প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং।। ১৮ মাঘ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)।।২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৩ হিজরি।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : শিশুসাহিত্যিক ও প্রকাশক মোহাম্মদ নাসির আলী বিক্রমপুরের ধাইদা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিক্রমপুরের বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার একটি গ্রাম ও ইউনিয়নের নাম ধাইদা অতীতে বলা হত দাহদা। লোকমুখে উচ্চারণ হয় ধাইদা। এই ধাইদা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা ছিলেন মোহাম্মদ ইজ্জত আলী। তার এক পুত্র হায়দার আলী ব্যবসা উপলক্ষে গোয়ালন্দের রাজবাড়ী শহরে বাস করতেন। সেখানে তার একটি জুতার দোকান ছিলো। হায়দার আলীর স্ত্রীর নাম কসিমুন্নেসা। তাদের দুই মেয়েসহ এগারটি সন্তান ছিলো। কিন্তু পুত্র সন্তানদের দু’জন ছাড়া বাকিরা অকালে মৃত্যুবরণ করে। ১৯১০ সালের ১০ জানুয়ারি তাদের কোল জুড়ে আসে একটি পুত্রসন্তান। পুত্রের দিক থেকে তিনি তৃতীয়। বাবা-মা আদর করে নাম রাখলেন মোহাম্মদ নাসির আলী। জন্মের সময় তার গায়ের রং ছিলো খুব ফর্সা। এ জন্য বাবা-মা আদর করে ডাকতেন কফুর অর্থাৎ কর্পূর। জন্ম ধাইদায় হলেও নাসির আলীর শৈশব কেটেছে বাবার বাসস্থান রাজবাড়ী শহরে। তার শিক্ষাজীবনের শুরুও সেখানেই। তবে কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। সেখানে থেকে পড়াশোনা করতে থাকেন।
মোহাম্মদ নাসির আলী তেলিরবাগ কালীমোহন-দুর্গামোহন ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯২৬ সালে স্বর্নপদকসহ এন্ট্রান্স পাস করেন। জগন্নাথ কলেজ হতে ১৯২৮ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে আইএ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৩১ সালে বিকম পাস করেন। এরপর ১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে অনুবাদক হিসেবে যোগদান করেন।
পরে ১৯৪৬-৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার শিশুবিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকায় এসে নাসির আলী হাইকোর্টের চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালে তিনি দৈনিক আজাদের শিশু-কিশোর বিভাগে ‘মুকুলের মহফিল’ পরিচালনা করেন এবং ‘বাগবান’ ছদ্মনামে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ওই দায়িত্ব পালন করেন।
লেখালেখির পাশাপাশি রুচিশীল বই প্রকাশের প্রতিও নাসির আলীর প্রবল আগ্রহ ছিল। ১৯৪৯ সালে আইনুল হক খানের সঙ্গে যৌথভাবে ‘নওরোজ কিতাবিস্তান’ নামে প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তোলেন। যা এখনও পুস্তক প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি ১৯৬৯ সালে প্রকাশনা সম্পর্কে করাচি থেকে ইউনেস্কো ট্রেনিং গ্রহণ করেন। তিনি ভালো ছবি আঁকতে পারতেন। ফটোগ্রাফিতেও তার প্রশংসনীয় দক্ষতা ছিল।
শিশুতোষ বইয়ের লেখক হিসেবেই নাসির আলী বেশি পরিচিত। তবে তিনি অনেক শিক্ষামূলক গল্প, প্রবন্ধ ও জীবনী লিখেছেন। হাস্যরস সৃষ্টিতে তিনি যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন।তিনি সাধারনত ছোটদের জন্য লিখেছেন এবং সাহিত্যচর্চায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে। ছোটদের জন্য শিক্ষামূলক গল্প, প্রবন্ধ ও জীবনকথা রচনায় দক্ষতার পরিচয় প্রদান করেন।তার ৫১টি প্রকাশিত বইয়ের মাঝে সাজানো রয়েছে সারাজীবনের অমূল্যধন শিশু-কিশোর উপযোগী তার লেখাগুলো সেই মূল্যবান সৃষ্টিই চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে তাকে।
তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে-
- আমাদের কায়েদে আজম (১৯৪৮),
- মণিকণিকা (১৯৪৯),
- শাহী দিনের কাহিনী (১৯৪৯),
- ছোটদের ওমর ফারুক (১৯৫১),
- আকাশ যারা করলো জয় (১৯৫৭),
- আলী বাবা (১৯৫৮),
- টলস্টয়ের সেরা গল্প (১৯৬৩, ২য় সংস্করণ),
- ইতালীর জনক গ্যারিবল্ডি (১৯৬৩),
- বীরবলের খোশ গল্প (১৯৬৪),
- সাত পাঁচ গল্প (১৯৬৫),
- বোকা বকাই (১৯৬৬),
- যোগাযোগ (১৯৬৮),
- লেবু মামার সপ্তকাণ্ড (১৯৬৮),
- আলবার্ট আইনস্টাইন (১৯৭৬),
- মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা (১৯৭৬) ইত্যাদি।
শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নাসির আলী বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হন। তিনি ১৯৬৭ সালে শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে ইউনেস্কো এবং একই বছর ইউনাইটেড ব্যাংক অব পাকিস্তান পুরস্কার লাভ করেন। বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও ১৯৮৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাকে স্বর্ণপদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে।
বিক্রমপুরের কৃতিসন্তান মোহাম্মদ নাসির আলী ১৯৭৫ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’