প্রকাশিত : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(শরৎকাল)।। ২০জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : শুধু বাঙালি কেন, তাঁর গান সমস্ত সঙ্গীতপ্রিয় মানুষকে অসীম বন্ধনে জড়িয়েছে। শচীন দেববর্মণসহ ভারতের প্রায় সব বিখ্যাত সুরকারের সুরে গান গেয়েছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে ও পি নাইয়ার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ ও সুধীন দাশগুপ্ত অন্যতম। গীতা ঘোষ রায় চৌধুরী সঙ্গীতজগতে গীতা দত্ত নামে অধিক পরিচিত। যেসব গান শুনে সঙ্গীতানুরাগীরা আজও মুগ্ধ হন, যেসব গান এখনো শ্রোতাদের বিনোদিত ও নস্টালজিক করে।
বাংলা ভাষাভাষীরা নিজের অজান্তেই গুনগুন করে আপন মনে যেসব গান গেয়ে ওঠেন, সেই সব গান যাঁরা গেয়েছেন, তাঁদেরই একজন গীতা দত্ত। চলচ্চিত্রের অমলিন গান ‘তুমি যে আমার’তারই গাওয়া। ‘তুমি যে আমার’ ছাড়াও গীতা দত্তের গাওয়া আরও বেশ কিছু গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন।
আজ ২৩ নভেম্বর গুণী এই সঙ্গীতশিল্পীর ৯৮তম জন্মদিন। ১৯৩০ সালের এই দিনে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার এক ধনাঢ্য জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
গানের জগতে তিনি আসেন অদ্ভুতভাবে। ফরিদপুর থেকে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি বম্বে যান। সেখানে, নিজের বাড়িতে একদিন নিজের মনে গুনগুন করে সুর ভাঁজছিলেন বালিকা গীতা। সাধারণত সবাই যেমন করে। কাজ করতে করতে গান গাওয়া, সেটাই করছিল সেই বছর বারোর বালিকা। তখন মিউজিক ডিরেক্টর হনুমান প্রসাদ তাঁর গান শুনতে পান। গীতাকে তিনি নিজে ডেকে তালিম দেওয়ার প্রস্তাব দেন। গানের জগতে সেটাই প্রথম পদক্ষেপ।
গীতা দত্ত প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে ১৯৪৬ সালে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন। বাংলা ও হিন্দিতে সমান পারদর্শিতায় গান করেছেন। তিনি সব ধরনের গান করেছেন। তাঁর মধ্যে ভজন, কীর্তন, আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গান অন্যতম।
তাঁর উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় গান হচ্ছে- ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়’, ‘ওগো সুন্দর জানো নাকি’, ‘নিশিরাত বাঁকা চাঁদ’, ‘তুমি যে আমার’, ‘আমি শুনেছি তোমার গান’, ‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই’, ‘এই মায়াবী তিথি’, ‘যাদু ভরা ঐ বাঁশি’, ‘বাঁশি বুঝি সেই সুরে’, ‘শুধু একটুখানি চাওয়া’ ‘বাবুজি ধীরে চলনা’, ‘না যাও সইয়াঁ ছুড়াকে বইয়াঁ’, ‘যাতা কাঁহা হ্যায় দিওয়ানে’।
রোম্যান্টিক গানের জগতে অনেক গানই গেয়েছেন নন্দিত এই সুরের পাখি। তাঁর গান এখনও প্রেমের মাদকতায় ভরপুর। যে গানগুলো তিনি গেয়েছেন, সেগুলোকে বলা যায় এভারগ্রিন। সেযুগের মানুষ যেভাবে তাঁর গাওয়া গান গ্রহণ করেছিল, এযুগের মানুষও একইভাবেই তা গ্রহণ করছে। দিন দিন তাঁর গানের জনপ্রিয়তা যেন প্রস্ফুটিত হচ্ছে। সুরের ভুবনের তিনি যেন এক সোনালিকণ্ঠ।
সিনেমার গান রেকর্ড করতে গিয়ে গীতা দত্ত তখনকার রুপালী পর্দার নায়ক ও উঠতি পরিচালক গুরু দত্তের সান্নিধ্যে এসে হৃদয়ঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৯৫৩ সালের ২৩ মে দুজন বিয়ে করেন। কিন্তু তাঁদের দাম্পত্য জীবন দীর্ঘ হয়নি। গুরু দত্ত ১৯৫৭ সালে গৌরী ছবি পরিচালনা করতে গিয়ে ওয়াহিদা রেহমানের সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। গীতা দত্ত তা মেনে নিতে পারেননি। ফলে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এই বিবাহবিচ্ছেদের পর গীতা দত্ত মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন এবং কার্যত তাঁর ক্যারিয়ারের যবনিকা ঘটে।
অন্যদিকে, অতিরিক্ত মদ্যপান ও ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে ১৯৬৪ সালে গুরু দত্ত মৃত্যুবরণ (অনেকের ধারণা, এটি ছিল আত্মহত্যা) করেন। এ সময় গীতা দত্ত আরও ভেঙে পড়েন। একই সঙ্গে আর্থিক সমস্যায় পড়েন। এ সমস্যা কাটানোর জন্য তিনি আবার তাঁর গানের ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হন এবং নানাভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন।
এ সময় তিনি বধূ বরণ (১৯৬৭) নামের একটি ছবিতে অভিনয়ও করেন। গান করেন অনুভব (১৯৭১) ছবির জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আর তাঁর ক্যারিয়ারে ভালোভাবে ফিরতে পারেননি।
অতিরিক্ত মদ্যপান ক্রমাগত তাঁর স্বাস্থের অবনতি ঘটতে থাকে। ফলে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ২০ জুলাই মাত্র ৪১ বছর বয়সে হারানো সুরের এই শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন। তিনি পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেও তাঁর গান হারিয়ে যায়নি। বরং, হয়ে উঠছে আরো উজ্জ্বল।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor