বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন নেই, তবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখতে আসছেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি। একইসঙ্গে চিকিত্সকরা জানিয়ে দিয়েছেন, এই ধরনের কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর অন্তত দু-তিন সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতেই হবে। তারপরই সৌরভ আবার কাজে ফিরতে পারবেন। নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনেই উৎকণ্ঠার খবরে উদ্বেল হয়ে উঠেছিল আপামর দেশবাসী! শনিবার জিম করতে গিয়ে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন বিসিসিআইয়ের বর্তমান সভাপতি তথা জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথমে পিঠে ব্যথা, তার পর সামান্য সময়ের জন্য জ্ঞান হারান মহারাজ। সময় নষ্ট না-করে ‘গোল্ডেন আওয়ার’-এ তাঁকে আনা হয় উডল্যান্ডস হাসপাতালে। পরীক্ষা করে বোঝা যায়, মৃদু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। সৌরভ আপাতত হাসপাতালের আইসিসিইউ-তে। তবে হাসপাতাল সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ‘দাদা’ অনেকটাই সঙ্কটমুক্ত। রাতেই তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শনিবারের প্রাথমিক পরিস্থিতির পর থেকে বেশ ভালো আছে সৌরভ। পর্যবেক্ষণে আছেন। তবে পুরোদস্তুর স্বাভাবিক। এদিন ব্রেকফাস্টে টোস্ট, কর্নফ্লেক্স আর ছানা খেয়েছেন। হাসপাতালে থেকে একঘেয়েমি বোধ করছেন মহারাজ। আর সেটা কাটাতে ডাক্তার, নার্সদের সঙ্গে টানা গল্প করছেন সকাল থেকে। বুলেটিনে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, সৌরভ এখন ভাল আছেন। রাতে ভাল ঘুমিয়েছেন মহারাজ। তবে, সোমবার সৌরভকে পরীক্ষা করতে আসছেন জন্য আসছেন স্বনামধন্য কার্ডিয়াক সার্জন দেবী শেঠি। তবে, হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, সৌরভের বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন নেই।
এদিন সৌরভকে দেখতে হাসপাতালে যান বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্য, বৈশালী ডালমিয়া, প্রদীপ ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাসরা। হাসপাতাল থেকে বেরোনোর মুখে বৈশালী জানান, জয় শাহের তরফে সৌরভকে দিল্লি বা মুম্বইতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সকলেই চাইছেন মহারাজের সুচিকিৎসা হোক। তবে, চিকিৎসকরাই শেষ কথা বলবেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখনই সৌরভকে বাইরে কোথাও নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ও প্রয়োজন-কোনওটাই নেই।
শনিবার দুপুরে সৌরভের অসুস্থ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দাদার আরোগ্য কামনায় বাংলা ও বাঙালির পাশাপাশি আসমুদ্র হিমাচলের বহু মানুষ আন্তরিক প্রার্থনা শুরু করেন। সৌরভের অসুস্থতার খবর পেয়েই উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেন। সন্ধ্যায় তাঁকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান মমতা। ‘দাদা’কে দেখে এসে ‘দিদি’ বলেন, ‘সৌরভ ভালো আছেন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও তিনি হাসিমুখে আমার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন। চিকিৎসকরা খুব ভালো কাজ করেছেন। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ দিন একাধিক বার কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে ফোন করে সৌরভের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। অমিত শাহ চিকিৎসার প্রয়োজনে সৌরভকে এইমস-এ ভর্তি হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। সৌরভের অসুস্থতা নিয়ে আমজনতার মনে যে প্রশ্ন ঘুরছে, সেটাই উসকে দিয়েছেন মমতা। হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এমন এক জন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ের এমন অসুখ হল কী করে? আমি শুনেছি, ওঁরা কখনও টেস্ট করান না। এই রকম একটা বাচ্চা ছেলের এমন অসুখ হল কী করে?’ সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়াকে উদ্দেশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘যে কোনও বড় টুর্নামেন্টের আগে খেলোয়াড়দের যেন শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়।’
সৌরভের অসুস্থতার খবর শুনে ক্রিকেট কোচ, বাইশ গজের প্রাক্তন ও বর্তমান সহকর্মীরা যেমন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন, তেমনই রাজনীতির ‘খেলোয়াড়রা’ও ছিলেন উৎকণ্ঠায়। হাসপাতালে সৌরভকে দেখতে পৌঁছন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসের পাশাপাশি বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। হাসপাতালে বিজেপির তরফে ছিলেন স্বপন দাশগুপ্ত, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় দু’বার উডল্যান্ডস হাসপাতালে ফোন করে কথা বলেন চিকিৎসকদের সঙ্গে। ফিরহাদ পরে বলেন, ‘আমার সঙ্গে সৌরভের কথাও হয়েছে। আমাকে ও জিজ্ঞেস করেছে, কেন কষ্ট করে এতদূর এলে? আমি ভালো আছি।’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, তিনি সৌরভের দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে ফোন করে খবর নিয়েছেন ও সৌরভের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
সৌরভের পরিবার সূত্রের খবর, শনিবার সকালে জিম করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিছু সময়ের জন্য অচৈতন্য হয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ে পরিবারের। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা দ্রুত ব্যবস্থা নেন। দুপুরের দিকে জানা যায়, মহারাজের ধমনীতে তিনটি ব্লকেজ রয়েছে। দ্রুত একটি ধমনীতে স্টেন্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। আরও দু’টি স্টেন্ট বসানো হবে কি না, সেই ব্যাপারে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা।