প্রকাশিত: শনিবার ০১ জুন ২০১৯। ১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। ২৬ রমজান ১৪৪০ হিজরি।
বিক্রমপুর খবর:অনলাইন ডেস্ক : হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল ক্বদর আজ শনিবার দিবাগত রাত। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে আজ শনিবার (১ জুন) দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর পালিত হবে।
এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ শনিবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে রোববার সরকারি ছুটি।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে শবে কদরের রাত হাজার রাতের চেয়ে পুণ্যময়। মহান আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, ‘হাজার রাতের চেয়েও উত্তম’পবিত্র শবে কদর সমগ্র মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকতময় ও পুণ্যময় রজনী। পবিত্র শবেকদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহ’র নৈকট্য ও রহমত লাভে ইবাদত বন্দেগী করবেন।
পবিত্র রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ শনিবার দিবাগত রাতে মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। এ রাতে মুসলমানগণ নফল নামাজ আদায়,পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত,জিকির-আসকার,দোয়া,মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে মহিমান্বিত রজনী পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনে হাজার মাসের চেয়েও বেশি ইবাদতের নেকী লাভের সুযোগ এনে দেয় এই রাত। এই মহিমান্বিত রজনী সকলের জন্য ক্ষমা, বরকত, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক মহান আল্লাহর দরবারে এ মোনাজাত করি।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে পবিত্র এই রজনীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি,শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।
তিনি বলেন,‘মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এ রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তাঁর অসীম রহমত,বরকত ও মাগফিরাত।’
এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল,ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন গতকাল শুক্রবার বলেন,‘১ জুন শনিবার দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র লাইলাতুল কদর পালিত হবে।’
তিনি বলেন,এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আগামীকাল শনিবার বাদ জোহর (বেলা দেড়টায়) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াজ পেশ করবেন মিরপুর বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব ড. মুফতি আবদুল মুকিত আযহারী।
জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদেই তারাবীর নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
শবে কদরের গুরুত্ব:
মুসলমানদের কাছে কদরের রাতের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআনের সুরা কদরে উল্লেখ আছে, হাজার মাস উপাসনায় যে পূন্য হয়, কদরের এক রাতের উপাসনা তার চেয়ে উত্তম। লাইলাতুল কদরের রাতে সৎ এবং ধার্মিক মুসলমানদের ওপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। লাইলাতুল কদরে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, নাজাত ও ক্ষমা পাওয়ার পরম সুযোগ লাভ করে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে ইসলামের মহানবী বলেন, যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তাঁর পূর্বেকৃত সব গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন। (বুখারি)
হাদীসের বর্ননা অনুযায়ী, লাইলাতুল কদরের রজনীতে যে বা যারা আল্লাহর আরাধনায় মুহ্যমান থাকবে, স্রষ্টা তাঁর ওপর থেকে দোজখের আগুন হারাম করে দেবেন। এ সম্পর্কিত হাদীসটি হল, সমস্ত রজনী আল্লাহ তাআলা লাইলাতুল কদর দ্বারাই সৌন্দর্য ও মোহনীয় করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা এ বরকতময় রজনীতে বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল ও ইবাদত-বন্দেগিতে রত থাকো। অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, তোমরা তোমাদের কবরকে আলোকিত পেতে চাইলে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর রাতে জেগে রাতব্যাপী ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দাও।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও ফজিলত সমূহ
মহিমান্বিত শব-ই-কদরের রাতকে মহান আল্লাহ তায়ালা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লুকিয়ে রেখেছেন। বান্দাহ বিনিদ্র রজনী কাটাবে, সবর করবে। আর এর মধ্যে খুঁজে পাবে সম্মানিত রাত, আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত।
এছাড়াও এ রাতে ফেরেশতার অদৃশ্য মোলাকাতে সিক্ত হবে ইবাদতকারীর হৃদয়। আপন রবের ভালোবাসায় হবে সে উদ্বেলিত। এ যেন দীর্ঘ বিরহের পর আপনজনকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ। তাই এ তাৎপর্যপূর্ণ রাতকে আমাদেরকে নামাজসহ বিভিন্ন ইবাদতের মধ্যে কাঁটিয়ে দিতে হবে।
নফল নামাজ:
ন্যূনতম আট রাকাত থেকে যতো সম্ভব পড়া যেতে পারে। এ জন্য সাধারণ সুন্নতের নিয়মে ‘দুই রাকাত নফল পড়ছি’এ নিয়তে নামাজ শুরু করে শেষ করতে হবে।
এ জন্য সূরা ফাতেহার সাথে আপনার জানা যেকোনো সূরা মিলিয়ে পড়লেই চলবে। কিছু ব্যতিক্রম নিয়মে সূরা ফাতেহার সঙ্গে ৩৩ বার সূরা আল কদর,৩৩ বার ইখলাস পড়লেও অসুবিধার কারণ নেই।
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে,হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি ৪ রাকয়াত নামাজ কদরের রাতে আদায় করবে এবং উক্ত নামাজের প্রতি রাকয়াতে সূরা ফাতিহার পরে ২১ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তিকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ করে দেবেন এবং বেহেশতের মধ্যে এক মনোমুগ্ধকর মহল তৈরি করে দেবেন।’
অপর এক হাদিসে বর্ণিত রয়েছে,হযরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন,‘যে ব্যক্তি কদরের রজনীতে ৪ রাকয়াত নামাজ আদায় করবে এবং উহার প্রতি রাকয়াতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ক্বদর ও সূরা ইখলাছ তিনবার করে পাঠ করবে, নামাজ শেষে সিজদায় গিয়ে নিম্নের দোয়াটি কিছু সময় পাঠ করে আল্লাহর দরবারে যাই প্রার্থনা করবে তিনি তাই কবুল করবেন এবং তার প্রতি অসংখ্য রহমত বর্ষিত করবেন।’
শবে কদরের দোয়া: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন,তুহিব্বুল আফওয়া,ফাফু আন্নি।’অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল,ক্ষমা করতে ভালোবাসেন,তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
জিকির ও দোয়া: হাদিসে যে দোয়া ও জিকিরের অধিক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো থেকে কয়েকটি নির্বাচিত করে অর্থ বুঝে বারবার পড়া যেতে পারে। ইস্তেগফার ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে।
কদরের নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া’লা রাকআ’তাই ছালাতি লাইলাতিল ক্বাদরি,মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
কুরআন অধ্যয়ন : এ রাতে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। মানবজাতির এই বিরাট নিয়ামতের কারণেই এ রাতের এত মর্যাদা ও ফজিলত। এই কুরআনকে ধারণ করলেই মানুষ সম্মানিত হবে, কাজেই এ রাতে অর্থ বুঝে কুরআন পড়তে হবে। বাছাইকৃত কিছু আয়াত এ রাতে মুখস্থও করা যেতে পারে। যাদের কুরআনের ওপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান রয়েছে তারা এ রাতে একটি দারসও প্রস্তুত করতে পারেন। কুরআনের এ গভীর অধ্যয়ন আমাদের সৌভগ্যের দ্বার খুলে দেবে।
জিকির ও দোয়া: হাদিসে যে দোয়া ও জিকিরের অধিক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো থেকে কয়েকটি নির্বাচিত করে অর্থ বুঝে বারবার পড়া যেতে পারে। ইস্তেগফার (মা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে।
এ রাতে নীরবে-নিভৃতে কিছুটা সময় আত্মসমালোচনা করুন দেখবেন আপনি সঠিক পথ খুঁজে পাবেন। আত্মসমালোচনা আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলে। আত্মসমালোচনা আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
আত্মসমালোচনা অর্থ আত্মবিচার। অর্থাৎ,আপনি নিজেই নিজের পর্যালোচনা করুন। জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোতে আল্লাহর কতগুলো হুকুম অমান্য করেছেন, আল্লাহর ফরজ ও ওয়াজিবগুলো কতটা পালন করেছেন এবং তা কতটা নিষ্ঠার সাথে করেছেন, ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় কী কী বড় গুনাহ আপনি করে ফেলেছেন-এগুলো ভাবুন, যা কিছু ভালো করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন,আর যা হয়নি তার জন্য আল্লাহর ভয় মনে পয়দা করুন, সত্যিকার তওবা করুন। এ রাতে নীরবে-নিভৃতে কিছুটা সময় এ আত্মসমালোচনা করুন দেখবেন আপনি সঠিক পথ খুঁজে পাবেন। আত্মসমালোচনা আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলবে। আত্মসমালোচনা আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
মহান আল্লাহ বলেন- ‘হে ঈমানদার লোকেরা, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামী কালের জন্য (পরকাল) সে কী প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা’(সূরা হাশর :১৮)।
বান্দাহ তার প্রভুর কাছে চায়। প্রভু এতে ভীষণ খুশি হন। মহান আল্লাহ তার বান্দাহর প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি তার কাছে না চাইলে অসস্তুষ্ট হন। ‘যে আল্লাহর কাছে কিছু চায় না আল্লাহ তার ওপর রাগ করেন’ (তিরমিজি)। ‘দোয়া ইবাদতের মূল’(আল হাদিস)। ‘যার জন্য দোয়ার দরজা খোলা তার জন্য রহমতের দরজাও খোলা রয়েছে’(তিরমিজি) ।
কদর হলো বছরের সর্বোত্তম রাত এবং এই রাতে পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়েছে। এই রাতে করা কোনো ভালো কাজ অন্য হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই হাজার মাসকে যদি ১২ দিয়ে ভাগ করা হয় তাহলে হিসাব দাঁড়ায় ৮৩ বছরের চেয়ে কিছু বেশি।
এই রাতে ইবাদত করার মর্যাদা সারাজীবন ইবাদত করার চেয়ে আরো অনেক বেশি। এটা এমন এক রাত যেখানে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত খোদার বিশেষ রহমত এবং শান্তি বর্ষিত হতে থাকে।
এই রাতে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এ কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুনাহ মাফের রাত হিসেবে শবে কদরের ফজিলত অতুলনীয়।
আজ ২৬ রমজান
আজ শনিবার দিবাগত রাত মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বদর। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এ রাতে ইবাদত, যিকির আযকার ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে উদযাপন করবে। এ রাত পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। লাইলাতুল অর্থ রাত আর ক্বদর অর্থ ভাগ্য। তাই লাইলাতুল ক্বদর অর্থ অতি উচ্চ, মর্যাদা ও মাহাত্ম্য। এ রাতকে ভাগ্য রজনীও বলা হয়। এ রাতে প্রত্যেক বান্দা গোটা বছর কখন কি খাবে বা কি করবে এসব বাজেট নির্ধারণ করা হয় বলে বলা হয়ে থাকে। তাই এ রাতে আল্লাহর ইবাদাত করে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনীয় বিষয় চেয়ে নিতে বলা হয়েছে। আর এ রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম হিসেবে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন। মূলত এ রাতে পবিত্র কুরআন মজিদ নাযিল হয়েছে বলেই এ রাতের এ মর্যাদা। আর এ রাতের কারনেই পবিত্র রমযান মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবু বকর আল আররাক বলেছেন,এ রাতের নাম ক্বদর রাত রাখা হয়েছে এ জন্য যে, যে লোক মূলত মান মর্যাদাসম্পন্ন নয় সে যদি এ রাতকে যথাযথভাবে গ্রহন করে ও জাগরণ করে আল্লাহর ইবাদত করে তাহলে সেও মর্যাদাবান ও সম্মানিত হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আল ক্বদর নামক একটি সূরা নাযিল করে বলেছেন,“নিশ্চয়ই আমি উহা (আল কুরআন) লাইলাতুল ক্বদরে নাযিল করেছি। তুমি কি জান লাইলাতুল ক্বদর কী? লাইলাতুল ক্বদর হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে ফেরেশতা রুহ (জিব্রাইল,মিকাইল,ইস্রাফিল,আজরাইল) আসে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে অসংখ্য,অগনিত রহমত নিয়ে। তারা শান্তি বিতরণ করে। ফজর পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে।
গোটা রমযানের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরকে ঘিরে। আর এই লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অনেক বর্ননা এসেছে। তবে কোথাও নির্দ্দিষ্টভাবে লাইলাতুল ক্বদরের রাত নির্ধারন করা হয়নি। হাদীসে বলা হয়েছে রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদর তালাস করার জন্য। বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ ও ফিকাহ শাস্ত্র বিশারদগন বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে ধারনা করেছেন যে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর রমযানের ২৭ তারিখ রাতেই হতে পারে। এ জন্য এ রাতকে লাইলাতুল ক্বদর হিসেবে মুসলমানগন পালন করে থাকে। আর সুনিদ্দিষ্টভাবে এ রাতকে চিহ্নিত করতে না পারায় এ রাতের মর্যাদা হাসিল করার জন্য মোমিন বান্দাহগন ইতিক্বাফে বসেন।
‘লাইলাতুল কদর’ আরবি শব্দ। শবে কদর হলো ‘লাইলাতুল কদর’-এর ফারসি পরিভাষা। ‘শব’অর্থ রাত আর আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থও রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত,মহিমান্বিত। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রজনী।
পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ‘শবে বরাত’ ও শবে বরাতের হাদিসগুলোর বর্ণনা নিয়ে হাদিস বিশেষজ্ঞ ও ফকিহদের মধ্যে যে সংশয় রয়েছে। লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে তার কোনোই অবকাশ নেই। পবিত্র কুরআন, নির্ভরযোগ্য হাদিস ও রাসূলুল্লাহ সা:-এর লাইলাতুল কদরের জন্য গৃহীত কর্মতৎপরতা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ সম্মানিত রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ কুরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম ও কল্যাণময়’ (সূরা আল কদর : ১-৩)।
এ রাতের আর একটি গুরুত্ব হলো- এ পবিত্র রাতেই কুরআন নাজিল হয়েছে। আর এই কুরআনের সাথেই মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। এ জন্য কদরের আর একটি অর্থ হলো ভাগ্য। তা হলে লাইলাতুল কদরের অর্থ হয় ভাগ্যরজনী। এ রাত হাজার মাস থেকে উত্তম ও কল্যাণময় (কুরআন)। এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে (কুরআন)। এ রাতে ফেরেশতা নাজিল হয় এবং আবেদ বান্দাহদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। ফজর পর্যন্ত এ রাতে পুরোপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার (কুরআন)। এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারি করা হয় (কুরাআন)। এ রাতে ইবাদতে মশগুল বান্দাহদের জন্য অবতরণকৃত ফেরেশতারা দোয়া করেন (হাদিস)।
‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান সহকারে ও আল্লাহর কাছ থেকে বড় শুভফল লাভের আশায় ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে,তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে’(বুখারি ও মুসলিম)। এ রাতের কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগ্য লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না (ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)।
‘কিয়ামুল লাইল’অর্থ হলো রাত্রি জাগরণ। মহান আল্লাহর জন্য আরামের ঘুম স্বেচ্ছায় হারাম করে রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর প্রিয় বান্দাহদের একটি গুণ। মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে- ‘তারা রাত্রি যাপন করে রবের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে’ (সূরা ফুরকান : ৬৪)।
‘তাদের পার্শ দেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকে (অর্থাৎ তারা শয্যা গ্রহণ করে না ; বরং এবাদতে মশগুল থাকে)। তারা গজবের ভয়ে এবং রহমতের আশায় তাদের রবকে ডাকতে থাকে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করে থাকে। কেউ জানে না। তাদের আমালের পুরস্কারস্বরূপ (আখিরাতে) তাদের জন্য কী জিনিস গোপনে রাখা হয়েছে’(সূরা সিজদা : ১৬-১৭)। সুত্র-সংগৃহীত