প্রকাশিত: রবিবার,০ ৬ জানুয়ারি ২০১৯ ::বিক্রমপুর খবর:: আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জাপানের উত্তর উপকূলে কিছুদিন আগে বিপন্ন প্রজাতির একটি মাছটি ধরা পড়ে। এক টুনা মাছের দাম পড়ল ৩১ লাখ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৬ কোটি টাকা। বিশালাকার টুনা মাছটি কিনলেন জাপানের এক ব্যবসায়ী। তোয়োসু নামক টোকিও’র একটি মাছের বাজারে নতুন বছরেই নিলামে উঠেছিল ২৭৮ কেজির মাছটি।
জাপানের ওই ব্যবসায়ীর নাম কিয়োশি কিমুরা। এর আগেও ২০১৩ সালে এরকমই একটি ‘কিং টুনা’কিনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন কিয়োশি। সে সময়ে তিনি প্রায় ১০ কোটি টাকা দিয়ে মাছটি কিনেছিলেন।
টোকিও’র সুকিজিতেই একটি রেস্তোরাঁ চালান ব্যবসায়ী কিয়োশি কিমুরা। নিলামের পর তিনি বললেন,এটাই সেরা টুনা। তবে আমি যে দামটা ভেবেছিলাম,তার থেকে এর দাম অনেক বেশি। যা হোক,আমাদের রেস্তোরাঁর কাস্টমাররা খুব ভালো একটা টুনা মাছ খেতে পারবেন।
তোয়োসুর আগে সুকিজিতেই হত মাছের নিলাম। আগুন,পরিবেশগত আরও নানান কারণে বাজারটি সরিয়ে তোয়োসুতে আনা হয়। সুকিজি বিশ্বের নামকরা মাছের বাজারগুলির একটি। ব্যস্ত এ মাছের বাজারকে ঘিরে রয়েছে একাধিক রেস্তোরাঁ। এলাকায় ঢুঁ মারলেই কানে আসবে মাছের দর কষাকষির আওয়াজ। সুকিজি এখন পর্যটকদেরও ঘুরতে যাওয়ার জায়গা হয়ে গেছে।
১৯৩৫ সাল থেকেই এই সুকিজিতে মাছের বাজারে টুনা মাছ নিলামে ওঠে। এক্কেবারে নামী সুশি রেস্তোরাঁর শেফ থেকে একদম ছাপোষা মৎস্য ব্যবসায়ী সবাই মাছ বিকিকিনি করেন এখানে। বিশেষ করে বছরের শুরুতে নিলাম হয় দেখার মতো। দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ জড়ো হন টুনা মাছ কিনতে।
ভোর হওয়ার আগেই রবারের বুট পরে বরফ ঢাকা টুনা মাছ পরখ করতে আসেন ব্যবসায়ীরা। ঘড়ির কাঁটায় ভোর ৫টা ১০ হলেই নিলাম শুরু হওয়ার ঘণ্টা বাজতে শুরু করে।
এই ব্লু ফিন টুনা মাছের ব্যবসা করে একটা বিরাট অংশের দিন গুজরান হয় জাপানে। জাপান, বিশেষত সুকিজির বাসিন্দারা টুনা মাছকে বলেন ‘কুরো মাগুরো’। তবে আজকাল জাপানেও এই টুনা মাছের অভাব। আর সেই কারণেই রেস্তোরাঁগুলিতে টুনা মাছকে বলা হয় ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’।
টুনা মাছের বিখ্যাত একটি পদ ‘ওটোরো’। মাছের পেটের অংশ দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু এ পদ। বিপুল দামে টোকিও’র রেস্তোরাঁগুলিতে বিক্রি হয় ‘ওটোরো’।
সুকিজির পাশাপাশি তোয়োসু বাজারেও শুরু হয়ে গেছে নিলাম। সে বাজারের মালিক ইয়োশিহিকো ওটাকি বললেন,নতুন বছরে টুনা মাছের নিলাম শুরু হয় এই তোয়োসু মার্কেট থেকেই। সুকিজির মতো এখানেও টুনা মাছের রমরমা বাজার। টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কৈকের কথায়,আমার মনে হয় এ বাজারও বহু মানুষের পছন্দ হবে।
সাধারণ দিনে এই টুনার দাম হতো ৬০ হাজার ডলার।কিন্তু,নববর্ষে বাজারে মর্যাদার একটা ব্যাপার ছিল।তাছাড়া এতে কিমুরার সুশি সাম্রাজ্যের ব্যাপক প্রচারণাও হয়েছে।
একই সঙ্গে টুনা মাছে বিরল একটি প্রজাতি হওয়ার কারণেও এর দাম বাড়ছে।সারা বিশ্বে ধরা নীল পাখনার টুনা মাছের বেশিরভাগই খায় জাপানের মানুষ।এখানে সুশির এই অত্যন্ত দামি এই উপাদানকে এর দামের কারণে ‘কালো হীরা’বলে অভিহিত করে সুশী-প্রেমীরা।
এই প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।কিমুরা নিজেই প্রচুর দাম দিয়ে মাছ কেনার যে রেকর্ড আগে গড়েছিলেন,এবার তার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে এই টুনা মাছটি কেনেন।এর আগে ২০১৩ সালে তিনি ১.৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে একটি মাছ কিনেছিলেন।
পাইকারী বিক্রেতা ও সুশি কোম্পানিগুলো নববর্ষে ভোর হওয়ারও আগে বাজারের সবচেয়ে ভালো মাছগুলো চড়া দামে কিনে থাকেন।নিলামের পর কিমুরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন,আমি একটা ভালো টুনা কিনেছি।