প্রকাশিত : শুক্রবার,৫ জুন ২০২০ ইং ।। ২২ই জ্যৈস্ঠ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ।। বিক্রমপুর খবর : অফিস ডেস্ক :
রহমান মাস্টার ও মোমেনা খাতুনের প্রথম কন্যা সন্তান লক্ষ্মী! দুধে আলতায় রং। সেই ছোট বেলাতেই পড়া শোনায় বুদ্ধিতে আচরণে সবার চেয়ে আলাদা।নাদুস নুদুস ছোট্ট মেয়েয়েটা। পরীর মতো। সে জন্যই নাম রাখলো পরীবানু। হঠাৎ পরীর মতো মেয়েটি পলিওতে আক্রান্ত হলো। সুস্হ হলো বটে, কিন্তু পরীর একটা ডানা অর্থাৎ একটা পা ক্ষতিগ্রস্ত হলো। একটু ছোট হয়ে যাওয়ায় টেনে টেনে হাঁটতে হতো। দেখতে দেখতে বডো্ হয়ে যাচ্ছে। হাই স্কুল কয়েক কিলোমিটার দূরে। এতদূরে ওঁর যাওয়া কষ্টকর। বাবা ভাবলেন পড়াশোনার প্রতি যার এত আগ্রহ মেধাবী সেই মেয়েটিকে রেসিডেন্টশিয়াল স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবেন।
খোঁজ খবর নিয়ে একরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারতেশ্বরী হোমস-এ ভর্তি করিয়ে দেবেন। কিন্তু ১৯৫৪ এর যুক্ত ফ্রন্টের নির্বাচন এবং নির্বাচনের পর ৯২-(ক) ধারায় রহমান মাস্টার গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় এই স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হয়নি। জেল থেকে বেরিয়ে পরিস্হিতি বদলে যায়। চরম আর্থিক সংকট। সংসার চালানো দায়। আরও অনুষঙ্গ রহমান মাস্টারকে পথভ্রান্ত করে। মা চাইলেন লক্ষ্মীকে বিয়ে দিতে। কলমার মোহাম্মদ মুছার সাথে বিয়ে হয়ে গেল।
দরিদ্র ও সাধারণ একটা একান্নবর্তী পরিবারের সুখে দুখে সংগ্রামে ৬৫ বছরের যৌথজীবন। লক্ষ্মী আসলেই লক্ষ্মী। পরিবারটিকে টেনে উঠিয়েছেন শিক্ষা ও সংস্কৃতির সোপানে। মুছা ও লক্ষ্মীর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে । সবাই মোটামুটি গ্রাজুয়েট। একজন ছাড়া সবাই শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। নাতি নাতনী, সবগুলো অত্যন্ত মেধাবী। জীবনের সায়াহ্নে লক্ষ্মী পা ভেঙে অচল হয়ে পডে্ছিলেন। বড্ দি আমার কাছে একজন বিদুষী। পড়ার ও জ্ঞান তৃষ্ণা তার আশৈশব নেশার মতো। বইয়ের পোকা ছিলেন। তিনি সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের একজন অনন্য পাঠক ছিলেন। আমরা সবাই তার বইয়ের যোগান দিতাম। কয়েক হাজার গল্প উপন্যাস তিনি পাঠ করেছেন। বড্ দি ছিলেন অসাধারণ সাহিত্য সমালোচক। এই পাঠ্যাভ্যাস তার দৃষ্টিকে প্রসারিত করেছে। আধুনিক ও বিজ্ঞান মনস্ক একজন আদর্শ মা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মায়াবতী দায়িত্বশীল অভিভাবক। মৃত্যুর দুদিন আগেও সবার খবর নিয়েছেন। আমি মা-এর পরই বড্ দিকে স্হান দিয়েছিলাম। আমি আমরা একজন বিদুষী অভিভাবককে হারালাম।
সূত্রঃ ড. নূহ-উল-আলম লেনিন এর ফেইজবুক থেকে।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..