প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার,২২ অক্টোবর ২০২০ইং ।। ৬ই কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)।। ৪ঠা রবিউল আউয়াল,১৪৪২ হিজরী
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের ইতিহাসে যে’কজন সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক নিজেদের অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন সঙ্গীতের অনন্য অধ্যায় হিসেবে, সৃষ্টি করেছেন ভুরিভুরি কালজয়ী গান, তাদের একজন আলম খান। বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি তিনি। দীর্ঘ চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সঙ্গীতে অবদান রেখেছেন। অসাধারণ সব সুরের জন্য তাকে বলা হয় সুরের জাদুকর।
আজ বরেণ্য এই সঙ্গীতজ্ঞের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন সুরের জাদুকর আলম খান। ১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর তিনি ব্রিটিশ ভারতের সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
আলম খানের বাবা ছিলেন বড় কর্মকর্তা। তার মা নবাব সিরাজউদ্দৌলার দরবারের এক শিল্পীর বংশধর। বাবার চাকরির সুবাদে ছোট বেলাতেই কলকাতায় চলে যান আলম খান। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাবাসহ আবারও ফিরে আসেন স্বদেশে।
ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন আলম খান। এই স্কুলে থাকা অবস্থায়ই গানের প্রতি আগ্রহী হন তিনি। মায়ের উৎসাহে তিনি গানের চর্চা শুরু করেন। এরপর বাবাও সমর্থন দেন। তার ছোট ভাই ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি পপ শিল্পী আজম খান।
গানের ভুবনে আলম খানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে তিনি ‘তালাশ’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এরপর টানা সাত বছর পর্যন্ত তিনি সহকারী হিসেবেই কাজ করে যান।
১৯৭০ সালে আলম খান একক সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সিনেমার নাম ছিল ‘কাচ কাটা হীরে’। তবে শুরুতেই সাফল্যের দেখা পাননি তিনি। জনপ্রিয়তা পেতে আরও আট বছর অপেক্ষা করতে হয় তাকে।
সালটা ১৯৭৮। মুক্তি পেলো আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত সিনেমা ‘সারেং বৌ’। এই সিনেমায় আলম খান সৃষ্টি করলেন এক অবিস্মরণীয় গান। শিরোনাম ‘ও রে নীল দরিয়া’। দেশজুড়ে গানটি পেয়ে গেলো তুমুল জনপ্রিয়তা। সেই সঙ্গে কালের গণ্ডি পেরিয়ে গানটি হয়ে গেলো আস্ত এক ইতিহাস।
এরপর থেকে আলম খান একের পর কালজয়ী গান সৃষ্টি করে গেছেন। তার সুরে গান গেয়ে শ্রোতাদের আকাশসম ভালোবাসা অর্জন করেছেন বহু শিল্পী।
আলম খানের সুর করা জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালবাসা চায়’, ‘ভালবেসে গেলাম শুধু’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’, ‘আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী’, ‘জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প’, ‘মনে বড় আশা ছিল’, ‘সাথীরে যেও না কখনো দূরে’, ‘বেলি ফুলের মালা পরে’, ‘কাল তো ছিলাম ভাল’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া’, ‘তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটাইরে’ ইত্যাদি।
আলম খান তার ক্যারিয়ারে ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচবার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে, এবং একবার শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে। এছাড়া তিনি বাচসাস পুরস্কারও লাভ করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে আলম খান ১৯৭৬ সালে হাবিবুননেসা গুলবানুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গুলবানু একজন গীতিকার। আলম খানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গাওয়া ‘তুমি তো এখন আমারই কথা ভাবছো’ গানটির গীতিকার গুলবানু। তাদের দুই ছেলে আরমান খান ও আদনান খান দুজনেই সঙ্গীত পরিচালক এবং একমাত্র মেয়ে আনিকা খান।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’