হাওরে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করা মেধাবী সেই ছাত্রীটি এখন ৩৮তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে

0
27
হাওরে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করা মেধাবী সেই ছাত্রীটি এখন ৩৮তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে

প্রকাশিত : শুক্রবার, ৩ জুলাই ২০২০ইং ।। ১৯ই আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক :  অভাবের সংসারে সচ্ছলতার জন্য হাওরে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে দিনে রাতে মিলিয়ে ৬টি টিউশনি করিয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। পাশাপাশি সংসারেও টাকা পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাও করেছেন সমান তালে। রসায়নে অনার্স-মাস্টার্সে ফার্স্টক্লাস পেয়েছেন। এর মধ্যে অনার্সে তিনি ফার্স্টক্লাস সেকেন্ড হয়েছেন। অথচ বইয়ের অভাবে একসময় তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল। অদম্য মেধাবী সেই ছাত্রীটি এখন ৩৮তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এই গল্পটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ডলি রানী সরকার।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানার দক্ষিণ বংশিকুন্ডা ইউনিয়নের ঘাসী গ্রামের কৃষক বাবার সন্তান ডলি রানী সরকার। নবম শ্রেণি পর্যন্ত বাবার সঙ্গে হাওরের মাঠে কৃষিকাজ করেছেন। বর্ষাকালে পড়াশোনা আর হেমন্তে বাবার সঙ্গে হাওরে ধান কাটা, ফসল লাগানোসহ সব ধরনের কাজে বাবাকে সহযোগিতা করেছেন ডলি। তবে ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী ছিলেন তিনি। শিক্ষাজীবনের শুরুতে ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানার ঘাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মেধাবী হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শুরু থেকেই স্বপ্ন দেখতেন প্রাথমিকে বৃত্তি পাবেন ডলি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় বৃত্তি পাওয়ার সুবিধার জন্য গাইডবই কিনে দিয়েছিলেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুকুল। ওই শিক্ষকের কথা রেখেছেন, প্রাথমিকে বৃত্তি পেয়েছেন ডলি। এরপর বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন ডলি। ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর তার বাবা অসুস্থ হন। এজন্য পরিবারে দুঃসময় চলে আসে তাদের। এ অবস্থায় সংসার চালানোর ভার পড়ে তার ওপর। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সেবা-যত্ন, জমিতে কৃষিকাজ ও কষ্ট করে সংসার চালানোর সব দায়িত্ব এসে পড়ে ডলির কাঁধে। হাওর অঞ্চলের সন্তান হওয়ায় বর্ষাকালে পানির সঙ্গে বসবাস। সেজন্য অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এ নিয়ে আক্ষেপ ছিল না তার। সবকিছু সামলে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় বই কিনতে পারেননি। এ অবস্থায় শিক্ষক ও সহপাঠীদের দেয়া পুরাতন বই নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এমন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পান ডলি।

জানা গেছে, মা-বাবার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবেন, এমনকি ডলিও স্বপ্ন দেখতেন শিক্ষক হবেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দা সরকারি কলেজে ভর্তি হন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অর্থের অভাবে টিউশনি শুরু করেন। সেই সঙ্গে লজিং মাস্টার হিসেবে মানুষের বাড়িতে থেকেছেন। কলেজের প্রথম বর্ষের শেষ দিকে ইভটিজিংয়ের শিকার হন ডলি। শিক্ষকদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেও বিচার পাননি তিনি। মনে কষ্ট নিয়ে প্রথমবর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি চলে যান। কিছুদিন পর পরিবারের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে চলে যান তিনি। তিন মাস পর দেশে চলে আসেন তারা। দেশে ফিরে কলেজের কোনো পরীক্ষায় অংশ নেননি। পরবর্তীতে শিক্ষকদের উৎসাহে কলেজের টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেন। সেখানে ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হন। ২০০৮ সালে অসুস্থ অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফলাফল করেন ডলি। পরে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চান্স পান ডলি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মেসে উঠেন। আর্থিক সঙ্কট থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি একসঙ্গে ৫-৬টা টিউশনি করেছেন। পরবর্তীতে মেস ছেড়ে দেন। এরপর পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিলেটে একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়ে অনার্স শেষ করেন। ২০১৬ সালে ফিজিক্যাল রসায়নে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে মাস্টার্সে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। এবার তিনি ৩৮তম বিসিএসে এএসপি হলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..  

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন