়োসড়ো জানালা।ছিল বই পড়ার জায়গা, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা।রেডিও ও মিউজিকের এলাহি ব্যবস্থাও ছিল এই বাসের মধ্যে।পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে দীর্ঘতম রুট যাতায়াত করেছে।
দীর্ঘ ২১ বছরের অনুগত পরিষেবার পরে,অস্ট্রেলিয়ায় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল এই বাসটি। এরপর যাত্রীদের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল এটি। অ্যান্ডি স্টুয়ার্ট নামে এক ব্রিটিশ, ১৯৬৮ সালের মে মাসে সিডনিতে এই বাসটি কিনে নেন।এন্ডি বাসের ভেতরের কাঠামোর আমূল পরিবর্তন করে দিয়ে এই বাসটিকে একটি চলমান লাক্সারি বাড়ির আকার দেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল সেদিন থেকে বাসে করে তিনি লন্ডনে বাড়িতে যাবেন। রুট হিসেবে তিনি বেছে ছিলেন সিডনি টু কলকাতা তারপর সোজা লন্ডন।
কলকাতা থেকে লন্ডনের মধ্যে যাতায়াতের সময় লাগতো ৪৯ দিন। সিডনি থেকে ভায়া কলকাতা হয়ে লন্ডনের রাস্তার দূরত্ব ছিল ১৬ হাজার কিলোমিটারের সামান্য কিছু বেশি।তাকে যাত্রাপথে ১৫০ টি সীমান্ত পার করত। কিন্তু কোনদিন তাকে নিয়ে সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে কোন বিতর্ক হয়নি। অ্যালবার্ট বিশ্বের ইতিহাসে “বিশেষ দূত” হিসেবে পরিচয় দিত।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..