প্রকাশিত:শনিবার,২৪ আগস্ট ২০১৯ ইং ||৯ই ভাদ্র ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর:লৌহজং প্রতিনিধি: আজ লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া ইউপির ফুলকচি গ্রামের লোকালয়ে দুটি বাঘ দেখা গেছে। তাই শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় লৌহজংয়ের ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করেছেন। এই সঙ্গে গ্রামবাসীরা রাতে যেন একা চলফেরা না করে দলবদ্ধভাবে বের হন, সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে বন বিভাগকে তলব করা হয়েছে।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ কাবিরুল ইসলাম খান রাত সাড়ে ১১টায় জানান, গ্রামটির মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হচ্ছে- একা একা যাতে কেউ ঘর থেকে বের না হন। বাঘ থেকে সুরক্ষায় রাতে যাতে দলবদ্ধভাবে বের হন। তিনি জানান, গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সারা রাত পুলিশ টহল দেবে। এছাড়া রবিবার বন বিভাগের দায়িত্বশীলরা গ্রামটিতে আসবেন। তাদের অবগত করা হয়েছে। ইউএনও গ্রামবাসী ও বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে জানান, বাঘ দুটি হয়তো মেছো বাঘ হতে পারে। শনিবার সন্ধ্যার পরে লোকালয়ে আসলে গ্রামবাসীরা বাঘটিকে ধাওয়া দেয়। পরে গ্রামের জঙ্গলে রয়েছে বাঘ দুটি।
প্রকাশ থাকে যে, কয়েক দশক আগেও (পরিপ্রেক্ষিত ২০১০),বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ ছিল।পঞ্চাশের দশকেও বর্তমান মধুপুর এবং ঢাকার গাজীপুর এলাকায় এই বাঘ দেখা যেতো;মধুপুরে সর্বশেষ দেখা গেছে ১৯৬২ এবং গাজীপুরে ১৯৬৬খ্রিষ্টাব্দে।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাঘাবাড়ি, বাঘা, বাঘবেড়, বাঘাদিয়া, বাঘের টেক, বাঘঘোনা, টাইগার হিল, টাইগার পাস ইত্যাদি নানা নামের এলাকাই তার স্বাক্ষী৷ বহু সাহিত্যে সারা বাংলা জুড়েই বাঘের আনাগোনা দেখা গেছে তাই বাগধারাতেও উঠে এসেছে যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই নাকি সন্ধ্যা হয়! এইতো সেদিন, ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বাঘ বিবেচিত জতো জনদূর্ভোগ হিসেবে। তাই বাঘ মারলে মিলতো আর্থিক প্রণোদনা৷ বন বিভাগে চাকুরীই ছিলো শিকারী পদবিতে৷ বিখ্যাত পচাব্দী গাজীরাও ব্যক্তিগতভাবে বা বন বিভাগের হয়ে শখানেক বাঘ মেরেছেন মূলত নেশা আর আর্থিক প্রনোদনার কারণেই। আর রাজা-বাদশা-নবাব থেকে অধুনালিপ্ত জমিদারদের জন্য বাঘমারা ছিলো আভিজাত্যের প্রকাশ।
দেশজুড়ে জড়িয়ে থাকা সেইসব বাঘ মেরে, জঙ্গল কেটে কবেই শহর বানিয়ে ফেলেছি আমরা। এখন প্রচলিত মতানুসারে তারা শুধু সুন্দরবনেই টিকে আছে।
২০১৫ সালে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাঘ গণনার কার্যক্রম শুরু করে বন বিভাগ। তখনকার হিসাবে বাঘের ঘনত্ব ছিল প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ২ দশমিক ১৭টি। মোট বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি।
২০১৮ সালে বন বিভাগ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা আটটি বেড়ে এখন ১১৪টি বাঘ পাওয়া গেছে ।
বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীর সুন্দরতম প্রাণী৷ আরো গর্বের ব্যাপার যে এই বাঘের নামকরণ আমাদের নিজস্ব জনপদ বাংলার নামেই। প্রাকৃতিক বনভূমিতে বাঘের অস্তিত্ব একটি দেশের মর্যাদা বাড়িয়ে তুলে বহুগুনে। পৃথিবীতে মাত্র ১৩ টি দেশে বাঘ টিকে আছে। আমরা সেই গর্বিত ১৩ টি দেশের অন্যতম। আমার দৃঢ বিশ্বাস সুন্দরবনের বাইরেও বাঘ একেবারে হারিয়ে যায়নি। তারা আছে অবশ্যই। অপেক্ষা শুধু প্রামাণ্য দলিলের।
(ভালো লাগলে শেয়ার করুন)