বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : হেমন্তের শেষের দিকে শীত আমেজ শুরু হয়ে গেছে। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে ঢাকার বাহিরে গ্রামের জনপদ। পুরো শীত মৌসুম শুরু হবে ক’দিন পর তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর উত্তম সময়। বছরের শেষে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থাকে, শীতকালীন ছুটি। আর এ সময়েই অফিস-আদালত কি ব্যবসা-বাণিজ্যেও পাওয়া যায় অবকাশের সুযোগ। বছর জুড়ে ইট-পাথরের শহরে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকে হাঁপিয়ে ওঠেন। তাই একটু অবসর উপভোগে তৈরী করেন অনেক পরিকল্পনা। ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসবার ইচ্ছায়, অনেকে ছুটে চলেন রাজধানী ছেড়ে দূর থেকে দূরান্তরে। কেউবা ছুটে যান দেশের বাইরে। কিন্তু এতে থাকে বড় অংকের বাজেট হাতে রাখার ধাক্কা। তাই ঢাকার একেবারে কাছে কোথাও থেকে যদি উপভোগ করা যায় অবসর আর বিনোদনের সব ছোঁয়া, তাহলে কি পছন্দসই হবে না? তেমনই সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ঢাকার খুব কাছে ঢাকা – মাওয়া মহাসড়কের পাশে পদ্মা সেতুর কাছে শ্রীনগর থেকে একটু পশ্চিম দিকে ভাগ্যকূলের সাবেক জমিদার যদুনাথ রায়ের বালাসুরের বাড়িতে ১২ বছর আগে গড়ে তোলা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর কমপ্লেক্স।
এই বিক্রমপুরের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। প্রাচীন পূর্ববঙ্গ বা সমতটের রাজধানী হিসেবে বিক্রমপুরের খ্যাতি কমপক্ষে ১২০০-১৫০০ বছরের। বিক্রমপুরের মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে হাজার বছর আগের নৌকা, কাঠের ভাস্কর্য, পাথরের ভাস্কর্য, টেরাকোটাসহ অসংখ্য অমূল্য প্রত্নবস্তু। এ ছাড়াও বিক্রমপুরের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক মনীষী। বিক্রমপুরের এইসব অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকজীবন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রত্ন নিদর্শনাদি সংরক্ষণ করা সর্বোপরি প্রদর্শনের জন্য ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’ মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাড়িখাল ইউনিয়ন এর উত্তর বালাসুর গ্রামের ভাগ্যকূলের সাবেক জমিদার যদুনাথ রায়ের ১৯৬৫ সাল থেকে পরিত্যক্ত বাড়িতে “বিক্রমপুর জাদুঘর” (Bikrampur Museum) প্রতিষ্ঠা করে। সরকারকে বছরে প্রায় দুই লাখের বেশি টাকা লিজের অর্থ পরিশোধ করে, এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বিদ্যুত বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলে প্রতিমাসে প্রায় এক লক্ষ টাকা পরিশোধ করে জাদুঘরটি পরিচালনা করে আসছে।
২০১০ সালের ২৯ মে জাদুঘর ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং ২০১৩ সালের ২৮ মে ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’-এর শুভ উদ্বোধন করা হয়।
প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা জুড়ে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছে জাদুঘর এবং এখানে দর্শনার্থীদের অবকাশ যাপনের জন্য একটি তিনতলা বিশিষ্ট “পান্হশালা” নামে একটি গেস্ট হাউজ।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঐতিহাসিক বেতিয়ারায় সম্মুখে যুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর ৯ জন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র মেধাবী শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা পাক হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলায় শহীদ হন। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তমধ্যে অত্র এলাকার কৃতি সন্তান ছাত্রনেতা নিজাম উদ্দিন আজাদ এবং সিরাজুম মুনির ছিলেন। তাঁহাদের দুজনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান নিবেদন করে “শহীদ মুনীর-আজাদ স্মৃতি পাঠাগার” স্থাপন করা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণে।
জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা সামাজিক সংগঠন “আমরা আলোর পথযাত্রী” আলোকিত এবং দেশহিতব্রতে উজ্জীবিত মানুষ গড়ে তোলার বহুমুখী কর্মকাণ্ডে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন দুই যুগ পার করেছে।
ঘুরে আসতে পারেন বিক্রমপুর জাদুঘর:-
শত ব্যস্ততার শহরে একটু খোলামেলা জায়গায় দম ফেলার যেন ফুসরত নেই। কাজের ফাঁকে একটু ছুটি পেলেই তাই অনেকেই ছোটেন একটু বিনোদনের জন্য কিংবা ছুটির দিনে নিরিবিলি পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে, প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে রাজধানীর খুব কাছেই বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস ওয়েতে (ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে) মাত্র ৫০ মিনিটে পৌঁছে যাবেন ভাগ্যকূল জমিদার বাড়ি “বিক্রমপুর জাদুঘর”। বালাসুর চৌরাস্তা থেকে ডানে ঢুকে যাবেন বিলের ধারে প্যারিস শহর জমিদার যদুনাথ রায়ের পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছে তিন তলা বিশিষ্ট এই “বিক্রমপুর জাদুঘর” এবং একই প্রাঙ্গণে তিন তলা বিশিষ্ট একটি ‘গেস্ট হাউস’।
তিনতলা ভবনের এ জাদুঘরে প্রবেশ করতেই দু’পাশে দুটি বড় মাটির পাতিল বা মটকা দেখতে পাবেন।
মোট ৭টি গ্যালারিতে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব নির্দশন।
নিচতলার বাম পাশের গ্যালারি যদুনাথ রায়ের নামে। এ গ্যালারিতে বিক্রমপুরের প্রাচীন মানচিত্র, বিক্রমপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া মাটিরপাত্র, পোড়া মাটির খেলনাসহ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন আছে।
নিচতলার ডান পাশের গ্যালারিটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে। এ গ্যালারিতে আছে ব্যাসাল্ট পাথরের বাটি, গামলা, পাথরের থালা, পোড়া মাটির ইট, টালি ইত্যাদি এছাড়া বিক্রমপুরের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার ছবিসহ বিভিন্ন নিদর্শন।
দ্বিতীয় তলার বাম পাশের মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ইতিহাস, দলিল, বই ও বিভিন্ন নমুনা। আর ডান পাশের গ্যালারিতে আছে বিক্রমপুরে জন্ম নেয়া মনীষীদের জীবন ও কর্মের বৃত্তান্ত। আরও আছে কাগজ আবিষ্কারের আগে প্রাচীন আমলে যে ভূর্জ গাছের বাকলে লেখা হতো সেই ভূর্জ গাছের বাকল।
তৃতীয় তলায় তালপাতায় লেখা পুঁথি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারী,কাঠের সিন্দুক, আদি আমলের মুদ্রা, তাঁতের চরকা, পোড়া মাটির মূর্তি, সিরামিকের থালাসহ প্রাচীন আমলে স্থানীয় মানুষদের ব্যবহার্য বিভিন্ন নিদর্শন।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া ১০০০ বছর আগের বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস
বিক্রমপুরের হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল এতদিন। তা এখন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রায় দেড় হাজার বছর আগের বৌদ্ধনগরী সহ বেশ কিছু প্রত্ননিদর্শন সন্ধান পায় মাটি খুঁড়ে বিভিন্ন পর্যায়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে উঠেছে তার প্রমান করে মাটির নিচে প্রাচীন নগরসভ্যতার আবিষ্কার। ২০১২ সালে রামপালের রঘুরামপুরে বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার, টঙ্গিবাড়ীর নাটেশ্বরে এক থেকে দেড় হাজার বছরের পুরোনো একটি বৌদ্ধনগরী আবিষ্কার করা হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রায় ৩ মিটার গভীর পর্যন্ত মানব বসতির চিহ্ন পাওয়া যায়।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া বিক্রমপুরের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ঐতিহ্যর নিদর্শন নিয়ে একটি গ্যালারীতে নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে। রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত কিছু মহামূল্যবান নির্দশন এই গ্যালারিতে স্হান পেয়েছে। এসব নির্দশন বিক্রমপুরের অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করছে।
প্রতিদিন শত শত দর্শক আসছে জাদুঘর পরির্দশন করতে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়ে থাকে।
বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের বাকি ৬ দিন জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত থাকে।
যা যা পাচ্ছেনঃ
• তিন তলা বিশিষ্ট এসি গেষ্ট হাউস
• কার পার্কিং সুবিধা
• অডিটোরিয়াম/ কনফারেন্স রুম
•শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বেডরুম,আধুনিক সুযোগ সম্বলিত ওয়াশরুম
• খেলার মাঠ
• ওপেন স্টেজ
• ২টি বিশাল বিশাল দিঘি
• ৪টি শান বাঁধানো পুকুর ঘাট
• জমিদারীর কাচারী ঘর
• ইউরোপিয়ানদের জন্য গেস্ট হাউস
• ভাগ্যকূলের জমিদার যদুনাথ রায়ের মুখিমুখি ২টি ভবন এবং অন্যান্য স্হাপনা
• তিন তলা বিশিষ্ট বিক্রমপুর জাদুঘর
• নৌকা জাদুঘর
• উন্মুক্ত জাদুঘর
• আরো দেখা যাবে কাচারি ঘর ও নানা প্রজাতির দূর্লভ সব ফুল ও ফলজ গাছ গাছালি।
** নিঃসন্দেহে ছবি তোলার জন্য একটি মনোরম পরিবেশ। আপনার ভ্যাকেশনের সময়গুলো ব্যস্ত শহর থেকে নিকট দূরেই সবুজের মাঝে বিক্রমপুর জাদুঘর ও গেষ্ট হাউস পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল সময় উপহার দেয়ার জন্যই আমাদের এই ছোট্ট প্রয়াস। মনোরম পরিবেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে আছে জমিদার বাড়িতে উপভোগ করার পর্যাপ্ত আয়োজন।
∆ আশেপাশের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান
* স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়ি
* অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ এর বাড়ি
* আড়িয়াল বিল
* ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি
এ জাদুঘর চত্বরের আয়তন সাড়ে ১৩ একর। ইট পাথরের এই শহরের যান্ত্রিকতা থেকে দূরে পালিয়ে সপরিবারে/ সবান্ধব কিছুটা সময় নিজেদের মতো প্রকৃতির কাছাকাছি উপভোগ করতে চাইলে আজই চলে আসুন।
এবার আসা যাক এই জমিদার বাড়ি নিয়ে কিছু কথা___
রাজা সীতানাথ রায়ের দুই পুত্র যদুনাথ রায় এবং প্রিয়নাথ রায়। চল্লিশের দশকে পদ্মার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আড়িয়ল বিলের কিনারে মনোরম ডুয়েল প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন। যদুনাথ রায়ের বর্তমানের বাড়িখাল ইউনিয়নের উত্তর বালাশুরে (সে সময় ভাগ্যকুল নামে পরিচিত ছিল) হুবহু একই ধরণের দুটি ত্রিতল ভবন নির্মাণ করেন। যার একটি ছিলো জমিদার যদুনাথ রায়ের। আর অন্যটি ছিলো তারই ছোট ভাই প্রিয়নাথ রায়ের। বিশালাকৃতির দিঘি খনন করেন, নাট মন্দির ও দূর্গামন্দির স্থাপন করেন।
তার তিন ছেলে যথাক্রমেঃ মেঘনাদ রায়, শরতচন্দ্র রায় ও সতীশচন্দ্র রায়।
এই বাড়িতে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলেন, ছিল সোয়ারেজ লাইন, বিশালাকৃতির দুটি দিঘি ছিল, বাড়ি জুড়ে ছিল বহুরকমের ফুল ও ফলের গাছ। খাপড়াওয়ার্ড খ্যাত লেখক আব্দুস শহীদ তার ‘কারাস্মৃতি’ গ্রন্থে ফুল বাগানের বর্ণনা দিয়েছেন। এখনো বাহারী নাগলিঙ্গম, বিশালাকৃতির কাঠবাদাম, বোম্বে লিচু, সুমিষ্ট আম গাছ রয়েছে। অশোক গাছটিতে এখনো ফুল ফুটলে মনে হয় ভোরে সূর্য উকি দিয়েছে। পুকুর ছিল মাছে পরিপূর্ণ, আলাদাভাবে কূপে ছিল রঙিন মাছ।
ড. হুমায়ুন আজাদ এই বাড়িটিকে নিয়ে তার ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না গ্রন্থে লিখেছেন- বিলের ধারে প্যারিস শহর।
প্রতিদিন শত শত দর্শক আসছে জাদুঘর পরির্দশন করতে। এটাই বিক্রমপুর জাদুঘরের সফলতা। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সফর, সামাজিক সংগঠন, কর্পোরেট অফিসের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়ে থাকে। একটি আঞ্চলিক জাদুঘর দেখতে দুর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন এখানে। অনেক বিদেশী পর্যটক আসেন এখানে। এছাড়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি বর্গ প্রায়ই এই আঞ্চলিক জাদুঘরটি পরিদর্শন করতে আসেন।
