প্রকাশিত: শনিবার, ১৮মে ২০১৯।৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। ১২ রমজান ১৪৪০ হিজরি।
বিক্রমপুর খবর: অনলাইন ডেস্ক: মহান আল্লাহ তায়াল ব্যবসাকে হালাল জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম করেছেন।
মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য দুনিয়ায় কোনো না কোনো পেশা বেছে নিতে হয়। ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেঁছে নিলে ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী কিছু রীতি নীতি মেনে চলা প্রয়োজন। পবিত্র কোরানে এসেছে,‘আল্লাহ তায়ালা বেচাকেনাকে বৈধ ও সুদকে অবৈধ করেছেন।’(সূরা: আল-বাকারা,আয়াত: ২৭৫)
মহানবী হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ব্যবসায় উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা ব্যবসা বানিজ্য কর। কারণ তাতেই নিহিত রয়েছে নয়-দশমাংশ জীবিকা’
তবে সে বেচাকেনার মুনাফা হতে হবে হালাল ও সৎ পন্থায়। অন্যায়ভাবে কোনো দ্রব্যের বাড়তি দাম রাখা, পরিমাপে কম দেয়া, হালাল পণ্যের সঙ্গে হারাম পণ্য মিশিয়ে বিক্রি করা সম্পূর্ণ হারাম। মহানবী (সা.) ব্যবসাতে কি নিয়ম নীতি অবলম্বন করতে হবে তা বলেছেন। এ লেখায় সে বিষয়গুলো হতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো।
পণ্য মজুদে মূল্যবৃদ্ধি হারাম:
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করে বিভিন্ন সময়ে দাম বৃদ্ধি করার অসাধু প্রক্রিয়া চালায়। যা ইসলামী শরীয়তে হারাম। মহান আল্লাহ তায়ালা ব্যবসা হালাল করেছে। তবে ব্যবসা করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। সেই পদ্ধতি হতে হবে ন্যায়সম্মত। কোনো মাল মজুদ রেখে যেখানে সেখানে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করা গর্হিত কাজ। মহানবী (সা.) বলেছেন,‘জনগণের জীবিকা সংকীর্ণ করে যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে, সে বড় অপরাধী। আর জেনে রাখো,সে গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।’(মুসলিম: ১৬০৫)
আমাদের দেশে দেখা যায় রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের কারণে। মজুদ করার কারণে যদি সাধারণ মানুষের সমস্যা হয় এবং মূল্যবৃদ্ধি তথা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য মজুদ করা হারাম। ইসলাম এই ধরনের ব্যবসায়ী নীতি সমর্থন করে না। মহানবী (সা.) মজুদ সম্পর্কে আরো বলেছেন, ‘যে লোক ৪০ দিন খাদ্যশস্য মজুদ করে রাখল, সে আল্লাহ থেকে নি:সম্পর্ক হয়ে গেল এবং আল্লাহও নি:সম্পর্ক হয়ে গেলেন তার থেকে।’
খুব প্রয়োজনে খাদ্য দ্রব্য অবশ্যই মজুদ করা যাবে। মশলা,জিরা,মধু,পশু-পাখির খাদ্য সংরক্ষিত করে মজুদ রাখা যাবে।
ভেজাল মিশ্রিত করে পণ্য বিক্রি করা হারাম:
খাদ্যে অথবা যে কোনো পণ্যে ভেজাল মিশ্রিত করে ক্রেতার কাছে বিক্রয় করা হারাম। খাবারে ভেজাল দিলে সাধারণের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভেজাল দেয়াসহ সকল অসাধু ব্যবসায়ীর কিয়ামতের ময়দানে পরিণতির ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘কিয়ামতের দিন সব ব্যবসায়ীকে অপরাধী হিসেবে আল্লাহর সামনে উপস্থিত করা হবে, তবে যারা পরহেজগার ও সৎ তারা ব্যতীত।’ (মিশকাত)
ইসলামী এই নীতি অনুসরণ না করার দরুন এখন যেকোনো পণ্যের ভেজাল বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতা পণ্যে কেনার সময় দুশ্চিন্তায় থাকে সে ঠকছে কি না! অথচ,বিক্রেতাকেই সৎ পথে চলার নীতি ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে।
খাবার বা পণ্যে ভেজাল দেয়া ছাড়াও যেকোনো হারাম পণ্য,খাবার বিক্রি করা গুনাহর কাজ। মৃত মুরগি, গরুর গোশত,নষ্ট ডিম,পচা-বাসী খাবার,ফরমালিন মিশ্রিত মাছ,শাক-সবজি,নাপাক খাদ্য পানীয়, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও খাবার,অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি খাবার,ক্ষতিকারক উপকরণ দিয়ে তৈরি খাদ্য,দুধের সঙ্গে পানি মিশ্রণ করে বিক্রি করা হারাম।
পণ্য বিক্রির ব্যাপারে ভুল তথ্য দেয়া হারাম:
বিক্রেতা পণ্য বিক্রির ব্যাপারে কোনো মিথ্যা তথ্য ক্রেতাকে উপস্থাপন করতে পারবে না। ভুল তথ্য উপস্থাপনে ক্রেতার ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানহীন পণ্য সুন্দর মোড়কে উপস্হাপন করা, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করা, অপেক্ষাকৃত মানহীন পণ্য ভালো মানের বলে চালিয়ে দেয়া যাবে না। ব্যবসার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সততা দেখাতে হবে। সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহর তরফ হতে পুরুস্কার। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,‘সত্যবাদী আমানতদার ও বিশ্বাসী ব্যবসায়ী ব্যক্তি কিয়ামতের দিনে নবীগণ সিদ্দিকগণ এবং শহীদগণের দলে থাকবেন’(তিরমিজী শরীফ)
পরিমাপে কম দেয়া হারাম:
ক্রেতাদের মাপে কম দেয়া হারাম। বিক্রেতা মনে করে সে মাপে কম দিয়ে জিতে গেছে। আসলে মাপে কম দেয়া ব্যবসায়ীর লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয় এবং এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ককোরানে ইরশাদ করেছেন,‘মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকের নিকট হতে মেপে লওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাদের জন্য মাপে বা ওজন করে দেয়,তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করেনা যে, তারা পুনরুত্থিত হবে মহা দিবসে (সূরা: মুতাফফিফিন,আয়াত: ১-৫)
মহান আল্লাহ তায়ালা মাপে সঠিক ওজন দেয়ার জন্য কঠোর নির্দেশ দেন। সূরা বনি ইসরাইলে মহান আল্লাহ আরো বলেন,‘মেপে দিবার সময় পূর্ণভাবে দিবে এবং ওজন করবে সঠিক দাড়িপাল্লায়,ইহাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট’(সূরা: বনি ইসরাইল: আয়াত-৩৫)
কাজেই মাপে কম দেয়া কোনো মুসলমানের পক্ষ সম্ভব না। উপার্জনের পদ্ধতি ও পন্থা অবশ্যই বৈধ হতে হবে। জুলুম করলে তার জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষনা রয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা ব্যবসাকে করেছেন হালাল, আর সুদকে করেছেন হারাম। হালাল ও সৎ পন্থায় জীবিকা নির্বাহের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ফরজ আদায়ের পর হালাল পন্থায় উপার্জনও ফরজ।’
যারা হারাম উপার্জন করে,তাদের দোয়া ও ইবাদত মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।