প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার,২১ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
বিক্রমপুর খবর:অনলাইন ডেস্ক: ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। জাতির জীবনে অবিস্মরণীয় ও চিরভাস্বর একদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর জব্বাররা। তাদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী মায়ের বাংলা ভাষা।
কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে বাঙালি জাতি। সবার কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে একুশের অমর শোকসঙ্গীত- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি…।’
১৯৪৭ সালে ভারতের সাথে দেশ ভাগের পর ভাষা, সংস্কৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও শুধু মাত্র ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান দু’টি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও সিভিল সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও গুরত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রীয় পদে তাদের আধিপত্য বেশি ছিল। ক্রমে তারা নিজেদের শাসনকর্তা ও বাঙালিদের প্রজা ভাবতে শুরু করে।
নবগঠিত রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তারা উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করতে থাকে। এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে ঢাকায় ‘তমদ্দুন মজলিশের’ সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে এক প্রতিবাদ সভা ও শোভাযাত্রা বের করা হয়। সভায় বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করা হয়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৭ এর ডিসেম্বর মাসে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়।
১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে পুনরায় মিছিল বের করলে সেখান থেকে শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী গোলাম মাহাবুব, অলি আহাদ, শওকত আলী, সামসুল হক প্রমুখ গ্রেফতার হন।
২৭ জানুয়ারি ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের নব নিযুক্ত গর্ভনর জেনারেল খাজা নাজিম উদ্দিন ঢাকায় এসে পুনরায় ঘোষণা দেন ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’।
ঘোষণা শোনার পরই প্রতিবাদে জ্বলে উঠে সারা বাংলা। ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে হরতালের ডাক দেয়য়।
ওই দিন সকাল ৯টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হতে থাকে ছাত্র জনতা। ঐতিহাসিক আমতলা তখন লোকে লোকারণ্য। পাকিস্তান সরকার ওই দিন ঢাকায় ১৪৪ ধারা ঘোষণা করেন। এক সময় সমবেত ছাত্র জনতা গাজীউল হকের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
মিছিল যখন ঢাকা মেডিকেলের কাছাকাছি আসে, তখন শুরু হয় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলোগুলি। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকত। বুলেটের আঘাতে রফিকের মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে জব্বার ও বরকত ওইদিন রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বাংলা ভাষা। সেই থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনোস্কোতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সাল থেকে সারাবিশ্ব এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু করে।