তন্মধ্যে দেশী বিদেশী অনেক দর্শনার্থী আছেন কিছু তুলে ধরেন কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল_ সম্মানিত মন্ত্রী মহোদয়, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত, এলজিইডি এর প্রধান প্রকৌশলী মোঃ খলিলুর রহমান সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, উপ-সচিব, বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট কবি ও লেখক বিভিন্ন সময়ে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন।
এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশিষ্ট কবি, লেখক, বাচিক শিল্পী এবং পর্যটক এসেছেন বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করতে। অনেকে শুধুমাত্র বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করার জন্য ভারত থেকে এসেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি দুই সাংবাদিক দম্পতি পল কনেট ও তার স্ত্রী এলেন কনেট এসেছিলেন বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শনে। মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারীতে তাদের ছবি (পেপার কাটিং) দেখে অভিভূত হন। এছাড়া এখানে এসেছেন জাপানিজ সাংবাদিক মিকহিও ম্যাৎসুই, বিশ্বব্যাংক এর দক্ষিণ এশিয়া অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞ নাটালিয়া স্থানকে, ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মিসেস সুজান ভাইস, এটি আমাদের জন্য পরম পাওয়া। তিনি বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণ সম্পূর্ণ ঘুরে ঘুরে দেখেন ভবনগুলোর সংস্কার সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন এবং পরামর্শ দেন। বিক্রমপুর জাদুঘর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে কিনা জানিনা কিন্তু তাদের খাতায় আমাদের নাম লিপিবদ্ধ হলো নিঃসন্দেহে এটি একটি বিক্রমপুরের মানুষের জন্য বিশাল প্রাপ্তি, আনন্দের সংবাদ বলে কিউরেটর জানান।
বিক্রমপুর জাদুঘর এর কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, প্রাচীন তৈজসপত্র, পাথর বা অন্যান্য ধাতু/চীনা মাটি ও মাটির নির্মিত থালা, বাসন, অতীত যুগের ব্যবহার্য সামগ্রী, কৃষি যন্ত্রপাতি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারি, পুঁথি-পত্র, বই তালপাতায় বা হাতে বানানো কাগজে হাতে লেখা প্রাচীন গ্রন্থ, নৌকা, মৃৎশিল্প, পোড়ামাটির নিদর্শন, মূর্তি, কয়েন, অলংকার, হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম, প্রাকৃতিক সম্পদ, ধাতব শিল্পকর্ম, পুতুল, বাদ্যযন্ত্র, পোশাক, নকশিকাঁথা, কাঠের শিল্পকর্ম,পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত বস্তুগুলো নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে (প্রদর্শিত হচ্ছে) মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি। এই মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারির জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার্য জামা-কাপড়, বই-পত্র অন্যান্য সামগ্রী দান করার আহ্বান করেন যাতে জাদুঘরটি আরো সমৃদ্ধ হয়।
তিনি আরো বলেন ‘সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় বিক্রমপুর জাদুঘর দেশের মধ্যে একটি উচ্চমানের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে উঠুক এটা আমাদের একান্ত কামনা। আমরা চাই আপনিও আমাদের প্রচেষ্টার সহযাত্রী হোন – সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। এই ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’-এ প্রত্ন ও প্রাচীন সামগ্রী দান করে আপনিও হতে পারেন জাদুঘর গড়ে তোলার গর্বিত অংশীদার।’
উল্লেখ্য যে আমরা প্রতিটি বস্তুর প্রাপ্তির পাকা রশিদ বা দানপত্রের কাগজ দিয়ে থাকি এবং প্রদর্শনীতে দাতার নাম, তাহার পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সংগ্রাহকের নাম ঠিকানাও থাকে। দর্শনার্থী দেখে যেন তৃপ্তি পায় আমরা তাই করি আপনার দান অক্ষয় থাকুক। তাই বলছি পুরাতন জিনিস অযত্নে অবহেলায় ফেলে না রেখে আমাদের খবর দিন আমরা গিয়ে নিয়ে আসবো বা সংগ্রহ করবো।
ইট পাথরের এই শহরের যান্ত্রিকতা থেকে দূরে পালিয়ে সপরিবারে/ সবান্ধব কিছুটা সময় নিজেদের মতো প্রকৃতির কাছাকাছি উপভোগ করতে চাইলে আজই চলে আসুন। যোগাযোগের জন্য কিউরেটর এর মোবাইল নং দেওয়া হলো ০১৭১১৩৬২৯১৩।