প্রকাশিত : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ।।২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ(হেমন্তকাল)।।১১ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক :যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার ধীর আলী মিয়া’র ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। প্রয়াত এই গুণী সঙ্গীতজ্ঞর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই । তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
ধীর আলী মিয়া ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১জানুয়ারী, মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী থানার, বাশঁগাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম ওস্তাদ শের আলী মিয়া (এই উপমহাদেশের প্রথম বাংগালী মুসলমান যন্ত্রশিল্পী ছিলেন)। তাঁর চাচা ওস্তাদ যাদব আলী এবং ওস্তাদ সাদেক আলী এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত যন্ত্রশিল্পী ছিলেন। তাঁর ছোট ভাই মনসুর আলী ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক । তাঁর চাচাতো ভাই আলাউদ্দীন আলী বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একজন জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক । তাঁর দুই ছেলে আবু তাহের (প্রয়াত) ও আলী আকরাম শুভ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক-সুরকার ।
স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে তিনি কিছুদিন সোনারং উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগবশত পড়ালেখায় ইস্তফা দিয়ে ধীর আলী মিয়া, তাঁর চাচা প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ সাদেক আলীর কাছে শৈশবকাল থেকে বাদ্যযন্ত্র তালিম শুরু করেন। সুদীর্ঘদিন সংগীত সাধনা করে বাঁশী ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রে পারদর্শীতা অর্জন করেন।
তিনি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তদানীন্তন রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। সুরকার ও অকেষ্ট্রা পরিচালক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। লাহোরে অনুষ্ঠিত ‘অল পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স’ ভারতে অনুষ্ঠিত বংগ সংস্কৃতি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বুলবুল ললিতকলা এবং আর্টস কাউন্সিলের প্রশিক্ষণ কোর্সে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলার লোকসঙ্গীতে আধুনিক ধারার প্রবর্তকও বটে।
ধীর আলী মিয়া ‘ঢাকা অর্কেস্ট্রা’ নামে একটি অর্কেস্ট্রা দল গঠন করে বাংলা সঙ্গীতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
ধীর আলী মিয়া বাঁশি ছাড়াও, বেহালা, গিটার এবং ক্লারিওনেট বাদনেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তবে বংশীবাদক হিসেবেই তাঁর খ্যাতি সর্বাধিক।
হিজ মাস্টার্স ভয়েজ এবং ঢাকা গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে ধীর আলী মিয়ার সুরে ও সঙ্গীতপরিচালনায় অনেক গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। সেসবের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গীত প্রতিভার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশেবিদেশে ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে, তিনি ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে তিনি রাশিয়া এবং আফগানিস্তানও সফর করেন।
ধীর আলী মিয়া চলচ্চিত্রের গানের সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ তিনি সমর দাসের সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।
পরবর্তীতে তিনি- নাচঘর, উজালা, জোয়ার এলো, কাঞ্চনমালা, রহিম বাদশা ও রূপবান, দস্যুরানী, চম্পাকলি, শ্রীমতি ৪২০, কাঞ্চনমালা, রাজমুকুট, কাজলরেখা প্রভৃতি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
ধীর আলী মিয়ার সুর করা কালোত্তীর্ণ কয়েকটি গান- ফুল ছিঁড়ো না নিয়ো সুরভি…, কলশি কাঁখে ঘাটে যায় কোন্ রূপসী…, বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে কোন্ বঁধুয়া চলে যায়…,
খোকন সোনা রাগ করে না…, আমি বন্ধু প্রেমে হইলাম পাগল.., ঢাকা শহর দেখতে এসে ঘুরছি গোলকধাঁধায়…, প্রভৃতি।
তিনি রেডিও বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রের উপপ্রধান সংগীত প্রযোজক হিসেবে অবসরগ্রহন করেন ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ।
সংগীতে অনন্য অবদানের জন্য ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার তাঁকে ‘তমঘায়ে ইমতিয়াজ’ খেতাবে ভূষিত করেন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন ধীর আলী মিয়।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত পরিবারের সদস্য, প্রখ্যাত সুরকার-সঙ্গীতপরিচালক ধীর আলী মিয়। সঙ্গীতজগতে নিজেও ছিলেন স্বনামখ্যাত জনপ্রিয় সুরকার-সঙ্গীতপরিচালক। আধুনিক বাংলা গানে লোকসঙ্গীতের সুর সংযোজন করে তিনি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন।
বাংলাদেশের সঙ্গীতে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের রয়েছে অনন্য অবদান। তিনি নিজেও তাঁর কর্মের মাধ্যমে, বাংলাদেশের সঙ্গীতকে করেছেন সমৃদ্ধ।
কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ ধীর আলী মিয়া বাংলাদেশের সঙ্গীত ইতিহাসে চির অম্লান- চির স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।
(তথ্যসূত্র ও ছবি- ইন্টারনেট থেকে নেয়া)
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
email – bikrampurkhobor@gmail.com