প্রকাশিত:রবিবার,১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ::বিক্রমপুর খবর::
নিজস্ব প্রতিবেদক:মিজানুর রহমান ঝিলু: ফকির মো. আবদুল হামিদ। লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ ৩০ বছরের সভাপতি। হামিদ ফকির নামে উপজেলার আবালবৃদ্ধরমণীর কাছে তিনি সমধিক পরিচিত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মুজিববাহিনী গঠনে যার ছিল অনবদ্য অবদান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যার পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কাণ্ডারিরূপে আবির্ভূত হন হামিদ ফকির। ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকার গেন্ডারিয়ার কমিশনারও। যতটা না ব্যবসায়ী,তারচেয়ে বেশি ছিলেন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। এলাকার মানুষও তাঁকে ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়েছেন উজাড় করে। নিজ ও ভিন্ন দল-মতের মানুষের প্রতি তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। আর সে কারণেই তিনি পরিণত হয়েছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে। হামিদ ফকির ছিলেন ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের অভিভাবক। এমনকি মুন্সীগঞ্জ-২ আসন থেকে তিন তিনবারের নির্বাচিত এমপি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি ছিলেন হামিদ চাচা বলতে অজ্ঞান। তিনি সবক্ষেত্রে প্রবীণ এই অভিজ্ঞ চাচার পরামর্শ নিতেন। এমনকি বেশ কয়েক বছর ধরে ফকির সাহেব শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সম্মানার্থে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁকে সভাপতি হিসেবে রেখে দেন উপজেলা আওয়ামীলীগ। আর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যান ওসমান গণি তালুকদার।
হামিদ ফকির ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিক,মন্ত্রী ও সাবেক স্পিকার এম কোরবান আলীর ভাবশিষ্য। যে কারণে আশির দশকের মাঝামাঝি এম কোরবান আলী আওয়ামী লীগ ছেড়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে মন্ত্রী হলে হামিদ ফকিরও সে দলে ভিড়েন। পরে তিনি নব্বই দশকের প্রথমদিকে নিজের ঘরে ফিরে আসেন। আর এসময়টুকুই ছিল হামিদ ফকিরের সারাজীবনের চাঁদের গায়ে লেগে থাকার মতো কালো দাগ।
বাবা ইরশাদ আলী জমাজমি দেখাশোনা করতেন। তার ১১ সন্তানের মধ্যে হামিদ ফকির ছিলেন একমাত্র পুত্রসন্তান,বাকি ১০ জনই কন্যাসন্তান। উপজেলার একসময়কার দিঘলী বন্দরের অদূরে জন্ম হামিদ ফকিরের। একই এলাকায় ছিলেন বিখ্যাত একটি বংশের লোকজন। তাঁরাই অত্র এলাকার খবরদারি করেছেন দীর্ঘকাল। তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন বুদ্ধিমত্তা ও সততার মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি শোনালেন একটি ঘটনা। ব্যক্তির প্রশ্ন ছিল,আচ্ছা ফকির সাহেব,আপনি তো আপনার বাবার একমাত্র ছেলে,কিন্তু কিভাবে ওই নামকরা বংশের লোকদের সাথে টেক্কা দিলেন কিংবা জনপ্রিয় হলেন? হামিদ সাহেব এর জবাবে বলেছিলেন,দেখো আমাকে কেউ তেমন বিয়েশাদির অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিত না। ওই বংশের ছিল একচেটিয়া আধিপত্য। কিন্তু আমি দাওয়াত না পেলেও গরীব মানুষের অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে উপহার কিংবা টাকাপয়সা দিয়ে আসতাম। এতে মানুষজন বাড়িতে এসে দাওয়াত না দেওয়ায় লজ্জা পেত এবং দুঃখ প্রকাশ করত। আর এভাবেই আমি নানাভাবে মানুষের ভালোবাসা অর্জনের চেষ্টা করেছি।
সবকিছু ছেড়ে মন ভোলানো এই মানুষটি রবিবার দুপুরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। লৌহজংবাসী তাঁকে চিরদিন মনে রাখবে।