প্রকাশিত :মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ ইং । ২রা আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : নভেল করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে দেশের ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোর হোমপেজ। ফ্যাশন, বিউটি, ইলেকট্রনিকস, গিফট আইটেমের জায়গা দখল করেছে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, তেল, ওষুধের মতো সব নিত্যপণ্য। কয়েক গুণ বেড়েছে অর্ডার। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাব ও ডেলিভারি ম্যান স্বল্পতায় বিঘ্নিত হচ্ছে পণ্যের সরবরাহ। একদিনের জায়গায় ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছাতে সময় লাগছে তিন-চারদিন। ক্রেতাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিতেও বাধ্য হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
দেশের হাটবাজারগুলো দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে খোলা থাকছে। জনসমাগম এড়াতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘর থেকে বের হতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আবার অনেকেই নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এড়িয়ে চলছেন হাটবাজার। নিত্যপণ্যের খোঁজে এসব মানুষের একটা বড় অংশ ভিড় করছেন অনলাইনে পণ্য কেনাকাটার ওয়েবসাইটগুলোতে।
নিত্যপণ্যের চাপ বাড়লেও ফ্যাশন, বিউটি, ইলেকট্রনিকস, গিফট কিংবা বিলাসবহুল পণ্যের চাহিদা নেমে এসেছে একেবারে শূন্যের কোঠায়। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ই-কমার্স খাতে সামগ্রিকভাবে বিক্রি কমেছে ৮০ শতাংশেরও বেশি। যেটুকু বেচাকেনা হচ্ছে, তা কেবল নিত্যপণ্য।
বাংলাদেশে দারাজ, পিকাবো, প্রিয়শপ, আজকের ডিল, অথবা, চালডাল, রকমারি, বাগডুমসহ বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে মানুষ পণ্য কিনতে বেশি ভিড় করেন। সাধারণত ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, সেলফোন, ঘড়ি, জুতা, কসমেটিকসের পণ্যই বেশি বিক্রি করত এসব প্রতিষ্ঠান। চালডাল, ফুডপান্ডার মতো কয়েকটি ওয়েবসাইট পরিচালিত হতো নিত্যপণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সবাইকে এক করে দিয়েছে। সবকয়টি প্রতিষ্ঠানই বিক্রির ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিচ্ছে নিত্য ও গৃহস্থালি পণ্যকে।
জানতে চাইলে প্রিয়শপ ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুল আলম খান বণিক বার্তাকে বলেন, প্রিয়শপে আগে সাধারণত জামা-কাপড় ও ই-গ্যাজেট পণ্য বেশি বিক্রি হতো। তবে গত ১৫ দিনে প্রিয়শপের বিক্রি হওয়া ৯০ শতাংশ পণ্যই ছিল নিত্যপণ্য ও ওষুধ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চাল, ডাল, তেলসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় গ্রোসারি পণ্যের পাশাপাশি মেডিসিন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে প্রিয়শপ ডটকম। পাশাপাশি মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার, মশকরোধক পণ্য এবং স্কয়ার টয়লেট্রিজ, এসিআই, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার, ইফাদ, তীর, ডিপ্লোমা, হরলিক্স, স্কয়ার ফুড, ফ্রেশ, রূপচাঁদা, সেফ, বসুন্ধরা ও সিটি ব্র্যান্ডের পণ্য ঢাকাসহ সারা দেশে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা করছি আমরা।
তিনি বলেন, বিক্রয়কর্মী ও গ্রাহকদের সুরক্ষার ব্যাপারে আমরা বিশেষভাবে নজর দিচ্ছি। প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন ও সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডেলিভারির কাজে নিয়োজিতদের সেফটি উপকরণ নিশ্চিত করা হচ্ছে।
তবে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে পণ্য সরবরাহ করতে গিয়ে নানামুখী সমস্যায় পড়ছে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ও দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট আজকেরডিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফাহিম মাশরুর বণিক বার্তাকে বলেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা পণ্য সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্মীর সংকট। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকায় সাত থেকে ১০ হাজার ডেলিভারি ম্যান কাজ করত। করোনার কারণে তাদের অনেকেই ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন। আবার অনেকে করোনার ভয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে বর্তমানে এক থেকে দেড় হাজার ডেলিভারি ম্যান কাজ করছেন। ফলে প্রতিদিন বিভিন্ন সাইটে যে পরিমাণ পণ্যের অর্ডার আসছে, ডেলিভারি ম্যানের অভাবে তা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশের ই-কমার্স খাতে সামগ্রিক বিক্রি ৮০ শতাংশের বেশি কমেছে। তবে খাতটিতে বিপুল সম্ভাবনাও দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার কারণে হঠাৎ করে অনেক বেশি ডিজিটাল বায়ার তৈরি হলেও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কমতে শুরু করেছে। কেউ এখন অপ্রয়োজনীয় কিছু কিনতে চাইছে না। স্বভাবতই বিলাসবহুল পণ্য, ইলেকট্রনিক পণ্য, ফ্যাশন পণ্যসহ নন-গ্রোসারি আইটেমের ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে ক্রস বর্ডার ব্যবসা। এখন বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি-রফতানি পুরোপুরি বন্ধ। ফলে এসব ব্যবসায়ীর পণ্য কেনাবেচায় ভাটা পড়েছে। অন্য সব পণ্যের বেচাকেনা কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ ই-কমার্স সাইট এখন নিত্যপণ্যের ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। গ্রোসারি শপগুলোয় সক্ষমতার চেয়ে বেশি অর্ডার আসছে। কিন্তু এ বাড়তি চাহিদা সামাল দেয়ার মতো প্রস্তুতি তাদের অনেকেরই নেই। তবে সমস্যাগুলোকে যথাযথ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সম্ভাবনায় রূপ দেয়া সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাপ্লাই চেইনে একটা বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতিতে দেশের সব মানুষের মধ্যেই অনলাইনে কেনাকাটার চাহিদা তৈরি হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সেবাটি বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..