প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট ২০২৩।। ২৪ শ্রাবণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)।। ২০ই মহর্রম, ১৪৪৫ হিজরি।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক :বাঙালি জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে, এদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশা ঘোচাতে যে মানুষটি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন; তিনিই হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির আশীর্বাদরূপে আবির্ভূত হয়ে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে বাঙালিদের মধ্যে জাগরণ তৈরির প্রবাদপুরুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার তাঁর দেশের মানুষের হাতে মৃত্যু বাঙালির ললাটে যেন কালিমা লেপন করে দেয়।
গোপালগঞ্জ থেকে উঠে আসা খোকা একসময় সমগ্র জাতির নেতৃত্ব দেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীতে যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, দীর্ঘ দুইশ বছরেরও অধিক সময় পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে সেই সূর্য আবার বাঙালি জাতির পুবের আকাশ রক্তিম করে তোলে।
ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বায়ান্নর মাতৃভাষার দাবি, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, সত্তরের নির্বাচন, অবশেষে মহান একাত্তরের বিজয় সবকিছুতেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু। ভাষা আন্দোলনে জেলখানায় থাকা অবস্থায় আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন শুরু করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন এই মহান নেতা। পাকিস্তান শাসনামলের অধিকাংশ সময়েই যার কেটেছে জেলখানার ছোট্ট খুপরিতে।
ছোটকাল থেকেই ন্যায়ের পক্ষে চলা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রণীত ১৯৬৬ সালের ‘ছয় দফা’কে আমাদের বাঁচার দাবি বলে উল্লেখ করায় বাঙালিরা এক বৃক্ষতলে অবস্থান করতে পেরেছিল। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ পঁয়ত্রিশ জনের বিরুদ্ধে করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামি তাকেই করা হয়। বাঙালি আপামর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্দোলনের ঝড় ওঠে বাংলায়। ওই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরা বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি প্রদান করে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এর পরের দিনই অজস্র মানুষের পক্ষ থেকে এই মহান নেতাকে বাঙালির বন্ধু স্বরূপ ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়। এত এত শ্রম, ত্যাগ সবই যে জাতির জন্য ছিল; ঠিক তারাই স্বাধীনতা প্রাপ্তির সাড়ে তিন বছরের মধ্যে জাতির পিতাসহ তাঁর পরিবারের চিহ্ন এই বাংলার বুক থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল।
কতিপয় সেনাবাহিনীর বিপদগামী সদস্যদের দ্বারা বুলেটের আঘাতে রক্ত রঞ্জিত হয় ধানমন্ডি বত্রিশসহ আরও দুটি বাড়ি। ধানমন্ডি বত্রিশ কোনো সাধারণ বাড়ি ছিল না। বাংলার মানুষের আশ্রয়ের শেষ স্থল ছিল ওই বাড়ি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে এই বাড়ি থেকেই তাকে পাকিস্তানিরা নিয়ে যায়। বাঙালি জাতির পিতা সরকারি বাসভবনে না গিয়ে, নিরাপত্তার বলয়ে নিজেকে না মুড়ে রেখে তাঁর দেশের জনগণের মধ্যে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কিন্তু, সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হলো কই! স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরে স্বপ্নের বাংলাদেশকে আর সাজানো হলো না তাঁর।
ইতিহাসের পাতায় নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ড বলে স্থান পাওয়া ওই ঘটনায় নিহত হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। যিনি বঙ্গবন্ধুকে সর্বদা তাঁর দুঃসময়ে ভেঙে না পড়ার অনুরোধ করতেন। তার কল্যাণেই আমরা আজ হাতে পেয়েছি জাতির পিতা কর্তৃক রচিত তাঁর জীবনের অজস্র জানা-অজানা কথামালা।
এ ছাড়াও সেদিন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরকে; যিনি একটি দাওয়াতে অংশগ্রহণ করতে ঢাকায় গিয়েছিলেন, জাতির পিতার জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল এবং তার নববিবাহিতা স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকু, দ্বিতীয় পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল এবং তার স্ত্রী পারভীন জামাল রোজী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার স্ত্রী বেগম আরজু মনি (এই দম্পতির বড় সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশ বর্তমানে যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এবং আরেক সন্তান শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন)।
এ ছাড়াও, দক্ষিণাঞ্চলের স্বনামধন্য নেতা, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুর রব সেরনিয়াবাত (বঙ্গবন্ধুর সেজ বোন আমেনা বেগমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়), তার কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, তার মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ, ভাইয়ের সন্তান শহীদ সেরনিয়াবাত, আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমুর খালাত ভাই আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং নাম না জানা আরও বেশ কয়েকজন।
উল্লেখ্য, ঘাতকরা ধানমন্ডির বাসায় আক্রমণ করার পরে বঙ্গবন্ধু সাহায্যের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফোন করলে তাঁর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ কাকডাকা ভোরে নিজ গাড়ি নিয়ে ছুটে আসেন। পথিমধ্যে, বেপরোয়া সৈনিকরা তাকে থামালে তিনি তার পরিচয় দেন। তার ড্রাইভার তাকে রেখে চলে যান, কিন্তু তিনি আসতে চাইলে তাকে সেখানেই গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ লাশ পরে নিয়ে আসা হয় ধানমন্ডির বাড়িতে।
সেদিন ভোররাতে ঘাতক দল বঙ্গবন্ধুর বাড়িসহ আর আত্মীয়দের বাড়িতে আক্রমণ করার মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া এই পরিবারের সবাইকে চিরতরে মুছে ফেলা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী) এবং ছোট কন্যা শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
সুত্র; সময়ের আলো
লেখক: মো. মোহাইমিনুল, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়